নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০২:৪১

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে উপাচার্য নিয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনির ভার্চুয়াল বৈঠক শেষ হয়েছে।

বৈঠকে আন্দোলনরতরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি জানালেও এনিয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। মন্ত্রী তাদেরকে দাবির কথা লিখিতভাবে জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন, একই সঙ্গে তিনি অনশনরতদের অনশন ভঙ্গের অনুরোধ জানান।

শনিবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ১২৯ নম্বর কক্ষে বৈঠক শুরু হয়। রাত সোয়া দুইটার দিকে এ বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি।

বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বৈঠক সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠ‌নিক সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।

নাদেল বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ধৈর্য সহকারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা শুনেছেন, এবং তাদেরকে অনশন ভঙ্গ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সবার সঙ্গে কথা বলে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাবে।

তিনি জানান, শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরতদের তাদের দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। আশ্বস্ত করেছেন, লিখিত দাবি পেলে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেবে সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি, জানান নাদেল।

নাদেল জানান, শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ আইনি কোন ঝামেলা যাতে না হয় সে দিকটিও দেখবেন।

বৈঠকে উপস্থিত আন্দোলনকারীরা সকালে সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন, উল্লেখ করেন নাদেল।

এরআগে শনিবার রাতেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই তারা (শিক্ষার্থীরা) অনশন প্রত্যাহার করুক, তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক। এখন যদি অনশনরত অবস্থাতেও বসতে চায় তাও করতে পারে। যেকোনো সমস্যার একমাত্র সমাধান আলোচনা। কাজেই আমরা আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে চাই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দ্বার সব সময়ই উন্মুক্ত।’

তার আগে শনিবার সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী। জানান, প্রয়োজনে তার প্রতিনিধিদল শাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। শিক্ষার্থীরা যখন কথা বলতে রাজি হবে তখনই প্রতিনিধি যেতে পারবে। পারিবারিক কারণে এখন তিনি নিজে সিলেটে যেতে পারছেন না বলে জানান মন্ত্রী।

এরও আগে শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঢাকায় এসে তার সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দিলে অসুস্থ ও মুমূর্ষু সহযোদ্ধাদের কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় যায়নি। এজন্যে তারা শিক্ষামন্ত্রীকে সিলেটে এসে তাদের অবস্থা দেখে যাওয়ার প্রস্তাব করে, অথবা ভিডিওকলে আলোচনার প্রস্তাব দেয়।

উল্লেখ্য, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। গত বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে নামেন শাবিপ্রবির ২৪ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরের দিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে এখন ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

উপচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শনিবার দুপুরে কাফনের কাপড় পরে ক্যম্পাসে মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। আর সন্ধ্যায় তারা গণঅনশনে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত