নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০১:৩৪

অন্ধকারে ভিসি, অনশনে শিক্ষার্থী

আমরণ অনশনে একদল শিক্ষার্থী, অনশনরতদের একটা অংশ মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সেখানেও খাবার গ্রহণ করছে না তারা, আরেক দল উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাড়ির বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ কেটে দিয়ে অবস্থান নিয়েছে ফটকে। বাড়ির ভেতরে পুলিশ ছাড়া কারও প্রবেশের সুযোগ নেই। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ভিসি কার্যত অন্ধকারে।

দৃশ্যটা সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার থেকে একই স্থানে অনশন শুরু করেন ২৪ শিক্ষার্থী। পরেরদিন একজন শিক্ষার্থীর বাবা হার্ট অ্যাটাক করায় তাকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে, তবে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে গণ-অনশন। অনশনে যোগ দিয়েছেন নতুন আরও পাঁচজন।

গত ১৭ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকলেও উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসায় প্রতিদিনই শিক্ষক, কর্মকর্তা, পুলিশ ও সাংবাদিকরা যাওয়া-আসা করছিলেন। চালু ছিল তার বাসার সব জরুরি পরিষেবাও। তবে রোববার থেকে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায়ে অহিংস নানা কর্মসূচি পালনের পর ভিসি ও শিক্ষামন্ত্রীর তরফে ইতিবাচক কোন বার্তা না আসায় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে কর্মসূচি কঠোরের বার্তা।

ভিসিকে তার বাসভবনে অন্ধকারে রেখে রোববার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছে আন্দোলনকারীরা। পুড়ানো হয়েছে ভিসির কুশপুতুলও।

এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারকে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির নেতারা।

শনিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনো মীমাংসা হয়নি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের দাবি জানালেও মন্ত্রী এনিয়ে মন্তব্য করেননি, তবে তিনি আন্দোলনকারীদের অনশন ভঙ্গের অনুরোধ জানান। শিক্ষামন্ত্রী ও আন্দোলনরতদের এই আলোচনার মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা পালন করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

এর মধ্যে রোববার সংসদেও আলোচনা ওঠে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে। উপাচার্য ফরিদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তা অপসারণের আহ্বান জানান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। এদিকে ব্যাপক বিরোধিতার মধ্যেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সমর্থন পাচ্ছেন অধ্যাপক ফরিদ। সংগঠনের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ফরিদের পদত্যাগের যে দাবি তোলা হয়েছে, তা দেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের চক্রান্ত মনে করছে তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ফরিদ উদ্দিনকে ২০১৭ সালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। গত বছরের আগস্টে দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য পদে নিয়োগ পান তিনি। তার ছয় মাস না পেরোতেই এখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রবল চাপে রয়েছেন অর্থনীতির এই শিক্ষক।

রোববার সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসার বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্নের আগে বিকেলে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে। ওখানে তারা জানান, অনশনের পরও উপাচার্য (ভিসি) পদত্যাগ না করলে তাকে পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রাখা হবে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা প্রায় ১০০ ঘণ্টা ধরে অনশন করছেন। অথচ এখন পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের কোনো লক্ষণ নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা উপাচার্যকে পূর্ণ অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হবে। তখন তার বাসার জরুরি পরিষেবাও (পানি, বিদ্যুৎ) বন্ধ করে দেব আমরা। আর আজ থেকে পুলিশ ছাড়া কেউ তার বাসায় প্রবেশ করতে পারবেন না।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত