অবশেষে সন্ধান মিলল এয়ার এশিয়ার নিখোঁজ বিমান কিউ জেড ৮৫০১-এর
ধ্বংসাবশেষ-এর। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী জানিয়েছে, তারা এর মধ্যেই
৪০টি দেহ উদ্ধার করেছে। বিমান যাত্রীদের দেহ উদ্ধারের পরে এয়ার এশিয়ার সিইও
টনি ফার্নান্ডেজ ট্যুইটারে দুঃখপ্রকাশ করেন। মৃত যাত্রীদের পরিবারের প্রতি
সমবেদনাও জানিয়েছেন তিনি।
২৮ ডিসেম্বর ১৫৫ জন যাত্রীকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সুবারবায়া বিমানবন্দর
থেকে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়ে যায় এয়ার
এশিয়ার এয়ারবাস এ৩২০-২০০। বিমানটিতে সাত জন বিমানকর্মীও ছিলেন। দু’দিন ধরে
জাভা সাগরে বিমানটির খোঁজ চলছিল। সন্ধানের দায়িত্বে ছিল ‘ন্যাশনাল সার্চ
অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সি রিপাবলিক অব ইন্দোনেশিয়া’র। ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি
মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন-সহ বেশ কিছু দেশ সাহায্যের হাত
বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দু’দিন ধরে খোঁজের পরেও বিশেষ কিছু মেলেনি। প্রথমে
একটি ছোট অঞ্চলে খোঁজ শুরু হলেও পরে সন্ধান ক্ষেত্রটি বাড়ানো হয়। মঙ্গলবার
পুরো অঞ্চলটিকে ১৩টি ভাগে ভাগ করে খোঁজ শুরু হয়। সকালের দিকে ওই অঞ্চলের
আবহওয়া ভাল ছিল না। দিন গড়ালে পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হয়। ইন্দোনেশিয়ার
সময় সকাল দশটায় বোর্নিং দ্বীপের কাছে জাভা সাগরে ইন্দোনেশীয় বায়ুসেনার
বিমান প্রথম জলে কিছু ধ্বংসাবশেষ ভাসতে দেখে। খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে ওই
অঞ্চলে আরও একটি বিমান পাঠানো হয়। সেই বিমানটিও কয়েকটি বাদামি, রুপোলি ও
কমলা রঙের ধ্বংসাবশেষ ভাসতে দেখে। সেগুলির ছবিও তোলা হয় ওই বিমান থেকে। সেই
ছবি বিশ্লেষণের কাজ চলার পাশাপাশি ওই অঞ্চলে অনুসন্ধানকারী জাহাজও পাঠানো
হয়। ইন্দোনেশীয় তদন্তকারী দলের প্রধান বামবাং সোলিস্তো জানান, প্রাথমিক
ভাবে ওই ধ্বংসাবশেষ কিউ জেড ৮৫০১-এর হওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। পরে এয়ার
এশিয়ার পক্ষ থেকে ওই ধ্বংসাবশেষ নিখোঁজ বিমান কিউ জেড ৮৫০১-এর বলেই স্বীকার
করে নেওয়া হয়।
এর মধ্যেই ‘ন্যাশনাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সি রিপাবলিক অব
ইন্দোনেশিয়া’র সদর দফতরে নিখোঁজ বিমানের যাত্রীদের আত্মীয়দের ডেকে পাঠানো
হয়। সেখানে ওই বিমানের ধ্বংসাবশেষটি দেখতে পাওয়ার কথা জানান। সেখানে
ধ্বংসাবশেষ ভাসার লাইভ ছবিও দেখানো হয়। দেখা যায়, ধ্বংসাবশেষ-এর পাশাপাশি
কয়েকটি মৃতদেহও ভাসছে। এ ছবি দেখার পরে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ইন্দোনেশীয়ার নৌবাহিনী সূত্রে খবর, এর মধ্যে ৪০টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এখন দিনের আলো ফুরিযে গিয়েছে। তবে দেহ উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে
বলে সন্ধানকারী দল সূত্রে খবর। মৃতদেহগুলি সংরক্ষণ এবং শনাক্তকরণের জন্য
সুরাবয়ার হাসপাতাগুলিকে তৈরি রাখা হয়েছে। এয়ার এশিয়ার বিমানটির সঙ্গে
যেখানে সম্পর্ক ছিন্ন হয় সেখান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে জাভা সাগরে
পূর্ব দিকে এই ধ্বংসাবশেষ মিলেছে। এটি ইন্দোনেশিয়ার জলসীমার মধ্যে পড়ে।
ইন্দোনেশিয়া বোর্নিও প্রদেশের মধ্য কালিমান্তান উপকূলের থেকে বেশি দূরে নয়।
ওই অঞ্চলে সাগরের গভীরতা ২৫ থেকে ৩০ মিটার। ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে ডুবুরিও
নামানো হবে বলে জানিয়েছে অনুসন্ধানকারী দল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন,
ধ্বংসাবশেষ ও বাকি দেহগুলি উদ্ধার করতে না পারলে স্রোতের টানে সেগুলি
হারিয়ে যাতে পারে। কারণ, বুধবার সকাল থেকে ওই অঞ্চলের আবহওয়া বেশ খারাপ হতে
পরে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তবে বিমানটি কী ভাবে ভেঙে পড়ল এখনই তা
জানানো সম্ভব নয় বলে তদন্তকারী দলের প্রধান বামবাং সোলিস্তো জানান।
আপনার মন্তব্য