সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ মে, ২০২১ ০১:৫৭

বিদ্রোহী কবির জন্মদিন আজ

বিচিত্র জীবন ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের। ছোটবেলায় ছিলেন বেশ লাজুক। মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন, সেখান থেকে লেটো দলে।

টগবগে তরুণ বয়েসে সেনবাহিনীতে কাজ করেছেন সৈনিক হিসেবে। করেছেন সাংবাদিকতাও। এ ছাড়া গান লেখা, সুর করা, সিনেমা বানানো; সবই করেছেন এক জীবনে।

আজ মঙ্গলবার কবির ১২২ তম জন্মদিন। প্রতিবছরই জন্মদিনে কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করে থাকে নানা আয়োজন। সরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু আয়োজন রাখা হয়েছে কবি স্মরণে।

নিজের সম্পর্কে কবি লিখছেন, ‘আমার ওপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজকারাগারে বন্দি এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত। আমি কবি, আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত।

‘কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সেবাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যাদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায় অত্যাচার দগ্ধ করবে।’
বিদ্রোহী কবির জন্মদিন

আদালতে দাঁড়িয়েও এভাবে কথা বলেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। শৈশব ছাড়া জীবনের বাকিটা সময় ক্ষ্যাপাটে, বিদ্রোহী, সাম্য ও প্রেমিক জীবন কাটিয়েছেন নজরুল।

সাল ১৯১০, মাথরুন স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন কুমুদরঞ্জন মল্লিক; যিনি তখন কবি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তার সান্নিধ্য নজরুলের অনুপ্রেরণার একটি উৎস।
বিদ্রোহী কবির জন্মদিন

কুমুদরঞ্জন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নজরুল সম্বন্ধে লিখেছেন, ‘ছোট সুন্দর চনমনে ছেলেটি, আমি ক্লাস পরিদর্শন করিতে গেলে সে আগেই প্রণাম করিত। আমি হাসিয়া তাহাকে আদর করিতাম। সে বড় লাজুক ছিল।’

এই লেখার ঠিক ১২ বছর পর সেই লাজুক ছেলেটি লিখছেন, ‘মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত/যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্‌গ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না/বিদ্রোহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত/ আমি চির বিদ্রোহী বীর/বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির।

১৯২২ সালের ১২ আগস্ট নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি সপ্তাহে দুবার প্রকাশ হতো। এই পত্রিকাকে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’

তার লেখায় আছে বিদ্রোহ, সাম্য ও প্রেম। প্রেমিক হিসেবেও নজরুলের জুড়ি নেই। তিনি লিখেছেন, মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেব খোঁপায় তারার ফুল/কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির, চৈতী চাঁদের দুল/জ্যোছনার সাথে চন্দন দিয়ে, মাখাব তোমার গায়/রামধনু হতে লাল রং ছানি, আলতা পরাব পায়।

১৯৪২ সালে কাজী নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। সেই বছরের শেষের দিকে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন।

নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই/ যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।’ ১৯৭৬ সালের (১২ ভাদ্র ১৩৮৩) ২৯ আগস্ট মৃত্যুর পর কবির ইচ্ছা অনুযায় তাকে দাফন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে।
বিদ্রোহী কবির জন্মদিন

নজরুলের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১৯৭৬ সালে নজরুলকে দেয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত