নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০১:২২

সমঝোতা হলো না মহাজোটে, একাধিক প্রার্থী নিয়ে অস্বস্তি

সিলেটের ৯টি আসনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি, এই বিভাগেই আবার কয়েকটি আসনে জাতীয় পার্টিকে এককভাবে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে একক প্রার্থী দিতে পারেনি। রোববার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিনে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টি (জাপা) ও যুক্তফ্রন্ট প্রায় দেড় শতাধিক আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদোজ্জা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে যেমন সমঝোতা করতে পারেনি, একই ভাবে মহাজোটের অন্যতম শরিক এরশাদের জাপার সঙ্গে। শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনে সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ফলে দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯টিতে সমঝোতার পাশাপাশি আরও ১৩২টি আসনে আওয়ামী লীগের বিপরীতে প্রার্থী দিয়েছে জাপা। একইভাবে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া ৩টি আসন বাদে আরও ২৮টিতে প্রার্থী দিয়েছে বিকল্পধারা বাংলাদেশসহ যুক্তফ্রন্ট। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি আসনে মহাজোটভুক্ত একাধিক (আওয়ামী লীগ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাপা) রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নোয়াখালী-৫ আসনেও প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। ওই আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করবেন সাইফুল ইসলাম। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে আছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

ঢাকা-১৭ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন চিত্রনায়ক ফারুক (আকবর হোসেন খান পাঠান)। এই আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা যিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের হয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী হিসেবে আছেন আন্দালিভ রহমান পার্থ।

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) এবং ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করবেন জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এমএ কুদ্দুস খান। যদিও এ দুটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ঝালকাঠি-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। পাশাপাশি ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন বজলুল হক হারুন। মহাজোটে থেকেও এই দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়বেন জাপা প্রার্থী এমএ কুদ্দুস খান।

নড়াইল-২ (সদর ও লোহাগড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেদের প্রার্থীও দিয়েছে জাতীয় পার্টি।

সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ওদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী। এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির।

সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ওসমান আলী, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির একক প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী।

সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমরান আহমেদ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আহমেদ তাজ উদ্দিন তাজ রহমান, বিএনপির প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিম।

সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদারের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ সেলিম উদ্দিন। এই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দিয়েছে একক প্রার্থী।

সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য সমশের মবিন চৌধুরী। নাহিদ না সমশের এনিয়ে অনেক আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত মহাজোটের প্রার্থী হন নুরুল ইসলাম নাহিদ। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সমশের মবিন চৌধুরী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি, ফলে বিএনপির একক প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে মহাজোটের শরিক দুই নেতাকে।

মৌলভীবাজার-২ আসনে মহাজোটের শরিক বিকল্পধারার প্রার্থী এমএম শাহীন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ্যাডভোকেট মাহাবুবুল আলম শামীম, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির একক প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আতিকুর রহমান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির রয়েছেন একক প্রার্থী।

হবিগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল মজিদ খানের বিপরিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে আছেন শংকর পাল; জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির রয়েছেন একক প্রার্থী।

হবিগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু জহিরের বিপরিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে আছেন মো. আতিকুর রহমান; জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির রয়েছেন একক প্রার্থী।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিক থাকলেও জাতীয় পার্টিও প্রার্থী দিয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে আছেন নাজমুল হুদা।

এছাড়াও যেসব আসনে মহাজোটের একাধিক দলের প্রার্থী রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ একাংশ) আসন। এখানে মহাজোটের তিন জন প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন- বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি এইচ এম গোলাম রেজা (কুলা প্রতীক), আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি এস এম জগলুল হায়দার (নৌকা প্রতীক) এবং জাপার সাত্তার মোড়ল (লাঙ্গল প্রতীক)। এ তিন প্রার্থীর সবাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের, তাই সরকার একক কোনো প্রার্থীর পক্ষে না গিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য মৌখিকভাবে প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে।

একই চিত্র সাতক্ষীরা-১ ও ২ আসনে। এ দুটি আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে জাপারও প্রার্থী রয়েছে। ফলে সাতক্ষীরা-৪ আসনের ন্যায় এখানেও মহাজোটের একাধিক প্রার্থীর মধ্যে ভোটযুদ্ধ হবে। অপরদিকে, এসব আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী রাখা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতী চিশতি ঢাকা-১১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছেন এ কে এম রহমতউল্লাহ।

জাতীয় পার্টিকে দেওয়া আওয়ামী লীগের ২৯ আসনের বাইরে আরও ১৩২ আসনে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করেনি জাতীয় পার্টি। জাপার প্রাপ্ত ২৯ আসনে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী না থাকলেও ১৩২ আসনে আওয়ামী লীগকে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হচ্ছে।

মহাজোটের শরিক হিসেবে একক প্রার্থী আবার অন্য ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের প্রার্থী প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, ‘মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির ২৯ জন ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া ১৩২ জন প্রার্থী উন্মুক্ত ভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করেই জাতীয় পার্টির তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাই মহাজোটে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে।’

উল্লেখ্য, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিকদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জাতীয় পার্টিকে দেওয়া অধিকাংশ আসনে আওয়ামী লীগের কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেন নি।

উল্লেখ্য, একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল রোববার। আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত