নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ১২:১৮

আন্দোলনে আটকে গেল শাবির সিন্ডিকেট নির্বাচন

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরিস্থিতির জন্য সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা ছিল। তবে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।’

উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি, ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠান করতে বাধা দেয়া, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কুমিল্লার লোকদের নিয়োগে প্রাধান্য, উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন।

এ বিষয়ে ফরিদ জানান, সরকার তদন্ত কমিটি করে কোনো সুপারিশ করলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।

আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন শিক্ষক প্রতিনিধিরা গালিগালাজ সহ্য করে আলোচনা করার প্রস্তাব করছেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করছে। এ ছাড়া সমস্যা সমাধানের চূড়ান্ত সময়ে এসে কারা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করে পুলিশকে চড়াও হতে বাধ্য করেছিল, তা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’

শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়ায় তাদের বিভ্রান্ত না হয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তার আহ্বান জানান উপাচার্য ফরিদ।

প্রসঙ্গত, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে এনে প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা।

এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন তারা। এরই মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরতদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

রোববার বেলা আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় উপাচার্য ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবনে আশ্রয় নিলে শিক্ষার্থীরা সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে রোববার বিকেলে এসে সহিংসতায় রূপ নেয় আন্দোলন।

এদিকে পুলিশের হামলায় ছত্রভঙ্গ শিক্ষার্থীরা আবারও জড়ো হলে পরে ছাত্রলীগ তাদের ধাওয়া করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। সোমবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। আজ  সপ্তম দিনের মতো অবস্থান বজায় রেখেছেন আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাশেদ তালুকদারকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত