নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ জানুয়ারি, ২০২১ ২২:২৭

এমসি কলেজে ধর্ষণ মামলা : কেন বারবার সময় চাচ্ছেন বাদী?

সিলেটের মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় অভিযোগপত্রের ওপর শুনানির দিন আবারও পিছিয়েছে। রোববার পূর্ব নির্ধারিত তারিখে আবারও শুনানি পেছানোর আবেদন জানায় বাদীপক্ষ। সেই আবেদন আমলে নিয়ে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হক আগামী মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) শুনানির পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছেন।

এরআগে গত ৩ জানুয়ারি এই নির্ধারিত তারিখেও  সময় প্রার্থণা করে শুনানি পেছানোর আবেদন জানিয়েছিল বাদীপক্ষ।

কেনো বারবার চাঞ্চল্যকর এই মামলার শুনানি পেছানোর আবেদন করছে বাদীপক্ষ।

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণকান্ডের পর নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম।

বারবার আদালতে সময় প্রার্থণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হলেও আমরা বাদীপক্ষে রয়েছি। এ মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের সার্টিফায়েড কপি আমরা এখনো পাইনি। যে কারণে আমরা আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেছি। অভিযোগপত্রের কপি হাতে পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে নারাজি দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতে অভিযোগপত্র পর্যালোচনার সময় প্রার্থনার আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘এজাহারকারী এখন পর্যন্ত মামলার জাবেদা নকল (সার্টিফাই কপি) পাননি। এ কারণে চার্জশিটের বিষয়ে এজাহারকারী ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক মতামত দিতে অপারগ হওয়ায় চার্জশিট পর্যালোচনার বিষয়ে সময় দেওয়া অতি আবশ্যক। অন্যথায় এজাহারকারী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।’

আদালতে দাখিল করা আবেদনে মামলার অভিযোগপত্র, সিজারলিস্ট, জিম্মানামা, স্ক্যাচমেপ, ইনডেক্স, ইনডেক্সের সূচি ও ব্যাখ্যা, মেডিকেল রিপোর্ট, ডিএনএ রিপোর্ট, আসামিদের দোষ স্বীকারমূলক জবানবন্দি, ২২ ধারার জবানবন্দি, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ও আসামিদের রিমান্ড আবেদনের জাবেদা নকল বাদীপক্ষকে দেওয়ার কথা বলা হয়।

বিজ্ঞাপন



এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, আদালত পুলিশকে অভিযোগপত্রসহ সব নথিপত্র হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। নথিপত্র হাতে পেলে পর্যালোচনা করে দেখব অভিযোগপত্রসহ সব নথিপত্রে বাদীর বিচারপ্রাপ্তিতে কোনো অসংগতি আছে কি না। অসংগতি থাকলে অভিযোগপত্রে নারাজি দেওয়া হবে। ১২ জানুয়ারি এ বিষয়ে আদালতকে লিখিতভাবে জানাব।

সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রাশিদা সাঈদা খানম বলেন, আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের আগে বাদীপক্ষ অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় দুদিন সময় প্রার্থনা করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। ১২ জানুয়ারি বাদীপক্ষ থেকে অভিযোগপত্রে রাজি বা নারাজি জানানোর পর মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আবুল কাশেমের আদালতে আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

এতে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া সরাসরি জড়িত এবং রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম তাদের সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা দায়ের হয়।

এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম ছাড়াও সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে মিসবাউর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা বিচারিক আদালতে জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া, ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষায়িত ল্যাবে সবার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। সেই প্রতিবেদন গত বছরের ৩০ নভেম্বর আদালতের কাছে পৌঁছে।

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অপরাধ তদন্তের বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়। পাশাপাশি কলেজ কর্তৃপক্ষ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত একটি কমিটি তদন্ত শেষে মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসানের ছাত্রত্ব ও সনদ বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে কলেজ ছাত্রবাসে সাইফুর রহমানের কক্ষে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় শাহ মাহবুবুর রহমান রনিকেও অভিযুক্ত করে একই আদালতে পৃথক চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত