স্পোর্টস ডেস্ক

১৫ জুলাই, ২০১৮ ১৩:৩৫

কার হাতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বের রাজত্ব?

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এল বিশ্বকাপের একবিংশ আসর। ৩২ দলের লড়াই দিয়ে শুরু হলেও শেষ অঙ্কে টিকে আছে দুটি দল। প্রস্তুত ফাইনালের মঞ্চ। যে মঞ্চে ফ্রান্স এর আগে দুইবার উঠলেও ক্রোয়েশিয়ার জন্য প্রথম পদার্পণ। স্বভাবতই মঞ্চটি তাই তাদের জন্য অনেক বড়। দুই ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া কিংবা ফ্রান্সের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে রাশিয়া বিশ্বকাপের। তার আগে সবার মনে এখন একটিই প্রশ্ন, ফ্রান্সের দ্বিতীয় নাকি ক্রোয়েশিয়ার প্রথম? কার হাতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বের রাজত্ব?

৬৩ ম্যাচের নাটকীয়তা ও রোমাঞ্চের পর এখন বাকি কেবল একটি ম্যাচ। যে ম্যাচটিতে চোখ ছিল ৩২টি দলের। কিন্তু মাসব্যাপী লড়াইয়ের পর দুটি দেশই শেষ পর্যন্ত ফাইনালের টিকিট পেয়েছে। হৃদয় ভেঙেছে বাকি ৩০টি দলের। ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের মতো দল বাছাই পর্বের বাধাই উতরাতে পারেনি। গ্রুপ পর্বেই থেমে গেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির মিশন। আর্জেন্টিনা-স্পেনের দৌড় শেষ দ্বিতীয় রাউন্ডে। ব্রাজিল-উরুগুয়ের মতো সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা শেষ আট থেকেই নিয়েছে বিদায়। সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়াম ও আরেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে কাঁদতে হয়েছে সেমিফাইনালে হেরে। সব দ্বৈরথ পেরিয়ে টিকে আছে কেবল ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া।

এর আগে আরো দুবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে নিজ দেশে ব্রাজিলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। কিন্তু ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপে ফাইনালে ইতালির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় জিনেদিন জিদানদের। এবার একদল তরুণ তুর্কিকে নিয়ে ফাইনালের মঞ্চে পৌঁছেছেন দিদিয়ের দেশম। যিনি আবার ’৯৮ সালের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক। তার সামনে আছে নতুন এক মাইলফলকের হাতছানিও। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে এর আগে দুজন বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। সে তালিকায় এবার মারিও জাগালো ও ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পাশে বসার সুযোগ দেশমের সামনে। তবে সে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আজ জিততেই হবে ফ্রান্সকে। নয়তো এক যুগ আগে বিশ্বকাপ ফাইনালের হারের স্মৃতিটা আরো দীর্ঘায়িত হবে ফরাসিদের।

বিশ্বকাপের আগে থেকেই ফেভারিটের তালিকায় উপরের দিকে ছিল ফ্রান্সের নাম। দলে একঝাঁক তারকার উপস্থিতির কারণেই এ দলটি আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল শুরু থেকে। অবশ্য বিশ্বকাপের মঞ্চে শুরুটা তেমন ভালো হয়নি ফ্রান্সের। প্রথম ম্যাচে কোনো রকমে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে তারা। পরের ম্যাচে কিলিয়ান এমবাপ্পের একমাত্র গোলে জয় পায় পেরুর বিপক্ষে। শেষ ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করেছিল ডেনমার্কের সঙ্গে। সে সময় ফ্রান্সের খেলার মান নিয়েও অনেক প্রশ্ন ওঠে। তবে ফ্রান্সকে আসল রূপে দেখা যায় দ্বিতীয় রাউন্ডে। আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারানোর পথে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখান এমবাপ্পে।

উরুগুয়ের চীনের প্রাচীরসম ডিফেন্স ভেঙে শেষ আটে ফ্রান্স জয় পায় ২-০ গোলে। শেষ চারে ফ্রান্সকে আটকাতে পারেনি সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়ামও। স্যামুয়েল উমতিতির একমাত্র গোলে নিশ্চিত হয় ‘ব্লুজ’দের বিশ্বকাপ ফাইনাল। তবে এখনো ফ্রান্সের পারফরম্যান্স সেভাবে দর্শকদের বিনোদিত করতে পারেনি। সেটি নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন দলের তারকা স্ট্রাইকার গ্রিজম্যানও। যেভাবেই হোক দুই বছর আগের ইউরো ব্যর্থতা ভুলে বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে মরিয়া এই অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ স্ট্রাইকার। নিজেদের দৃষ্টিকটু খেলা নিয়ে গ্রিজম্যান বলেন, ‘সেসব নিয়ে ভাবছি না। আমি আমার শার্টের ওপর বিশ্বকাপের তারকাটি দেখতে চাই। যদি সেই তারকাটি পাই, তবে আমরা কীভাবে খেলেছি সেটা নিয়ে আমি ভাবিত নই।’

একইভাবে দলের তারকা স্ট্রাইকার ও বিশ্বকাপের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা এমবাপ্পেও বলেছেন, তিনি বিশ্বকাপ শিরোপা জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চান। আরেক ফরাসি তারকা ব্লেইস মাতুইদি বলেন, ‘বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা শৈশব স্বপ্ন সত্যি করেছে। আমরা শিরোপার অনেক কাছে। আমরা সেটি ছুঁতে চাই।’

তবে ফ্রান্সকে নিশ্চয় ছেড়ে কথা বলবে না ক্রোয়েশিয়াও। ক্রোয়াটদের জন্য এ ম্যাচটি প্রতিশোধেরও। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এ ফ্রান্সের কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল তারা। পূর্বসূরিদের সেই অসমাপ্ত কাজটিই এখন সম্পন্ন করার সুযোগ লুকা মডরিচ-ইভান রাকিতিচদের সামনে। অথচ বিশ্বকাপের আগে ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে খেলবে এমন বাজি হয়তো খোদ ক্রোয়াটরাই ধরতে চাইত না। দলে বিশ্বমানের তারকার অভাব না থাকলেও বড় মঞ্চে অনেকদিন ধরেই সাফল্য নেই দলটির। তবে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে শুরুটা বেশ ভালোই করে তারা। এরপর সামনে পড়ে ফেভারিট আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির দলকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বলকান অঞ্চলের দলটি। শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ডকে হারায় ২-১ গোলে।

নকআউট পর্বে অবশ্য কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় ক্রোয়েশিয়াকে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্কের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে সুবাসিচ বীরত্বে জয় পায় জ্লাতকো দালিচের দল। স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেও ক্রোয়েশিয়াকে পড়তে হয় কঠিন পরীক্ষায়। ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে ৪-৩ গোলে জিতে সেমিফাইনালের টিকিট পায় ক্রোয়েশিয়া। আগের দুই ম্যাচের মতো সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও শুরুতে পিছিয়ে পড়ে তারা। এরপর অতিরিক্ত সময়ে ২-১ গোলে জিতে ইতিহাস গড়ে ফাইনালে ওঠে তারা। এখন সামনে কেবল ফরাসি বাধা। যেটি টপকাতে পারলে বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শিরোপা হাতে তুলতে পারবে তারা। তবে ক্রোয়েশিয়ার জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, ফ্রান্সের সঙ্গে পাঁচবারের দেখায় একটি ম্যাচও জিততে পারেনি তারা। প্রথম তিন ম্যাচের তিনটিতে হারলেও পরের দুটি ম্যাচ হয়েছে ড্র। তবে বিশ্বকাপ ফাইনালে এসব পরিসংখ্যান ভুলেই মাঠে নামবে ক্রোয়াটরা। যেখানে জয় ছাড়া আর কিছুই ভাবছেন না মডরিচ-রাকিতিচরা।

ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে দলের কোচ দালিচ বলেন, ‘এ রকম সুযোগ জীবনে একবারই আসে। এটা আমাদের জন্য কঠিন হবে কিন্তু আমি নিশ্চিত আমরা শক্তি ও প্রেরণা খুঁজে নিতে পারব।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত