দেবদাস চক্রবর্তী, এমসি কলেজ

১৫ নভেম্বর, ২০১৫ ১৮:৪৭

এমসি কলেজ: পরিত্যক্ত অডিটোরিয়াম, সন্ধ্যা হলেই বসে মাদকের আসর

তিন বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের অডিটোরিয়াম। ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ায় এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে অডিটোরিয়ামের অভাবে একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, অপরদিকে পরিত্যক্ত এই মিলনায়তনে সন্ধ্যা হলেই বসে মাদকের আসর।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অডিটোরিয়ামটি সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে বাজেট অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে।

জানা যায়, ১৮৯২ সালে এমসি কলেজ প্রতিষ্ঠাকালেই ৯টি একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের পাশাপাশি ৪০০ আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম তৈরি করা হয়। সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন থেকেই জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিলো এই অডিটোরিয়ামটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৩ সালে কলেজের বার্ষিক মিলাদ মাহফিলে এ অডিটোরিয়াম ব্যবহার করা হয়। এরপর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এর আগে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় অডিটোরিয়াম কক্ষটি ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে আলাদা পরীক্ষা ভবন হওয়ায় অডিটোরিয়ামের প্রয়োজন হয় না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যক্ত অডিটোরিয়ামটিতে নেই বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ। দেওয়ালের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে। দরজা-জানালাও ভাঙ্গা। পুরো কক্ষ পরিণত হয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর শৌচাগারে। অডিটোরিয়ামের ভেতর, বারান্দা, বাথরুম এবং সিঁড়ির বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে সিগারেটের প্যাকেট, মদের বোতলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের পরিত্যক্ত খোসা। হেরোইন, ফেন্সিডিলের খোসা-বোতলও পড়ে থাকতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা হলেই এই অডিটোরিয়ামে বসে মাদকের আসর। স্থানীয় বাসিন্দা আর ছাত্রনেতারা এখানে মাদকের আসর বসান বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মিলনায়তন কক্ষটি পুরনো হয়ে পড়ায় প্রতিধ্বনি জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ কারণে অনেকদিন ধরেই এখানে কোন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে তাই ছোটখাটো অনুষ্ঠান কলেজের ছাত্র মিলনায়তনে আয়োজন করতে হয়। আর বড় ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণকেই ব্যবহার করতে হয়।

এমসি কলেজের সাংস্কৃতিক সংগঠন মোহনা ক্লাবের সভাপতি ওলিউর রহমান সানি জানান, আগে মোহনার সকল অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত হত। বর্তমানে অডিটোরিয়ামটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় এখানে অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে মিলনায়তনের বাইরে খোলা স্থানে এবং ছোট পরিসরে ছাত্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করতে হয়। অডিটোরিয়ামটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

‘থিয়েটার মুরারি চাঁদ’-এর কর্মী ইয়াকুব আলী জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে কলেজ মিলনায়তনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে থাকায় কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক চর্চা ব্যহত হচ্ছে। অডিটোরিয়ামের সুবিশাল মঞ্চ থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে অনুষ্ঠান করতে হয়। আর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করার ঝক্কি পোহানো কষ্টকর বিধায় সব সময় তা সম্ভব হয় না। এ কারণে বর্তমানে এম সি কলেজের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।’

এমসি কলেজের বাংলা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মোঃ. এমরাজ চৌধুরী জানান, নতুন পরীক্ষা ভবন উদ্বোধন কালে অডিটোরিয়ামটি সংস্কারের জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বরাবর ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তৌফিক এলাহী এজদানি বলেন, ‘খুব শীঘ্রই এম সি কলেজ অডিটোরিয়ামের সংস্কারকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এ জন্য একটি বাজেট পাস হয়েছে। আশা করা যায় আগামী সপ্তাহ হতেই সংস্কার কাজ শুরু করা যাবে।’

বাজেটে কি ধরণের কাজের জন্য বরাদ্দ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘দরজা, জানালা, ছাদ ইত্যাদি সংস্কার এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সংস্কার কাজ এ বাজেটের অন্তর্ভুক্ত।’

প্রতিধ্বনি জনিত সমস্যার সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘সবকিছু তো একসাথে করা সম্ভব নয়। এ বছর কেবল এ সমস্যাগুলোই সংস্কার করা হবে।’

এমসি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি জানান, ‘কিছুদিনের মধ্যেই এমসি কলেজ মিলনায়তনের সংস্কারকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এ জন্য ৪০ (চল্লিশ) লক্ষ টাকার একটি বাজেট অর্থমন্ত্রনালয় হতে বরাদ্দ হয়েছে। আশা করা যায়, এক বছরের মধ্যেই সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে এবং আগামী বছর থেকে আবারো এমসি কলেজ মিলনায়তনে নিয়মিত অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে।’

অডিটোরিয়ামে মাদকের আসর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত