নিজস্ব প্রতিবেদক:

২৫ জানুয়ারি, ২০২২ ২১:৫২

অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কর্মসূচি শুরুর সপ্তম দিনে মঙ্গলবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে তারা এ ঘোষণা দেন।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার আবেদিন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন জাহেদুল ইসলাম ও সাবরিনা মমতা।

এরআগে আন্দোলনরতদের একটি দল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে সমবেত হয়ে অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অনশন ভাঙার অনুরোধ জানান। তারা উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন চলবে বলে শপথও নেন। শিক্ষার্থীদের এই শপথ পড়ান মোহাইমিনুল বাশার রাজ।

এই শপথের পর অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়। অনশনকারীরা তৎক্ষণাৎ না-সূচক সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে কিছু সময় চান সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে। এসময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের পরস্পরকে জড়িয়ে এবং কেউ কেউ একা একা কান্না করতেও দেখা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে অনশনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ফরিদ উদ্দিন উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর তালেবানি কালচারে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করার পর বিভিন্ন তালেবানি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কে আলপনা আঁকা নিষিদ্ধ করেছিলেন। তবে কেন সেটি করা হয়েছিল, সেটি শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেননি। পরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে সড়কে আলপনা আঁকার দাবি আদায় করেছিলেন।

তারা বলেন, সন্ধ্যা সাতটার পর শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের না হওয়ার কড়াকড়ি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপর বের হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হতো। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার রাত আটটার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে মুক্তচিন্তার জায়গা, সেখানে শিক্ষার্থীদের ১৮-১৯ দিন ধরে গ্রন্থাগার বন্ধের সময় বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে প্রাক্তন পাঁচ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারের বিষয়ে বলা হয়, দেশের কোনো আইনে অনুজদের কর্মসূচিতে ‘ডোনেশন’ দেওয়া অপরাধ কিংবা বেআইনি, সেটি তাদের জানা নেই। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিষয়টি তাদের জানা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে নিন্দা জানান তারা। এ সময় অবিলম্বে নিঃর্শত মুক্তির দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া ওপরের নির্দেশে হলের ডাইনিং বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অনশনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, অনশনের সপ্তম দিনে এসে চিকিৎসা সহায়তা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি তারা কোনোভাবে আশা করেননি। যে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপদ মনে করেন না, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। এ জন্য তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ সে সময় সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছোড়ে। এ ঘটনায় পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অর্ধশত আহত হন। সে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন নামেন।

১৯ জানুয়ারি দুপুর ৩টা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। ২৩ জানুয়ারি আরও চারজন ও ২৪ জানুয়ারি একজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন।

এর মাঝে উপাচার্য ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সেইসঙ্গে অনশন ভাঙার অনুরোধও জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তবে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না, অনশনও চালিয়ে যাবেন। ২৩ জানুয়ারি রাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ২৮ ঘণ্টা পর সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালুও করেন তারা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত