স্পোর্টস ডেস্ক

২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১০:১৬

সাকিব নিষিদ্ধের দুঃসংবাদ আসছে!

দেশসেরা ক্রিকেটার, ক্রিকেটদুনিয়ার অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ আসার একটা ইঙ্গিত দিয়েছে জাতীয় দৈনিক সমকাল। এক প্রতিবেদনে পত্রিকাটি জানিয়েছে, দুই বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে এক ক্রিকেট জুয়াড়ির (বুকি) কাছ থেকে অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। সেটি তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করলেও আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানিয়ে গোপন করেন তিনি। বিষয়টি পরে আইসিসি জানতে পারে। আর এতে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছেন তিনি।

পত্রিকাটি জানিয়েছে, সাকিব আল হাসান এজন্যে দেড় বছরের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইসিসি ইতোমধ্যে সাকিবের ব্যাপারে বিসিবিকে বিস্তারিত জানিয়েছে। তাকে জাতীয় দলের সঙ্গে অনুশীলন না করার নির্দেশনাও দিয়েছে আইসিসি। এ কারণে অসুস্থ বলে জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিচ্ছেন না সাকিব। গতকাল সোমবার বিসিবির একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাকিব পরবর্তী সময়ে আকসুকে সহায়তা করায় একটু নমনীয় তারা। শাস্তি ১৮ মাস নির্ধারণ করা হলেও সাকিব আপিল করলে সেটা কমিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বিসিবির সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি সাকিব আইসিসির কাছেও ক্ষমা চেয়ে শাস্তি মওকুফের আবেদন করবেন। আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগের নিয়ম ও শৃঙ্খলা মেনে চললে এই শাস্তি ছয় মাসে নেমে আসতে পারে। এটাই এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি।

দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের স্বার্থে ক্রিকেটারদের আন্দোলনে সাকিবের নেতৃত্ব দেওয়া, বিসিবিকে না জানিয়ে গ্রামীণফোনের সঙ্গে সাকিবের বাণিজ্যিক চুক্তি, এবং ভারত সফরের আগে অনুশীলনে যোগ না দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাকিবের ভারত সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা সম্পর্কে একাধিক মন্তব্যের সময়ে সমকাল এমন সংবাদ প্রকাশ করল।

সাকিব আল হাসানের এই নিষেধাজ্ঞার সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই এটাকে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। যদিও আইসিসি এবং বিসিবির পক্ষ থেকে এখনও এনিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতি আসেনি। প্রতিবেদনে বিসিবির বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানিয়েছে, আজ (মঙ্গলবার) অথবা আগামীকাল (বুধবার) সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানাবে আইসিসি। বিসিবি এরই মধ্যে এ বিষয়ে অবগত হয়েছে।

আকসুর নিয়মে আছে, কোনো ক্রিকেটার, ম্যাচ অফিসিয়াল, টিম অফিসিয়ালসহ সরাসরি ক্রিকেটে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি জুয়াড়িদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনৈতিক প্রস্তাব না জানিয়ে চেপে গেলে, লুকানোর চেষ্টা করলে বা আকসুর জিজ্ঞাসাবাদেও অস্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে 'আইসিসি অ্যান্টিকরাপশন' ধারা ২.৪.২, ২.৪.৩, ২.৪.৪, ২.৪.৫ ও ২.৪.৬ কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ছয় মাস আর সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে আইসিসি। সাকিব আকসুর জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করায় ১৮ মাস শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে আপাতত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আইসিসি।

বিসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, স্পট ফিক্সিং বা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বা অভিযোগও তোলা হয়নি। আইসিসি পরিস্কার জানিয়েছে, সাকিব জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি জানাননি। এতেই আইন ভাঙা হয়েছে। তবে সাকিব কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আকসু ভালো করেই জানে, সাকিব ক্রিকেটে যে কোনো অনৈতিক বিষয়কে ঘৃণা করেন। তিনি এও বলেন, 'সাকিবের কেসটা মোহাম্মদ আশরাফুলের মতো নয়। তবে এটা অবশ্যই এ দেশের ক্রিকেটের জন্য বড় দুঃসংবাদ।'

এদিকে, সাকিব যখন সবধরনের ক্রিকেটে বড়ধরনের শাস্তির মুখে তখন বিসিবি তার পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে সমকাল। পত্রিকাটি জানিয়েছে, সাকিবের হয়ে আইসিসির সঙ্গে সব ধরনের আলোচনাই করবে বিসিবি। সবকিছুর ওপর সাকিব বাংলাদেশের অধিনায়ক। এ দেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক তারকা। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তাকে তেমনভাবেই উপস্থাপন করা হবে। সেখানে সাকিবের পাশে অবশ্যই থাকবে বিসিবি। সেটি সাকিবকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা অন্তত এমনটাই মনে করেন। তবে এর বাইরেও ভিন্ন মত আছে। কিছু কিছু পরিচালক এ অবস্থায় নতুন করে আরেকটি ইস্যু তৈরি করতে চাচ্ছেন। অবশ্য এরআগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ইস্যুতে ২২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, "ম্যাচ ফিক্সিয়ের খবর আসতেছে,আপনারা চিন্তা কইরেন না, ওইগুলা আসতেছে।"

সাকিবের নিষিদ্ধ হওয়ার সংবাদ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের "‎ক্রিকেটের সাতকাহন" গ্রুপে মোস্তাফিজ মামুন লিখেন, সমকাল পত্রিকার অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে সাকিবকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সাকিবের সততা প্রমাণিত হয়েছে। যদিও নিয়মভঙ্গের একটা অভিযোগ থেকেই যায়, তবে এটা কোনভাবেই অপরাধ নয়। নিয়মভঙ্গের জন্য যদি আইসিসি কর্তৃক আঠারো মাস সাসপেন্ড হয় তাহলে এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসামূলক। যেখানে অনেক বড়সড় অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান খুবই নগণ্য। প্রশ্ন হলো, এই অভিযোগ এতদিন পরে কেন?

প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী লিখেন, এটা নাকি পুরান নিউজ। সাকিবকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল সে রাজি হয়নি এবং তখনই সে এটা বিসিবিকে জানিয়েছে।

আহমদ জিতু ফেসবুকে লিখেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন খেলোয়াড় কখনই এমন ভুল করতে পারেন না, তিনি হচ্ছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। দ্বিতীয় যে খেলোয়াড়টি এমন ভুল করতে পারেন না তিনি হচ্ছেন সাকিব আল হাসান। তবে সাকিব যেহেতু একটু ইমোশনাল এবং গোঁয়ারও বটে, তাই হয়ত সে আইসিসিকে ব্যাপারটা জানাতে ভুলে গিয়েছিলেন। যারা অসামান্য কিন্তু নিয়ম পছন্দ করেন না, তাদের এমন ভোগান্তি জীবনে পোহাতেই হয়। সাকিবের ক্ষেত্রেও হয়ত তাই হলো। আশা করব কোন শাস্তি হবে না সাকিবের। যদি হতেই হয় তবে ৬ মাসের ন্যূনতম, এর বেশী নয়।

সাকিব আল হাসান ক্রিকেটের একটা ব্র্যান্ড নেইম এখন। তিনি মাঠে না নামলে শুধু বাংলাদেশ না, সমগ্র ক্রিকেট বিশ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি। তাছাড়া যে অপরাধ তিনি করেননি, তার জন্য তাঁকে এভাবে দোষী সাব্যস্ত করা অনুচিত। নিয়মের জন্য মানুষ না, মানুষের জন্যই নিয়ম। ব্যাপারটা মাথায় রেখে দরকার হলে নিয়ম সংশোধন করতে হবে। সাকিব নিশ্চয় গত একবছর ধরে নরক যন্ত্রণা ভোগ করছিলেন। আহারে মানুষটা। কোন দোষ না করেই এইসব নিয়ম তাকে দোষী বানিয়ে ফেলল। সাকিব কি তাহলে এই যন্ত্রণা থেকেই কিছুটা বিচলিত হয়ে ভাবছিলেন তার ক্যারিয়ার হয়ত শেষ, তাই হঠাত করেই একটা হঠকারী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ফেলেছিলেন? হতেও পারে।

তবে ভালো খবর হচ্ছে সম্প্রতি তার মিডিয়া-বাজ আন্দোলনের কারণে কিছুটা বিরক্ত হলেও আইসিসির এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশ আবার তার পক্ষে একযোগে ঘুরে দাঁড়াবে। আমি নিশ্চিত বিসিবি তার সর্বোচ্চটা দিয়ে সাকিবকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে। বিসিবি সবসময় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পাওনার সর্বোচ্চ দিয়েছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। সাকিব আল হাসানের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। তার প্রতি ভালোবাসা অটুট আছে, থাকবে। সেটা আজ হোক, কিংবা ছয় মাস পরই হোক!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত