মিহিরকান্তি চৌধুরী

১২ আগস্ট, ২০২৩ ২২:২৩

নিরঞ্জন দে প্রণীত ‘শাহ আবদুল করিম’ : একজন বিশ্বনাগরিকের জীবন ও কর্মকথা

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট আয়োজিত বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জীবন ও কর্মের ওপর বিশিষ্ট তথ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক নিরঞ্জন দে প্রণীত ‘শাহ আবদুল করিম’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের মাননীয় সভা-প্রধান কবি, লেখক, লোকগবেষক ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সম্মানিত আলোচকবৃন্দ কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক প্রফেসর ড. জফির সেতু, লেখক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক এবং বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ড. তপন বাগচী, কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. মোস্তাক আহমাদ দীন, লেখক, গীতিকার ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক এবং দৈনিক যুগভেরীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অপূর্ব শর্মা, গ্রন্থের লেখক তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে, গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্থা সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্থা সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের প্রধান পরিচালক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অরিন্দম দত্ত চন্দন, সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রজত কান্তি গুপ্ত ও সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন মোস্তাক আহমেদ, বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ, মরমী পদকর্তা শাহ আবদুল করিমের সহ-প্রশংসকগণ, ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গণ, আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্য হিসেবে আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। বাউল সম্রাটের জীবন ও কর্মের গভীরে বিস্তৃত একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের উন্মোচন উদযাপন করছি। এই শুভ দিনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করার জন্য আমি বিনীত ও সম্মানিত বোধ করছি, দাঁড়িয়ে আছি আপনাদের সামনে। আমরা এমন একজন ব্যক্তির অসাধারণ উত্তরাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি যাঁর প্রভাব অগণিত আত্মার হৃদয়ে অনুরণিত হয়।

শুভদিনের এই শুভক্ষণে আমরা বাউল পদকর্তা শাহ আবদুল করিমের জীবন এবং শৈল্পিক দীপ্তিকে স্মরণ করতে সমবেত হয়েছি। তিনি জনমানুষের মরমী আবেগে ‘বাউল সম্রাট’ নামে পরিচিত। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেওয়া শাহ আবদুল করিমের যাত্রা বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে আজ বহুদূরে বিস্তৃত। তিনি একজন কিংবদন্তি সঙ্গীতজ্ঞ, সুরকার, গীতিকার এবং সংগীত শিক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। আত্মা-আলোড়নকারী তাঁর বাউল সংগীতের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে একটি অমোঘ ছাপ রেখে গেছেন।

বাউল সংগীতের জগতে শাহ আবদুল করিমের অবদান অতুলনীয়, এবং তাঁর প্রভাব লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তাঁর শিল্পকলার তাৎপর্য আরও এই অর্থে আলোকিত হয়, যে তিনি তাঁর জীবদ্দশায় সাতটি গানের বই প্রকাশ করেছিলেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, ‘রচনাসমগ্র’ শিরোনামের তাঁর সংকলনটি তাঁর কাব্যিক দক্ষতার সারমর্মকে ধরে রেখেছে এবং তাঁর মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে উন্মোচিত হয়েছিল।
নিরঞ্জন দে প্রণীত ‘শাহ আবদুল করিম’ গ্রন্থে আমরা বাউল সম্রাটের আশৈশব ঘটনা, দুর্ঘটনা ও কর্মযজ্ঞের বিবরণ পাই। মোট চোদ্দটি অধ্যায়ে তিনি বাউল সম্রাটের জীবন ও কর্মকে তুলে ধরেছেন। শাহ আবদুল করিমের জীবন শুরু হয়েছিল প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কিন্তু তাঁর সংগীত সর্বস্তরের মানুষের কাছে অনুরণিত হতে থাকে। ইব্রাহীম আলী এবং নাইওরজানের ঘরে জন্মনেওয়া এই ক্ষণজন্মা পুরুষ ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহের মতো বিখ্যাত বাউলদের আলোকিতদের দর্শন দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। এই আধ্যাত্মিক প্রভাবগুলোল তাঁকে অন্যায়, কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গান গাইতে অনুপ্রাণিত করেছিল, তাঁর সংগীতকে সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে তিনি এটা সম্ভবপর করে তুলেছিলেন।

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম সংগীত সাধনার সন্ধানযোগ উপলব্ধ হয় এই গ্রন্থে। দারিদ্র্যের রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও শাহ আবদুল করিম সংগীত সাধনায় অটল ছিলেন। শ্রদ্ধেয় সাধকদের  কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করে তিনি বাউলগানের মাধ্যমে স্বস্তি ও শৈল্পিক দীক্ষা পান। বাউল গান এবং শরীয়তি, মারফতি, দেহতত্ত্ব এবং গণসংগীতসহ বিভিন্ন সংগীত শাখার প্রতি তাঁর উৎসর্গ তাঁর শৈল্পিক অভিব্যক্তির বিশাল ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের সংগীত যাত্রা নিজ প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্মোচিত হয়, যা তাঁকে সৃষ্টির ধারায় নিয়ে যায় এবং তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি প্রায় পাঁচ শত গান রচনা করেন। তাঁর গানের কথা ও সুরের মাধুর্য প্রাথমিকভাবে ভাটি অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তাঁর সুরগুলো শেষ পর্যন্ত এই স্থানীয় সীমানা অতিক্রম করে এবং ব্যাপক দর্শকদের কাছে অনুরণিত হয়। তাঁর গানের প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পরেও, তাঁর সৃষ্টিসমূহ বিভিন্ন শিল্পী দ্বারা নানা পরীক্ষানীরিক্ষার পর নতুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল, ছিল সেটা ব্যাপক।

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জীবন ছিল নম্রতা ও অধ্যবসায়ের নিদর্শন। তিনি বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে তিনি তাঁর মূল্যবোধে অবিচল ছিলেন। তাঁর নৈপুণ্যের প্রতি তাঁর নিবেদন অতুলনীয় ছিল, এবং এমনকি তিনি কৃষিতে পর্যন্ত পরিশ্রম করেছিলেন, তারপরও তিনি কখনও দারিদ্র্যকে তাঁর শৈল্পিক চেতনাকে দমন করতে দেননি।

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের শিল্পসত্তার গভীর প্রভাব খ্যাতিমান তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং লেখক নিরঞ্জন দে-কে ‘বাউল সম্রাট’ এর মর্মকে ধরার জন্য সাহিত্য যাত্রা শুরু করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তাঁর বইটি শাহ আবদুল করিমের জীবন ও কর্মের বর্ণনা দেয়, যা কিংবদন্তি সঙ্গীতজ্ঞের মনের অমূল্য অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। চোদ্দটি অধ্যায় ও অন্য সম্মানিত লেখকদের ভাষ্যসম্বলিত সমীক্ষার এই গ্রন্থরূপ একজন মরমী পদকর্তাকে শ্রদ্ধা জানানোর এক অসামান্য প্রয়াস। যিনি তাঁর সংগীতের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিলেন, তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো অন্তর থেকেই আসা এক তাগিদ। গ্রন্থের প্রসঙ্গ-কথায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা যথার্থই বলেছেন, “শাহ আবদুল করিম বাঙালির লোকজীবনের সাংগীতিক রূপকার। তিনি গান লিখেছেন, সুর করেছেন এবং কণ্ঠ দিয়েছেন। সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের উজানধল গ্রামের বাসিন্দা হয়েও তিনি আজ কেবল সংগীতের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন বিশ্বনাগরিক। তাঁর লেখা গান আজ বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। তাঁর গান ছাড়া এখন লোকসংগীতের আসর যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাঁর জীবন ও কর্ম এখন সাধারণ মানুষের কৌতূহলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।...”

নিরঞ্জন দে প্রণীত ‘শাহ আবদুল করিম’ পুরো গ্রন্থটি পাঠ করলে আমরা অনুধাবন করতে পারি, শাহ আবদুল করিমের জন্ম যে মাটিতে, সে মাটির গন্ধ আমাদের দেহ, মন, প্রাণেও রয়েছে। আমরা করিমভক্ত, আমরা করিমনগরের অধিবাসী। আমরা চেষ্ঠা করলে কৃতকার্য হতে পারি। শাহ আবদুল করিম আমাদের সকলের জন্য বরাবরই প্রেরণার এক উৎস ছিলেন। তিনি ছিলেন যুক্তিবাদী। অলীক কল্পনার আশ্রয়ে তাঁকে যেতে দেখা যায়নি। তিনি মানবতাবাদী ছিলেন। তাঁর সাধনার মূল কেন্দ্রে ছিল মানবতাবাদ। তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমানদের সংঘাত। তাই তিনি দুটি সম্প্রদায়ের লোকজনকে পরস্পরের কাছাকাছি আনতে চেয়েছিলেন । তিনি অনেকটা কৃতকার্যও হয়েছিলেন।

‘শাহ আবদুল করিম’ গ্রন্থটি পাঠে আমরা শাহ আব্দুল করিমের জীবন ও কর্মকে কেন্দ্র করে আত্মপরিচয়ের সন্ধান পাই। তাঁর রচনাবলীতে রয়েছে যেমন অধ্যাত্ম উপলব্ধির প্রজ্ঞাময় নির্যাস, তেমনি রয়েছে সমাজবীক্ষণ। তাঁর সমাজ-মনস্কতা যেমন তীব্র, তেমনি নিবিড় অনুরাগ তাঁর স্রষ্টার প্রতি। তাঁর মতে- ঈশ্বর সকল সীমাকে পূর্ণ করে সকল সীমার অতীত। সমস্ত জগৎ, ভবলীলা তাঁর রূপ। রূপে রূপে তিনি অপরূপ, অরূপ। তিনি সর্বত্র বিরাজিত। এই সহজ সত্যের মধ্যে তিনি নিমজ্জিত হয়েছেন, অন্যদের নিমজ্জনের প্রয়াস চালিয়েছেন। শাহ আবদুল করিমের গান তাঁর গভীর চেতনা থেকে উঠে এসেছে। সে চেতনার পরিম-ল অনেক ব্যাপক। তাঁর সংগীতকে হৃদয়ের গান, হৃদয়ের সংগীতই বলা ভালো। হৃদয় নিসৃত বলেই তাঁর গান ও সংগীতের মাধ্যমে অতি সহজেই অন্যের হৃদয়ে নিজের প্রাণের কথার ভাব নির্যাস ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন।

শাহ আবদুল করিমকে কেন্দ্র করে সংগীত-শিল্প-সাহিত্য-প্রকাশনাবিষয়ক যেকোনও কর্মপ্রচেষ্টা আমাদের উৎসাহিত করে। আলোচ্য গ্রন্থ প্রকাশ ও তারই ধারাবাহিকতায় আয়োজিত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান তার ব্যতিক্রম নয়। বাউল সম্রাট মূলত অসীম, অনন্ত সুন্দরের উপাসক। মরমীধারার অন্য সিদ্ধ ব্যক্তিত্বদের মতো তিনিও প্রেমিক-ভক্ত। তিনি যে উপাসনায় নিজেকে মগ্ন করেছেন সে উপাসনায় তিনি নিজেও সিদ্ধ। তাঁর উপাসনা মন্দির, মসজিদ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বাইরে। তাঁর উপাসনার স্থান সমগ্র সৃষ্টিলোক, তাঁর উপাসনার স্থান মানুষের অন্তর্লোক। তিনি সন্ধান করেছেন সত্যকে, তিনি সন্ধান করেছেন মনমানুষকে। ঈশ্বরের সৃষ্টি সকল জীবকে তিনি ভালোবেসেছেন। ঈশ্বরের সৃষ্টি সকল মানুষকে এক মানদ-ে বিচার করেছেন। শাহ আবদুল করিম নিজেও স্বীকার করেছেন, ঈশ্বর এক শক্তির নাম যে শক্তি সর্বব্যাপী। সে শক্তির ব্যাপ্তি অসীম। পুরো সৃষ্টিলোকই এককভাবে তাঁর কাছে ঈশ্বর নামে পরিচিত। সন্ত কবীরের সাথে শাহ আবদুল করিমের দর্শনের মিল পাওয়া যায়। কবীর বলেছেন, তাঁর ঈশ্বর নিগূঢ় লীলাময়। তিনি নিগূঢ়, গভীর, সীমা ও অসীম থেকে তিনি পৃথক । অসীম অতল মহাগভীর সেই তত্ত্ব। একমাত্র প্রেমের দ্বারাই এই তত্ত্ব রহস্য ভেদ করা সম্ভব। প্রেমের খেলায় যুগলের মিলন নিশ্চিত। শাহ আবদুল করিম রাধাকৃষ্ণ ও আশেক মাশুকের তত্ত্বেও এ সত্যের মৌলিক বিষয়টির সন্ধান পেয়েছেন।

শাহ আবদুল করিমকেন্দ্রিক আলোচনা আমাদের উপলব্ধি জোগায় যে, তিনি স্থান ও কালকে অতিক্রম করে বিরাজিত। সত্য বলার সাহস তাঁর যেমন ছিল, তেমনি বর্তমান সমাজে সত্য বলার ফলস্বরূপ দুঃখ ভোগ করার, দুর্দশার মুখোমুখি হওয়ার মতো মানসিক দৃঢ়তাও ছিল তাঁর। শাহ আবদুল করিমের গান সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের হৃদয়কে ছুঁয়ে গেছে, কারণ তাঁর গান তাঁর মনের কথা নয়, তাঁর আত্মার কথা। আত্মার রচিত গান সেগুলো। এ উপমহাদেশে যত সাধক পুরুষ জন্মেছেন, আবির্ভূত হয়েছেন তাঁরা সকলেই দেখেছেন সমাজে ভেদ বুদ্ধির নিদারুণ প্রকাশ। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলোর চিরস্থায়ী সমাধানে তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। শাহ আবদুল করিমের মতো মরমীধারার কবিরাও ব্যতিক্রম নন । তাঁরা সকলেই সমাজের প্রগতিশীল জাগরণ কামনা করেছেন। শাহ আবদুল করিম শাস্ত্রের চেয়ে আত্মপ্রত্যয়ে জোর দিয়েছেন। মরমী সাধকরা এ ধারাতেই বিশ্বাস করতেন। তাঁদের ধর্মচর্চার মূল লক্ষ্য ছিল ধর্মবলে ভেদের মধ্যে অভেদের সেতুবন্ধন করা।

নিরঞ্জন দে শৈল্পিকভাবে শাহ আবদুল করিমের জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলেকে সন্নিবেশিত করেছেন, সেই মুহূর্তগুলো থেকে উদ্ভূত অনুরূপ রচনাগুলোর সাথে সেগুলোকে সংযুক্ত করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি শাহ করিমের ভান্ডারে মালজোড়া গানের গভীর তাৎপর্য অন্বেষণ করেছেন, একটি প্রাণবন্ত এবং আকর্ষক আখ্যান প্রদান করেছেন যা পাঠকদের এই অনন্য ধারণায় নিমগ্ন হতে সহায়তা করে।

উপরন্তু, দে মাওলানা ভাসানীর কাগমারী সম্মেলনে শাহ আবদুল করিমের উপস্থিতির উল্লেখ করেছেন। এই বিশেষ অনুষ্ঠান থেকে উদ্ভূত রচনাগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বাউল সম্রাটের জীবনের অভিজ্ঞতা এবং তাঁর শৈল্পিক অভিব্যক্তির মধ্যে জটিল আন্তঃক্রিয়া সম্পর্কে পাঠকদের আগ্রহ আরও বৃদ্ধি করেছেন।

বাংলা সংগীতে তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মর্যাদাপূর্ণ একুশে পদক পুরস্কার প্রদান করলে তাঁর সংগীতের উত্তরাধিকার সু-প্রাচীন স্বীকৃতি লাভ করে। একুশে পদক ছাড়া আরও পেয়েছেন কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরী পদক (২০০০), রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), লেবাক এ্যাওয়ার্ড (২০০৩), মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আজীবন সম্মাননা (২০০৪), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস আজীবন সম্মাননা (২০০৫), বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা (২০০৬), খান বাহাদুর এহিয়া পদক (২০০৮), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা (২০০৮), হাতিল এ্যাওয়ার্ড (২০০৯) ও এনসিসি ব্যাংক এনএ সম্মাননা (২০০৯)।
 
সংগীতের বাইরেও শাহ আবদুল করিমের জীবনকে স্মরণীয় করে রাখা হয়েছিল বিভিন্ন শৈল্পিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে। চলচ্চিত্র নির্মাতা শাকুর মজিদ ‘ভাটির পুরুষ’ তথ্যচিত্রে তাঁর জীবনের সারমর্মকে ধারণ করেছিলেন। সুবচন নাট্য সংসদ তাঁর সম্মানে শাকুর মজিদের লেখা ‘মহাজনের নাও’ নাটকের ৮৮টি পরিবেশনা মঞ্চস্থ করেছিল। সাইমন জাকারিয়া ২০১৭ সালে বাউল সম্রাটের জীবনের ওপর ভিত্তি করে প্রথম উপন্যাস ‘কুলহারা কলঙ্কিনী’ লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। আরও নানাভাবে করিম স্মরণ চলছে। তাঁর গানের একাধিক অ্যালবাম, সিডি বের হয়েছে। অনেক গবেষক কাজ করছেন। এঁদের মধ্যে পিএইচডি গবেষকও আছেন।

দুঃখজনকভাবে, ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯, শাহ আবদুল করিম সিলেটের নূরজাহান পলি ক্লিনিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার কারণে, বিশ্ব বাউল সম্রাটকে হারিয়ে শোকাহত হয়েছিল। তাঁর প্রস্থান একটি যুগের সমাপ্তি চিহ্নিত করেছে, কিন্তু তাঁর গান ও সুর পরবর্তী প্রজন্মের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, আগামীতেও হবে।

নিরঞ্জন দে-র গবেষণার মাধ্যমে আমরা শুধু শাহ আবদুল করিমের ব্যক্তিত্বই নয়, বাউল সম্প্রদায়ের সম্মিলিত পরিচয়ও খুঁজে পাই। তাঁদের গানগুলো প্রায়শই রহস্যবাদে সজ্জিত এবং মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যের প্রচার করে জাতি, ধর্ম ও ধর্মের বাধা দূর করতে চায়। শাহ আবদুল করিমের মূল চেতনায় থাকা বাউল ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক জীবনধারাকে শাণিত করে। শুধু তাই নয়, শ্রোতাদের বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করতে এবং অস্তিত্বের একত্ব উদযাপন করতে করতেও গণমানুষকে উৎসাহিত করে।

লেখক নিরঞ্জন দে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সংযোজন করেছেন্ যেমন, শাহ আবদুল করিম সম্পর্কিত গ্রন্থতালিকা। যেকোনও পাঠক বা গবেষকের জন্য তা অত্যন্ত সহায়ক একটি বিষয়। এখানে আমরা দেখতে পাই, করিম রচনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন সুমনকুমার দাশ। তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন। বাউল সম্রাটের মৃত্যুর পর সুমনকুমার দাশ সম্পাদিত একটি সংকলনে আমার করা শাহ আবদুল করিমের দশটি জনপ্রিয় গানের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয়ত, নিরঞ্জন দে শাহ আবদুল করিমের নিজের লেখা গ্রন্থগুলোর বিবরণ দিয়েছেন। সব পাঠকের জন্য তো বটেই, নবীন পাঠকের জন্য তা এক অসাধারণ দিকনির্দেশনার নামান্তর। তৃতীয়ত, শাহ আবদুল করিমের জীবনপঞ্জি প্রণয়ন করেছেন। তাঁর গ্রন্থতালিকার মতো জীবনপঞ্জিও পাঠকদের উৎসাহিত করবে। চতুর্থত, তথ্যসূত্র ও সহায়ক গ্রন্থসূচি পাঠক ও গবেষকবান্ধব হওয়া ছাড়াও তার রয়েছে বিশেষ সাহিত্য মূল্য ও বিদ্যায়তনিক গুরুত্ব রয়েছে। পঞ্চমত, শাহ আবদুল করিম রচনা নিদর্শন গ্রন্থটির বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য। শেষে বলছি কিন্তু কোনওভাবেই তা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গ্রন্থে অনেকগুলো দুর্লভ আলোকচিত্র সংযোজিত হওয়ার ফলে গ্রন্থের ঐতিহাসিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমরা যখন এই গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনকে কেন্দ্র করে বাউল সম্রাটের স্মৃতিচারণ করছি, আসুন আমরা শিল্প ও বিনোদনের বাইরে শাহ আবদুল করিমের সংগীতের প্রভাবকে স্বীকৃতি দিই। তাঁর গান সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর, সাম্যের আহ্বান এবং ভালবাসা ও সহানুভূতির পক্ষে এক শক্তিবিশেষ। এগুলো সুফিবাদের সারাংশ বহন করে এবং এর শিক্ষাকে ঐশ্বরিক প্রেম এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি ভালবাসার শিক্ষা দেয়। এই অস্থির সময়ে, শাহ আবদুল করিমের সুর আত্মার জন্য এক বিশেষ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে, যাঁরা এটি সন্ধান করেন তাঁদের সান্তনা এবং আশা প্রদান করে।

যাইহোক, গ্রন্থটির অসংখ্য ইতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও, কিছু কিছু বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তা গ্রন্থটির অ্যাকাডেমিক গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে স্বীকার করতেই হয়। শাহ আবদুল করিমের গবেষণার দীর্ঘ উদ্ধৃতিগুলোকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা যেত। দীর্ঘ উদ্ধৃতিগুলোর অংশবিশেষকে নিজের ভাষায়, পরোক্ষ উক্তিতে উপস্থাপন করা গেলে দীর্ঘ উদ্ধৃতির ভার কমত। লেখক অবশ্যই সংশ্লিষ্ট গবেষকের গবেষণালব্ধ পর্যবেক্ষণকে স্বীকার করেই তা করতেন। চলমান বর্ণনায়ও সারকথার জায়গাকে প্রত্যক্ষ উক্তির মধ্যে আনার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ, আখ্যানের প্রবাহ বজায় রাখার জন্য শুধুমাত্র একটি প্রাসঙ্গিক অংশ ইনভার্টেড কমা দিয়ে পরোক্ষভাবে এই উদ্ধৃতিগুলোর বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে দে আরও যুক্তিযুক্ত পদ্ধতি বেছে নিতে পারতেন। মনে রাখতে হবে, যদিও উদ্ধৃতিগুলো আখ্যানে বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গভীরতা যোগ করতে পারে, তবে সেগুলোকে বাচবিচারের সাথে ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একইভাবে, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের সংগ্রহশালা থেকে দীর্ঘ কাব্যিক চরণ অন্তর্ভুক্ত করা বইটির পাঠযোগ্যতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। একটি দৃষ্টান্তে ব্যবহার করা বা উল্লেখ করা যেতে পারে এমন কাব্যিক চরণের সংখ্যার ওপর একটি যুক্তিসঙ্গত সীমা স্থাপন করা অপরিহার্য যাতে পাঠকরা স্বস্তি বোধ করেই চরণগুলো উপভোগ করতে পারেন। তৃতীয়ত, নির্দিষ্ট পৃষ্ঠা নম্বরসহ দে-এর আগের কাজের উল্লেখগুলো অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হতে পারে। এই লেখা, ওই লেখা সবই নিরঞ্জনের। তিনি দায় স্বীকার করার কোনও হেতু নেই। এই গ্রন্থের লেখক হিসেবে, তাঁর মতামত সহজাতভাবে তাঁর নিজস্ব, এবং তার পূর্ববর্তী প্রকাশনাগুলোর কথা এধরনে বিশদভাবে উদ্ধৃত না করা অ্যাকাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনুত্তীর্ণ হওয়ার কোনও কারণ নেই।

গ্রন্থটির গভীরতা ও আবেদন বাড়ানোর জন্য, নিরঞ্জন দে শাহ আবদুল করিমের জীবন ও শিল্পকলার কৌতুহলপূর্ণ দিকগুলোকে অন্বেষণ করে এমন অতিরিক্ত অধ্যায়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার কথা বিবেচনা করতে পারতেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি বাউলদের রচনায় বিদেশী শব্দভান্ডারের ব্যবহার, শাহ আবদুল করিমের রচনায় রাধা-কৃষ্ণের বিচ্ছেদ, দেহতত্ত্ব, তাঁর ইতিহাস চিন্তা, ধর্মদর্শন, সংস্কৃতির প্রভাব, প্রকৃতি ও পরিবেশ, সমাজ ও পরিবেশ এমনকি তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের অন্বেষণ করতে পারতেন। অন্বেষণ করতে পারতেন মনমানুষের সন্ধান নিয়ে আলাদা এক অধ্যায়ের মাধ্যমে।

নিরঞ্জন দে-র অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ গ্রন্থের উন্মোচন উদযাপনের জন্য আমরা একত্রিত হয়েছি। আসুন, আমরা শাহ আবদুল করিমের রচনার সুরেলা ধারায় নিজেদেরকে নিমগ্ন করি। আমরা এমন একজন ব্যক্তির জীবন ও কর্মের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করছি যিনি তাঁর কালজয়ী সংগীত সৃষ্টির মাধ্যমে সমস্ত বাধা অতিক্রম করেছিলেন। বাউল সম্রাট’ প্রজন্মের শিল্পী ও সংগীত অনুরাগীদের অনুপ্রাণিত করতে থাকুন এবং তাঁর চেতনা চিরকাল সংগীতের সর্বজনীন ভাষায় অনুরণিত হোক।

নিরঞ্জন দে-র গ্রন্থটি এই সংগীত প্রতিভাকে শ্রদ্ধা জানানোর এক বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে, যা শাহ আবদুল করিমের জীবন ও সময়ের মধ্যে গভীরভাবে আলোকপাত করে, সুরের পিছনের মানষটির একটি বিস্তৃত অনুসন্ধান প্রদান করে। এটি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের স্বল্প পরিচিত দিকগুলো উন্মোচন করে, এমন পরিস্থিতিতে অনুসন্ধান করে যা তাঁর সৃজনশীল চেতনাকে রূপ দেয় এবং সর্বজনীন মানবিক আবেগের সাথে অনুরণিত গান তৈরি করতে তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। নিরঞ্জন দে-র পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা এবং বিস্তারিত মনোযোগ নিশ্চিত করে যে, এই কাজটি মহান মরমী পদকর্তা বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের জীবনের অন্তর্দৃষ্টির এক ভাণ্ডার বিশেষ।

এই মূল প্রবন্ধের তাৎপর্য বাউল ঐতিহ্যের জন্য বৃহত্তর উপলব্ধি আনার ক্ষমতার মধ্যে নিহিত, যা বাংলায় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিকাশ লাভ করে আসছে একটি লোক ঐতিহ্যে। শাহ আবদুল করিম এটির অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সমন্বয়বাদের সমৃদ্ধ ধারার অন্বেষণ করার একটি প্রবশদ্বার উন্মুক্ত হয় যা এই অঞ্চলের সংগীত ঐতিহ্যকে সংজ্ঞায়িত করে। বাউল দর্শন এবং সংগীতের মাধ্যমে তাঁর অভিব্যক্তির ওপর আলোকপাত করার মাধ্যমে, আমরা মানব অভিজ্ঞতা এবং মহাবিশ্বের সাথে আমাদের আন্তঃসম্পর্কের গভীর উপলব্ধি অর্জন করি। এথনোমিউজিকোলজি বা মরমী সংগীতধারার ক্ষেত্রে শাহ আবদুল করিমের তাৎপর্য অতুলনীয়। তাঁর সংগীত নিছক বিনোদন অতিক্রম করে বিশেষ উচ্চতায় স্থান করে নিয়েছে। এটি বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিক সারাংশের একটি জীবন্ত প্রমাণ। তাঁর রচনা সহজ অথচ গভীর দর্শনাশ্রিত গান এবং আত্মা-আলোড়নকারী সুর দ্বারা চিহ্নিত। গানের ভাষাগত বা সাংস্কৃতিক পটভূমি নির্বিশেষে অগণিত মানুষের হৃদয়ে একটি পথ খুঁজে পেয়েছে। তাঁর সংগীতের স্বতন্ত্রতা হল, সকল স্তরের মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করে সহজলভ্য লোকসুরের মাধ্যমে গভীর দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক বার্তা প্রকাশ করার ক্ষমতা।

উপসংহারে, এটাই বলতে হয়, নিরঞ্জন দে রচিত ‘শাহ আবদুল করিম’ গ্রন্থটি বাউল শিল্পীর জীবন ও শৈল্পিক যাত্রার একটি সর্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে। উদ্ধৃতি ও কাব্যিক চরণ সংখ্যার ব্যবহারে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, যাঁরা শাহ আবদুল করিমের জীবন, দর্শন এবং কর্ম সম্বন্ধে বুঝতে চান, ধারণা নিতে চান তাঁদের জন্য গ্রন্থটি একটি মূল্যবান সংযোজন। বাংলা একাডেমি কর্তৃক ২০২৩ সালের অমর একুশে মেলায় প্রকাশিত গ্রন্থটির রুচিশীল প্রচ্ছদ এঁকেছেন নাজিব তারেক। গ্রন্থটির বিনিময় মূল্য রাখা হয়েছে দুইশত টাকা। আমি গ্রন্থটির ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা কামনা করি।

মিহিরকান্তি চৌধুরী : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট এবং লেখক, অনুবাদক ও নির্বাহী প্রধান, টেগোর সেন্টার, সিলেট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত