হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি

২৫ জুলাই, ২০২৩ ১৫:৪২

বুলবুলের মৃত্যুর এক বছর পার, পরিবারের হাল ধরেছে বড়বোন সোহাগী

গত বছর এ দিনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অভ্যন্তরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হয় লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। তবে একমাত্র ভরসার স্থল বুলবুল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ লক্ষ টাকার সহায়তায় পরিবারের হাল ধরেছে তার বড়বোন সোহাগী আক্তার।

এ বিষয়ে কথা হয় বুলবুলের বড়বোন সোহাগী আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের আদরের ছোট ভাই আমাদের কাছে নেই একবছর। গত বছর এ দিনে আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ভাইয়ের ৭ মাস আগে বাবাকে হারিয়েছি। আমাদের পরিবারের হাল ধরার কেউ ছিল না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে  আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে তা দিয়ে চেষ্টা করছি পরিবারের জন্য কিছু একটা করতে।

বুলবুলের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বুলবুল ছিল আমাদের সবার ছোট। তাকে সবাই অনেক আদর করত। সে আজ আমাদের কাছে নেই, তার ছেলে-মানুষী ও রেখে  যাওয়া স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে আমরা বেঁচে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমাদের অনুরোধ বুলবুলের স্মৃতির জন্য কিছু একটা তৈরি করে দিকে। ভাই তো চলে গেছে, এখন পরিবারের হাল ধরার কেউ নাই, তাই সরকার থেকে আমাদের জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। পরিশেষে বুলবুলের জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি।

এদিকে বুলবুলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লোকপ্রশাসন বিভাগ উদ্যোগে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আজ (মঙ্গলবার) বাদে আসর দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, আমাদের বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী বুলবুলের আমাদের কাছে নেই একবছর, তার স্মৃতিগুলো আমাদের এখনো নাড়া দেয়, গতকাল (সোমবার) তার ব্যাচের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল, মনে হচ্ছিল সে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি বলেন, আজ বুলবুলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। উপাচার্য মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন তার মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভাগের পক্ষ থেকে বড় করে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করতে, আয়োজনের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। আজ বাদে আসর দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে, এতে সবার উপস্থিতি কামনা করছি।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বুলবুলের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ৫০ লক্ষ ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল, সেটি ইউজিসির কাছে পাঠিয়ে এবং তার পরিবারকে সহযোগিতা করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি তার হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার আশ্বাস দেন উপাচার্য মহোদয়। আমরা বুলবুলের পরিবারের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখছি, তাদের খোঁজ খরব নিচ্ছি। 

বুলবুল হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম নিয়ে শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা দ্রুত বুলবুল হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ করার জন্য প্রশাসনকে তাগিদ দিচ্ছি। বিচার প্রক্রিয়া কি অবস্থায় আছে সবসময় খোঁজ নিচ্ছি। তার মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামী জেলে আছে। আশা করছি দ্রুত এ বিচার কার্যক্রম শেষ হবে।

বুলবুলের পরিবারকে সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বুলবুলের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের ৫০ লক্ষ টাকা যে দাবি ছিল তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে পাঠিয়েছি। তারা ব্যবস্থা করলে তা তার পরিবারকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তার পরিবারের জন্য আমাদের সমসময় সমবেদনা রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসের টিলাবেষ্টিত এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি, সৌরবাতি স্থাপন করে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গাজীকালুর টিলায় বান্ধবীর সাথে ঘুরতে গিয়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীর বুলবুল আহমেদ। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত