মারূফ অমিত

০৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:১৩

‘ফের সংঘাতের আশঙ্কা’, তাই একবছর ধরে বন্ধ এমসি কলেজের সেই ছাত্রাবাস!

২০১২ সালের ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে ভস্মিভূত হয়েছিলো এমসি কলেজের ছাত্রাবাস। এরপর প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয় এটি।

২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর পুনঃনির্মিত ছাত্রাবাসের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে উদ্বোধনের পর এক বছরের চেয়ে বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো শিক্ষার্থী তোলা হয়নি ছাত্রবাসটিতে। ১৩ মাস ধরেই বন্ধ অবস্থায় আছে ছাত্রাবাসটি।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৯ লাখ টাকা বকেয়া গ্যাস বিল প্রদান না করায় গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছে জালালবাদ গ্যাস। ফলে ছাত্র তোলা যাচ্ছে না ছাত্রাবাসটিতে।

তবে শিক্ষার্থীদের অনেকে জানিয়েছেন, ফের সংঘাত ও সহিংসতার আশঙ্কায় পুনঃনির্মিত এই ছাত্রাবাসে ছাত্র তোলা হচ্ছে না।

এদিকে, পুনঃনির্মানের এক বছর পরও ছাত্রাবাসে উঠতে না পেরে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। দূর দূরান্ত থেকে এমসি কলেজে পড়তে আসা অনেক ছাত্রকেই বাড়তি টাকা দিয়ে মেস বা বাসাবাড়িতে থাকতে হচ্ছে।

২০১২ সালের ৮ জুলাই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধে। এর জের ধরে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা আগুন লাগিয়ে দেয় এমসি কলেজের শতবর্ষের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসটিতে। এতে ছাত্রাবাসের তিনটি ব্লকের ৪২টি কক্ষ সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭০টি কক্ষ।

সিলেটের শতবর্ষের স্মারক প্রতিষ্ঠান এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। এরপ্রেক্ষিতে ছাত্রবাসটি দ্রুত পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর প্রচেষ্টায় নাশকতার কিছুদিনের মধ্যেই পুরোনো আদলে পুননির্মাণ কাজ শুরু হয় ছাত্রাবাসের।

প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পুণঃনির্মাণ শেষে ২০১৩ সালে ৯ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আগুনে ভস্মিভূত ছাত্রাবাসটি উদ্বোধন করেন।

কিন্তু উদ্বোধনের ১৩ মাস পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত ছাত্রাবাসে তোলা হয়নি শিক্ষার্থীদের। এমসি কলেজে অধ্যয়নরত রয়েছে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা। একে তো আবাসন সঙ্কট তার উপর ছাত্রাবাস নির্মাণের পরও ছাত্র না তুলে অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে।

কলেজ প্রশাসন জানায়, ছাত্রাবাসের ছয়টি ব্লকে ২৪৪ জন ছাত্রের আবাসন-সুবিধা ছিল। পুনঃনির্মাণের পরও ছাত্রাবাসটি চালু না হওয়ায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্রাবাস সুবিধা থেকে। নাশকতার কারণে ভাসমান হয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসটি পুনঃনির্মাণের ফলে আবার সেখানে ওঠার আশায় ছিলো। তবে সে আশাকে দুরাশায় পরিণত করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা। গ্যাস বিল বকেয়া থাকার অজুহাতে ছাত্রাবাসের স্থান হচ্ছে না ছাত্রদের।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কোটি টাকা খরচ করে ছাত্রাবাস পুনঃনির্মাণ হলেও গ্যাসবিল বকেয়া রয়ে গেছে ৯ লক্ষ টাকা। গ্যাস সংযোগ না দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের এখনো ছাত্রাবাসে ওঠানো হয়নি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মূলত সংঘর্ষ এড়াতেই ছাত্রদের তোলা হচ্ছে না হোস্টেলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমসি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, গ্যাস সংযোগ না থাকার বিষয়টি অজুহাত মাত্র। মূলতঃ ছাত্র সংগঠনগুলো আবারো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে এমন শঙ্কা থেকে কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে রেখেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রাবাসের ৬টি ব্লকের সামনেই রয়েছে খেলার মাঠ। শিক্ষার্থী না থাকায় এই মাঠ এখন গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। গো-চারণের কারণে নষ্ট হচ্ছে ছাত্রাবাসের বারান্দা, গাছপালা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের বেলা এগুলো গরুর দখলে থাকলেও রাতে পুরো ছাত্রাবাসটি পরিণত হয় মাদকাসক্তের নিরাপদ আস্তানায়। বন্ধ থাকা এই ছাত্রাবাস রাতে ছিনতাইকারীদের আস্তানা হয়ে ওঠে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয় অনেক বাসিন্দা।

এ ব্যাপারে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রাবাসটি উদ্বোধন করা হলেও গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সেখানে ওঠানো হবে। বর্তমানে ৯ লক্ষ টাকা গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জালালাবাদ গ্যাসের কাছে কিস্তিতে বিল পরিশোধের আবেদন করেছে বলে জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত