শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:২৪

ফের অনশনস্থলে হাসপাতাল ফেরত শাবির ৭ শিক্ষার্থী

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আমরণ অনশনকারত ৭ শিক্ষার্থী হাসপাতাল থেকে ফের অনশনরত স্থানে ফিরেছেন। বর্তমানে মেডিকেলে ভর্তি আছেন ১৩ জন।

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে মেডিকেল থেকে ফিরেন বলে জানান মুহাইমিনুল বাসার রাজ।

তিনি বলেন, আন্দোলনে অনশনরত শিক্ষার্থীরা যারা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন তারা একটু সুস্থতাবোধ করায় ডাক্তারের ছাড়পত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসছেন। তারা সুস্থতাবোধ করায় মেডিকেলে থাকতে চাচ্ছে না। তাই তারা একটু সুস্থ হলেই তারা ক্যাম্পাসে ফিরে আসছেন। যারা ফিরেছেন তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো না।

সর্বশেষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এতে মোট মোট ভর্তি রয়েছেন ১৩ জনে। বাকি ১৫ জন অনশনরত অবস্থায় উপাচার্য বাস ভবনের সামনে অবস্থান করছেন।

এর আগে, গতকাল বিকেল থেকে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকের সামনে মানবদেয়াল তৈরি করে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছেন উপাচার্য। সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ–সংযোগ। এতে ইন্টারনেটের সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উপাচার্যের বাসভবনে পুলিশ সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে যাতায়াতের সড়কে শিক্ষার্থীরা রাতভর অবস্থান করছিলেন। তবে বিদ্যুতবিহীন থাকতে হয়নি তাকে, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন এক শিক্ষক। এছাড়া গতরাতে মশাল মিছিল করে উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করে শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য, শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ। ১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আজ সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ জনে। এদিকে হতকাল ২৩ জানুয়ারি আরও চারজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন।

এর মাঝে উপাচার্য ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তবে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না। ২৩ জানুয়ারি দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের আবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে তা না হওয়ায় তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধের ঘোষণা দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত