স্পোর্টস ডেস্ক

১০ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:২৩

ভারতে সিরিজ জয়ের হাতছানি

অনেক অস্বস্তিকর পরিবেশ নিয়ে ভারত সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সফরের শুরুটাও হয়েছিল সাফল্যে রাঙানো। দিল্লি জয়ের পর রাজকোটে হারলেও এখন নাগপুরে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে।

রোববার নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটিতে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও স্টার স্পোর্টস।

ভারতের মাটিতে কখনো সিরিজ জেতেনি বাংলাদেশ। তার ওপর ভারতকে তাদেরই মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারাতে পারেনি সফরকারী কোন দল। প্রথম ম্যাচ জিতে নতুন আরেকটি ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ যে কোন মূল্যেই সিরিজ জিততে চাইবে। বাংলাদেশও সুযোগটা হেলায় হারাতে চাইবে না। যে কোন মূল্যে দিল্লির স্মৃতি নাগপুরে ফিরিয়ে আনতে চাইবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর কথাতেই তা স্পষ্ট। শনিবার ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘সফরের আগের সপ্তাহগুলো কঠিন ছিল, কিন্তু খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব প্রাপ্য। গত ১০ দিনে ছেলেরা অসাধারণ প্রাণশক্তি ও ইচ্ছাশক্তি দেখিয়েছে। ওরা নতুন কিছু চেষ্টা করতে উন্মুখ। দুই সপ্তাহ আগে কেউই বিশ্বাস করতে চাইতো না, নাগপুরে ১-১ সমতা নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ আসবে। যেখানে আছি সেখানে থেকে আমরা খুব খুশি। রবিবার আমাদের জন্য দারুণ একটা সুযোগ। আশা করি আমরা সুযোগটা কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারবো।’

তবে বাংলাদেশের জন্য কাজটা মোটেও সহজ নয়। বিশেষ করে রাজকোটে ১৬ ওভারের মধ্যে ৮ উইকেটের বড় জয় নিয়ে এমনিতেই আত্মবিশ্বাসের পারদ শীর্ষে আছে রোহিতের দলের। তবে একটি পরিসংখ্যান বাংলাদেশ শিবিরে সাহস যোগাতে পারে। সর্বশেষ ৫টি টি-টোয়েন্টি সিরিজের ২টিতে হেরেছে ভারত, ২টিতে ড্র করলেও একটি সিরিজে কেবল জিততে পেরেছে। শুধু তাই নয়, নাগপুরে নিজেদের মাঠে কুঁড়ি ওভারের ক্রিকেট ভালো রেকর্ড নেই ভারতের। ৩ ম্যাচের ২টিতেই হেরেছে তারা এই ভেন্যুতে।

এছাড়া রাজকোটের মতো ব্যাটিং উইকেট নয় নাগপুরে। বরং নাগপুরের বিদর্ভ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্পিনাররা গড়ে দিতে পারে পার্থক্য। নাগপুরের পিচ যে রহস্যময়, সেটা জানা দলের সবার। এমনটি হলে বাংলাদেশের জন্য দারুণ সুযোগ তৈরি হবে। কারণ দিল্লির উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়েই ভারতকে বধ করেছিল বাংলাদেশ।

নাগপুরের এই মাঠে এখন পর্যন্ত ১১টি টি-টোয়েন্টি হয়েছে। মাত্র তিনটি ম্যাচে আগে ব্যাটিং করা দল ছাড়াতে পেরেছে দেড়শো। মোট ৮ বার আগে ব্যাট করা দল এই মাঠে জিতেছে। সব মিলিয়ে কুঁড়ি ওভারের ক্রিকেটে এই মাঠের গড় স্কোর ১৫৫। যা রাজকোটে ছিল ১৮৫। তাইতো ডোমিঙ্গো আশাবাদী, ‘ঐতিহাসিকভাবে রাজকোটের চেয়ে নাগপুরে রান কম হয়। রাজকোটের চেয়ে এখানে স্পিনারদের অনেক বড় ভূমিকা থাকবে। আমি বিশ্বাস করি, উইকেট যদি স্পিন সহায়ক হয়, তাহলে আমাদের স্পিনারদের ২০ ওভার করার মতো সামর্থ্য আছে।’

নাগপুরের শুকনো পিচের কথা বিবেচনা করে মাঠে নামানো হতে পারে একজন বাঁহাতি স্পিনারকে। সেক্ষেত্রে মাঠে নামতে পারেন অভিজ্ঞ স্পিনার আরাফাত সানি। তার বদলে একজন পেসারকে বসতে হতে পারে। সেটা আল আমিন হোসেন কিংবা মোস্তাফিজুর রহমানের মধ্যেই কেউ একজন। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভার বল করে ২৭ রান খরচায় উইকেটশূন্য ছিলেন আল আমিন। রাজকোটের হারা ম্যাচেও নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। ৪ ওভারে ৩২ রান দেওয়া এ পেসারের নামের পাশে উইকেট সংখ্যা শূন্য। মোস্তাফিজের পারফরম্যান্সও খুব ভালো নয়। তবে আল আমিন ও মোস্তাফিজ দুইজনকেই বিশ্রাম দিলে মোস্তাফিজের বদলে ফিরতে পারেন আবু হায়দার রনি। এর বাইরেও গ্রোয়িন ইনজুরিতে পড়া মোসাদ্দেক হোসেনকেও বিশ্রামে দিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। তার বদলি হতে পারেন উইকেট-রক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন। সবমিলিয়ে দুই-একটি পরিবর্তন অনেকটাই নিশ্চিত।

কেবল বাংলাদেশ দলেই নয়, ভারতীয় দলেও আসতে পারে কয়েকটি পরিবর্তন। আগের দুই ম্যাচের একাদশে থাকা পেসার খলিল আহমদকে থাকতে হতে পারে মাঠের বাইরে। তার পরিবর্তে অবশ্য মিডিয়াম-ফাস্ট বোলার শার্দুল ঠাকুরকে নিতে পারেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে অলিখিত ফাইনালে মূল আলোটা থাকবে স্পিনার আমিনুল ইসলাম ও যুজবেন্দ্র চাহালের ওপর। গত ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও ব্যক্তিগত ভাবে সফল ছিলেন লেগ স্পিনার বিপ্লব। রাজকোটে ভারতের ২ উইকেটই নিয়েছিলেন ২০ বছর বয়সী এই স্পিনার। প্রথম ম্যাচেও নিয়েছিলেন ২ উইকেট। বাংলাদেশের যেমন আমিনুল, ভারতের তেমন চাহাল। ঠিক সময়ে জ্বলে উঠছেন। গত ম্যাচে চাহাল গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন। চাহালকে ডাক দিচ্ছে একটি রেকর্ডের হাতছানিও। আর ৪ উইকেট পেলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে (৫২) টপকে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হবেন চাহাল (৪৯)।

অবশ্য কেবল বোলারদের সাফল্য পেলেই চলবে না। জ্বলে উঠতে হবে ব্যাটসম্যানদেরও। জ্বলে উঠতে হবে অভিজ্ঞ মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ব্যাট। দিল্লিতে মুশফিকের ব্যাটেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। নাগপুরে মুশফিকের ব্যর্থতা ও মাহমুদউল্লাহর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং না করতে পারা ভুগিয়েছে সফরকারীদের। নাগপুরে সিরিজ জিততে এই দুইজনকে ভালো করতেই হবে। এর পাশাপাশি অবশ্যই রোহিত শর্মাকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই সাজফরে ফেরাতে হবে। তবেই কেবল ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় সম্ভব হবে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত