হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি

০৯ জুন, ২০২২ ১৪:৪৯

পরিযায়ী পাখির আগমনে মুখরিত শাবিপ্রবি

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। ছোট ছোট টিলা আর সবুজ গাছ-গাছালিতে ঘেরা এ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে নজরকাড়ে যে কারোরই। প্রতি বছর শীত, বসন্ত ও বর্ষা ঋতুতে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যেরমাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমনপিপাসু মানুষকে মুগ্ধ করে করে তোলে নিমিষেই। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে অতিথি (পরিযায়ী) পাখির আগমনে সৌন্দর্যের নতুনমাত্রা যোগ করেছে শাবিপ্রবিতে। বর্তমানে সিলেটের হাওড়গুলোতে অতিরিক্ত পানি থাকায় অতিথি পাখিগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার ( ৮ জুন) ক্যাম্পাসের শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের পাশে, রেজিস্ট্রার ভবনের পাশের বিলগুলোতে সাঁ সাঁ করে উড়ে বসছে পরিযায়ী পাখিগুলো। এরপর বিলে হেঁটে হেঁটে খাবার অন্বেষণ করছে অতিথি পাখিগুলো। মাঝে মাঝে লম্বা ঠোটের দু’মাথায় শামুক নিয়ে খেতে দেখা গেছে। আবার কখনোইবা দলবেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছে। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর তাদের কলকাকলিতে ক্যাম্পাসে নতুন আবহ সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রত্যেক শাবিপ্রবিয়ানদের মনকে পুলকিত করে তুলছে।

বাংলাদেশে সাধারণত অক্টোবরের শেষ এবং নভেম্বরের শুরুর দিকে শীতের আগমন ঘটে। শীতের শুরুতেই উত্তরের সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং নেপাল, চীনের জিনজিয়াং ও ভারতসহ প্রবল শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে পাখিরা পাড়ি জমায় বাংলাদেশের মত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এছাড়া বর্ষার মৌসুমেও এসব পাখিগুলো নিরাপদ আশ্রয় ও খাবারের খোঁজে পাড়ি জমায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তবে সিলেটের বিভিন্ন হাওরে পাখিদের অভয়াশ্রম কেন্দ্র হলেও পাখির উপস্থিতি বাড়ার সাথে সাথে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে এসব পরিযায়ী পাখিগুলো। তাই এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সকলের দায়িত্ব মনে করছেন শাবিপ্রবিয়ানরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম আল শাহরিয়ার বলেন, বিভিন্ন মৌসুমে উত্তরের তুন্দ্রা অঞ্চল বরফাচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় পরিযায়ী পাখিগুলো বিভিন্ন দেশে চলে আসে। কিন্তু বিষটোপসহ পাখি শিকারিদের বিভিন্ন নিধনযজ্ঞের কারণে অন্যান্য পাখির হুমকির সম্মুখীন। এদের নিরাপদ আবাস ও বিচরণের ব্যবস্থার মাধ্যমে এই পাখি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।

তাহমিনা হক নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির আগমন একটি ভালো দিক। এতে ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির আগমন একটি গর্বের বিষয়। এতে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই অতিথি হয়ে আসা পাখিদের যেন কেউ ক্ষতি না করে সে দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বর্ষার সময় পোকামাকড় বেশি থাকায় অতিথি পাখিগুলো তাদের খাবারের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় বিচরণ করে। যেখানে তাদের পর্যাপ্ত খাবার ও চলাফেরা নিয়ে নিরাপত্তাবোধ করে সেখানে তারা অবস্থান করে। বৃষ্টির ফলে খাবার-দাবারের পর্যাপ্ত সুবিধা আর ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় নিরিবিলি পরিবেশ বিরাজ করছে তাই পাখিগুলো এখানে আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারীর সময় বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে অতিথি পাখি এসেছে। তাই যেখানে গাছপালা, পরিবেশ এবং আসা-যাওয়ায় নিরাপত্তাবোধ করে তারা সেখানে বিচরণ করছে। অনেক সময় অধিক নিরাপত্তা থাকলে তারা সেখানে স্থায়ীভাবে আবাসস্থল গড়ে তুলে। তাই পাখিগুলোকে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ করে দেওয়া সকলের দায়িত্ব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত