ক্রীড়া প্রতিবেদক

০৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ২৩:২৭

রাত পোহালেই পর্দা উঠছে বিপিএলের

রাত পোহালেই রংপুর রাইডার্স আর চিটাগাং ভাইকিংসের ম্যাচ মধ্য দিয়ে পর্দা উঠছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ৬ষ্ঠ আসর। ৫ম আসরের মতো এবারও মাঠে থাকছে রংপুর রাইডার্স, ঢাকা ডাইনামাইটস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, চিটাগং ভাইকিংস, খুলনা টাইটানস, রাজশাহী কিংস এবং সিলেট সিক্সার্স।

গতবারের মতো এবারও দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলতে পারছে না বরিশাল বুলস। গত আসর অর্থাৎ ২০১৭ সালের আসরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) ব্যাংক গ্যারান্টি না দিতে পারায় শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েছিল বিপিএল থেকে। সেবারও বরিশালকে বাদ দিয়ে খেলা হয়েছিল ৭ দল নিয়ে। যদিও এবার ব্যাংক গ্যারান্টির কোন ঝামেলা নেই তাও পঞ্চম আসরের মতো ষষ্ঠ আসরেও তাদের বাদ দিয়েই শুরু হচ্ছে বিপিএল।

শনিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে লড়বে চিটাগং ভাইকিংস। অপর ম্যাচে সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে ঢাকা ডায়নামাইটসের প্রতিপক্ষ রাজশাহী কিংস।

ধারণা করা হচ্ছে এটাই হতে যাচ্ছে বিপিএলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আসর। বল পিচে গড়ানোর আগে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বলা কি ঠিক হলো? নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঠছে। তা উঠতেই পারে। তবে কিছু প্রাসঙ্গিক ও বাস্তবসম্মত ইস্যুই বলে দিচ্ছে বিপিএলের এবারের আসরটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে।

কারণ, প্রায় শুরু থেকে সর্বাধিক তারকার সমাবেশ ঘটতে যাচ্ছে এবার। ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারিন, এভিন লুইস আর পোলার্ডরা আছেন আগের মতই। এবার তাদের সাথে যুক্ত হতে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া তথা বিশ্ব ক্রিকেটের দুই বড় তারকা স্টিভেন স্মিথ আর ডেভিড ওয়ার্নার। এরই মধ্যে রাজধানীতে অবস্থান করছেন ওয়ার্নার এবং স্মিথ।

একই সাথে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের সব সময়ের অন্যতম সেরা উইলোবাজ এবি ডি ভিলিয়ার্সও প্রথমবার বিপিএল খেলতে আসছেন ঢাকায়। তাদের সাথে ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স হেলস আর ইয়ান বেলসহ আরও বেশ কিছু নামি-দামি তারকার দেখা মিলবে এবার।

বিপিএলে আগেও তারকার সমাবেশ ঘটেছে; কিন্তু শুরু থেকে এত বিপুল সংখ্যক বিশ্ব বরেণ্য ও নামি-দামি ক্রিকেটার আগে কখনো বিপিএল খেলতে আসেননি। এটা একটা নতুনত্ব এবং বড় তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য এবারের আসরের। সে সাথে প্রচারণায়ও আসছে নতুনত্ব। অভিনবত্ব।

আগের আসরগুলোতে ক্যামেরার কাজ ভাল ছিল না। সেই অপবাদ ঘোচাতে ব্যস্ত আয়োজকরা। এবার ২৬ থেকে ৩৬টি ক্যামেরা ব্যবহারের কথা শোনা যাচ্ছে। প্রথম পর্বে স্পাইডার ক্যামেরা না থাকলেও পরের পর্বেই স্পাইডার ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। এছাড়া মানববিহীন ‘ড্রোন’ থাকবে এবারের আসরে।

সবচেয়ে বড় কথা আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকবে। মানে রিভিউ সিস্টেমও আছে এবার। বলার অপেক্ষা রাখে না, আগে কখনোই রিভিউ সিস্টেম ছিল না বিপিএলে। সর্বাধিক তারকা, ক্যামেরা তথা প্রচার ব্যবস্থায় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং রিভিউ (ডিআরএস) সিস্টেম- সব মিলে নতুনের সমাহার।

কাজেই আয়োজকরা এখন পর্যন্ত কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন। তবে একটি বিষয় চোখে পড়ার মত। তাহলো, খোদ আয়োজক বিসিবি কর্তাদের নিঃস্পৃহতা। ঠিক নিষ্ক্রিয়তা বলা যাবে না। কারণ আয়োজকরা নিষ্ক্রিয় থাকলে এতবড় আয়োজন সম্ভব ছিল না; কিন্তু গত কদিন মানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিপিএল নিয়ে খোদ বোর্ডে যতটা সাড়া পড়ার কথা ততটা চোখে পড়েনি।

বড় বড় তারকার মেলা বসার কারণে এবার আগে থেকেই বিপিএল নিয়ে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া পড়ে গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা পর বেজেছে বিপিএল ডঙ্কা। গেইল, ওয়ার্নার, স্মিথ, ডি ভিলিয়ার্সদের নিয়ে সবাই ব্যতিব্যস্ত। একটা সাজ সাজ রব পড়ে গেছে চারিদিকে।

এদিকে এবারও দেশের তিন ভেন্যুতে হবে টি-টোয়েন্টির আসর। প্রথম পর্বে ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে খেলা। পরের ভাগে ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত খেলা হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ঢাকায় ফিরে আরেক দফা খেলার পর বিপিএল যাবে চট্টগ্রামে। সেখানে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২৫ জানিয়ারি থেকে ৩০ জানিয়ারি পর্যন্ত চলবে চট্টগ্রাম পর্বের খেলা।

এলিমিনেটর ও চূড়ান্ত রাউন্ডের খেলা ফের আসবে ঢাকায়।

প্রতিদিন দুটি করে খেলা হবে আগের আসরের মতই। প্রথম খেলা শুরু হবে দুপুর সাড়ে ১২টায়। পরেরটি শুরু হবে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। তবে শুক্রবারে দুই ম্যাচ শুরু হবে যথাক্রমে দুপুর ২টা ও সন্ধ্যা ৭টায়।

মাসব্যাপী এই আসরের ফাইনালের তারিখ ঠিক করা হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি। কোন কারণে ওইদিন খেলা না হলে পরদিন রিজার্ভ ডেতে হবে খেলা।

এক নজরে দলগুলোর খেলোয়াড় তালিকা:

রংপুর রাইডার্স: মাশরাফি বিন মুর্তজা, নাজমুল ইসলাম, মোহাম্মাদ মিঠুন, ক্রিস গেইল, অ্যালেক্স হেলস, এবি ডি ভিলিয়ার্স, শফিকুল ইসলাম, সোহাগ গাজী, ফরহাদ রেজা, মেহেদী মারুফ, রবি বোপারা, রিলি রুশো, নাহিদুল ইসলাম, নাদিফ চৌধুরী, আবুল হাসান ও বেনি হাওয়েল।

চিটাগং ভাইকিংস: মুশফিকুর রহিম, সানজামুল ইসলাম, সিকান্দার রাজা, লুক রঙ্কি, মোহাম্মাদ শাহজাদ, রবার্ট ফ্রাইলিক্স, মোসাদ্দেক হোসেন, আবু জাবেদ, খালেদ আহমেদ, নাঈম হাসান, ক্যামেরুন ডেলপোর্ট, দাসুন শনাকা, মোহাম্মাদ আশরাফুল, রবিউল হক, ইয়াসির আলী, নিহাদুজ্জামান, নাজিবুল্লাহ জাদরান ও শাদমান ইসলাম।

ঢাকা ডাইনামাইটস: সাকিব আল হাসান, সুনীল নারিন, কাইরন পোলার্ড, র‌্যাভন পাওয়েল, আন্দ্রে রাসেল, হজরতুল্লাহ যাযাই, রুবেল হোসেন, নুরুল হাসান, রনি তালুকদার, শুভাগত হোম, এন্ড্রু বার্চ, ইয়ান বেল, কাজী অনিক, আসিফ হাসান ও  নাইম শেখ।

রাজশাহী কিংস: মমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, জাকির হাসান, কায়েস আহমেদ, ক্রিস্টিনান জনকার, সৌম্য সরকার, ফজলে মাহমুদ, আরাফাত সানি, আলাউদ্দিন বাবু, ইসুরু উদানা, লরি ইভান্স, মার্শাল আয়ুব, কামরুল ইসলাম, রায়েনতেন ডয়েস্তা, সিকুজে প্রসন্ন, মোহাম্মাদ সামি ও মোহাম্মাদ হাফিজ।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মোহাম্মাদ সাইফুদ্দিন, শোয়েব মালিক, আসেলা গুনারত্নে, লিয়াম ডসন, আবু হায়দার রনি, এনামুল হক, জিয়াউর রহমান, শহিদ আফ্রিদি, থিসারা পেরেরা, মোশাররফ হোসেন, মোহাম্মাদ শহীদ, শামসুর রহমান, সঞ্জিত সাহা, এভিন লুইস, ওয়াকার সালামখেইল ও আমের ইয়ামিন।

সিলেট সিক্সার্স: নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, লিটন দাস, সোহেল তানভির, ডেভিড ওয়ার্নার, সন্দিপ লামিছানে, আরিফ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, তৌহিদ হৃদয়, ইমরান তাহির, মোহাম্মাদ ইরফার, নাবিল সামাদ, এবাদত হোসেন, অলক কাপালি, জাকের আলী, গুলবদ্দিন নাইব, অ্যান্দ্রে ফ্লেচার, মেহেদী হাসান রানা, প্যার্ট্রিক ব্রাউন ও নিকোলাস পুরান।

খুলনা টাইটানস: মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, দাউইদ মালান, আলি খান, আরিফুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, আল আমিন, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, জহির খান, শুভাশিষ রায়, জুনাইদ সিদ্দিকী, তানভির ইসলাম, মাহিদুল অঙ্কন, লাসিথ মালিঙ্গা, ইয়াসির শাহ ও ব্রেন্ডন টেলর।

বিপিএলের গত পাঁচ আসরের মধ্যে ঢাকা গ্লাডিয়েটরস দুবার এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, ঢাকা ডাইনামাইটস ও রংপুর রাইডার্স একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত