নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০৩:৩৪

অনশন ভাঙার অনুরোধ শিক্ষামন্ত্রীর

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। তবে শিক্ষার্থীদের মূল দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে এই তথ্য জানান মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনায় উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

অনশনরত একাধিক শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়। শনিবার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ১২৯ নম্বর কক্ষে বৈঠক শুরু হয়। রাত সোয়া দুইটার দিকে এ বৈঠক শেষ হয়।

বৈঠক শেষে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ভিডিও কনফারেন্সে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাদের বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রী আন্দোলনরত ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছেন তারা যেন অনশন ভেঙে আন্দোলন থেকে সরে যান। তিনি (শিক্ষামন্ত্রী) আলোচনায় প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি ধৈর্য সহকারে সবকিছু শুনেছেন।

নাদেল বলেন, রোববার শিক্ষার্থীরা যেন লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠান। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনশন ভাঙার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো কথা আসেনি। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, সবার সঙ্গে কথা বলে কাল (রোববার) আমাদের জানাবেন।

উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাদেল বলেন, বৈঠকে ভিসিকে ছুটি দেওয়া বা অপসারণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা আলোচনা করতে আগ্রহী, তবে অনশন ভাঙবেন না। তাদের এক দাবি, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ।

নাদেল জানান, শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরতদের তাদের দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। আশ্বস্ত করেছেন, লিখিত দাবি পেলে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেবে সরকার।

তিনি জানান, শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ আইনি কোন ঝামেলা যাতে না হয় সে দিকটিও দেখবেন।

বৈঠকে উপস্থিত আন্দোলনকারীরা সকালে সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন, উল্লেখ করেন নাদেল।

এদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা আলোচনা করতে আগ্রহী, তবে অনশন ভাঙবেন না। তাদের এক দাবি, উপাচার্যের পদত্যাগ।

এরআগে, রাত সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন। রাত একটার দিকে শাবিপ্রবির ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ১২৯ নম্বর কক্ষে মন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনা শুরু হয়।

আলোচনায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন- শাহরিয়ার আবেদিন, অপূর্ব, মীর রানা, সাব্বির, নাফিসা আঞ্জুম ইমু, রোমিও, উমর ফারুক, ইয়াসির সরকার, সাদিয়া আফরিন ও মোহাইমিনুল বাশার রাজ।

আলোচনার সময় বাইরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা- এক দুই তিন চার ফরিদ তুই গদি ছাড়, সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান এক হও এক হও, পতন পতন পতন চাই ফরিদের পতন চাই, এক দফা এক দাবি ফরিদ তুই কবে যাবি- বলে মুহুর্মুহু স্লোগান দেন।

উল্লেখ্য, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। গত বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে নামেন শাবিপ্রবির ২৪ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরের দিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে এখন ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

উপচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শনিবার দুপুরে কাফনের কাপড় পরে ক্যম্পাসে মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। আর সন্ধ্যায় তারা গণঅনশনে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত