শাবি প্রতিনিধি

০৭ নভেম্বর, ২০২০ ২১:২২

সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে শাবি ছাত্রফ্রন্টের প্রতিবাদী বিবৃতি

লালমনিরহাটে যুবক হত্যা, কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা এবং ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বহিষ্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) শাখা।

শনিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. তৌহিদুজ্জামান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইউশা রশিদ ইফাজ এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, আপনারা অবগত আছেন যে বিগত মাস থেকে সারা দেশ ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল ছিল। সরকারী দলের ছাত্র-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সিলেট এম সি কলেজে গৃহবধূ ধর্ষণের অভিযোগ উঠে।

এরই মধ্যেই গত (২৯ অক্টোবর) কোরআন অবমাননার গুজবে লালমনিরহাটের পাটগায়ে এক যুবককে পিটিয়ে এবং অগ্নিসংযোগে হত্যা, কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছয়টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার এর মত অনাকাঙ্ক্ষিত ও উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছে । আমরা এই হত্যা,সাম্প্রদায়িক হামলা ও বহিষ্কারের প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ফ্রান্সে গত কিছুদিন পূর্বে শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি-কে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হত্যা করা হয়। যা সে দেশের মুসলিমদের জন্যে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ! প্রথমত, বসবাসকারী ইসলাম ধর্মালম্বনকারীরা সেখানকার সংখ্যালঘু এবং দ্বিতীয়ত এই ঘটনায় ফ্রান্সের বর্তমান সরকারের ভূমিকা সেখানকার সংখ্যালঘু ইসলাম ধর্মালম্বনকারীদের জন্যে ফ্রান্সে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করেছে। তাছাড়া ফ্রান্স সরকারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েকদিন থেকে মুসলিম সম্প্রদায় হতে ‘বয়কট ফ্রান্স মুভমেন্ট চলছে।

একই সাথে শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান না নেয়া, ফ্রান্স ধ্বংস ও ফরাসি প্রেসিডেন্টকে হুমকির মত বক্তব্য সেখানে ডানপন্থী রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য তা আরও বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ড, ফরাসি সরকারের ভূমিকা এবং উগ্রপন্থী বক্তব্যেরও নিন্দা জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা মনে করি এদেশের সকল মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। একটি সমাজে কখনই সকলে একই মতাদর্শের হতে পারে না। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মতে মিল না থাকা- এটি কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। মানব সমাজে পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে দ্বান্দ্বিক। মতের দ্বন্দ্বের মধ্যেই মানব সমাজ এগিয়ে চলে। তবে মতের অমিলের কারণে অন্যের উপর হামলা চালানোর অধিকার কারো থাকতে পারে না ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিষ্কারের প্রেক্ষিতে আমরা বলতে চাই, একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল সংখ্যাগুরু শিক্ষার্থীদের সমর্থন পাবার জন্যে বহিষ্কার করার ক্ষমতা রাখে না। সকল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর নিজস্ব মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকার আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষের চিন্তার বিকাশ ঘটে। মানুষ চিন্তা চর্চা করতে শিখে। অপরের চিন্তা ভাবনাকে জানতে শিখে। চিন্তার বিকাশের মাধ্যমেই তাঁরা সমাজে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। এ বিকাশে ভূমিকা যেমন শিক্ষার্থীর ঠিক তেমনই তার বিশ্ববিদ্যালয়ের। ঠিক সেখানেই যদি বিশ্ববিদ্যালয় মত দমনে নেমে পড়ে তা সহিষ্ণু ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির পথে বাঁধার সৃষ্টি করে এবং করছে ।

একই ভূমিকা আমরা গত জুন মাসে শাবিপ্রবির একজন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন সময়ে ঘটতে দেখেছি। আবার,সমাজে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন চিন্তা কারো গায়ে আঘাত করার কথা না বলে বা কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের প্রতি বর্ণবাদী আচরণ না করে ততক্ষণ মামলার পরিবর্তে আলাপ আলোচনাকে স্বাগত জানানোর প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি । আমরা মনে করি, আলাপ আলোচনার পরিবেশ তৈরি হলেই বরং অপ্রয়োজনীয় আচরণ থেকে সমাজ মুক্ত হয় ।

আমরা মনে করি,বর্তমানের এই অসহিষ্ণু পরিবেশ তৈরির পেছনে যেমন সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকা আছে তেমনি প্রচণ্ড অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে সৃষ্ট ক্ষোভ-বিক্ষোভকে দমন করার জন্য এদেশের সরকার ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছে । ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ এর মত আইন ,বিচারহীনতার সংস্কৃতি,অব্যাহত গুম-নির্যাতন এর মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা হরণ আমরা দেখতে পাই ।

আমরা একই সাথে, কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলা উস্কে দেবার পেছনে যে রাজনৈতিক মহলের কথা ভুক্তভোগী বলেছেন তাকে খতিয়ে দেখে বিচার করা এবং এদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি ।

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বহিষ্কার, লালমনিরহাটে পুড়িয়ে হত্যা এবং কুমিল্লায় সংখ্যালঘুদের গৃহে অগ্নিসংযোগকারী ও পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি । একই সাথে বক্তারা জনগণের প্রতি আহ্বান জানান , যেন সকলেই একে অপরের মতের প্রতি সহিষ্ণু হয়,দ্বিমত-ভিন্ন মত প্রকাশ করতে গিয়ে বর্ণবাদী বক্তব্য ও আঘাত করাকে পরিহার করে এবং প্রত্যেকের নিজস্ব মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের জন্যে প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তোলে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত