শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

৩০ আগস্ট, ২০২৩ ২১:৪৮

বিপদে পড়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, নবীনদের উদ্দেশ্যে শাবি উপাচার্য

বিপদে পড়লে ধৈর্য্য ধরতে হবে, বাবা-মা, শিক্ষক কিংবা সহপাঠীদের সাথে শেয়ার করতে হবে। নবীন শিক্ষার্থীদের বিপদে দিশেহারা হয়ে কোন ধরনের আত্মঘাতী কিংবা হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

বুধবার (৩০ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আয়োজিত ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন উপাচার্য।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি জঙ্গিবাদমুক্ত, র্যাগিংমুক্ত, ধূমপানমুক্ত, সুশাসন ও শিক্ষার্থী বান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণার মান অনেক ভালো। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নও এখন দৃশ্যমান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মাদক পরিহার করে পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোযোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই হতাশ হওয়া যাবে না।

নবীনদের উদ্দেশ্য উপাচার্য বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়। তবে তোমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। আমরা র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কোন সিনিয়র তোমাদের হলে কিংবা ম্যাসে ডাকলে তোমরা সেখানে যাবে না। গেলে তোমরা তাদের মতো অপরাধী হবে, শাস্তি পাবে। কেউ এমন ঘটনায় জড়িত হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার সাফল্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শাবিপ্রবি শিক্ষা ও গবেষণার জন্য উপযুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো গবেষণা করে, যেগুলো বিশ্বের স্বনামধন্য জার্নালে প্রকাশিত হচ্ছে। গত বছরও ৭০০ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এখানের শিক্ষকরাও শিক্ষার্থী বান্ধব, তারা সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকে।

এছাড়া শিক্ষার্থীরা যাতে যথাসময়ে পাস করে বের হতে পারে সেজন্যও আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষা নিয়ে ঠিক সময়ে (চার বছরে) পাস করে বের হয়ে তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। তাই কোন কোর্সে ড্রপ দেওয়া যাবে না, তা করলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়া যাবে না।

আবাসনের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের জন্য ৩টি, মেয়েদের জন্য ৩টি ও সংযুক্ত কিছু হল রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে থাকতে পারবে, থাকা খাওয়া নিয়ে তাদের কোন চিন্তা করতে হবে না। আরো হল চালু হলে কিছু দিনের মধ্যে শতভাগ মেয়ে শিক্ষার্থীরা হলে সীট পাবে, ছেলেরা ৮০ শতাংশ হলে থাকতে পারবে।

মাদক ও ধূমপান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ধূমপান ও মাদকমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে মাদকাসক্তদের কোন জায়গা নেই। প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ মাদক বা ধূমপান করতে পারবে না। আমরা তোমাদের ডোপ টেস্ট করে ভর্তি করিয়েছি। পরবর্তীতে যাদের সন্দেহজনক মনে হবে, তাদেরকে ডোপ টেস্ট করা হবে। আসক্ত হলে তাদেরকে রিহ্যাবে যেতে হবে অন্যথায় শাস্তির আওতায় আসতে হবে। এ নিয়ম শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সামনের দিনে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

ক্যাম্পাসের সবুজায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসকে সবুজ করতে ইতিমধ্যে আমরা ৭০ হাজার গাছ লাগিয়েছি, সামনে আরো ৩০ হাজার লাগানো হবে। ক্যাম্পাসে একটা শীতল পরিবেশ বিরাজ করে। এছাড়া ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে হবে। শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা যাতে স্বাস্থ্যসম্মত ও সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার পায় আমরা সে ব্যবস্থাও করছি, যা আগে ছিল না।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সফলভাবে ২০২০-২১ সেশন থেকে তিনটি সেশনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে পেরেছি। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ সবকিছু প্রশ্নবিদ্ধ ছাড়াই সম্পন্ন করতে পেরেছি। এর গর্বিত অংশীদার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা৷ তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে শাবিপ্রবির এ উদ্যোগ সফলভাবে শেষ হয়েছে, তোমরাও এর গর্বিত অংশীদার। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

পরিশেষে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা যেখানে যাচ্ছে অনেক ভালো করছে। আমরা কোথাও শুনেনি আমাদের শিক্ষার্থীরা খারাপ করছে। তাই তোমাদের নিজেদেরকেও যোগ্য করে গড়ে তোলতে হবে, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে, নিজেদের মধ্যে দেশপ্রেম থাকতে হবে। এর জন্য তোমাদের যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদের সবধরনের সুযোগ সুবিধা দিবে। তোমাদের কাজ হবে এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। এই সময়ে তোমাদের কাছে অনেক কিছু হাতছানি দিবে, তবে এসন ফাঁদে না পড়ে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা চাই তোমরা আমাদের ছাড়িয়ে যাও, দেশের জন্য কাজ কর, দেশের মঙ্গলে কাজ কর। এছাড়া ভবিষ্যতেও সফলতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক কথা বলেন তিনি।

এদিন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শাবিপ্রবিতে ২০২২-২৩ সেশনে ভর্তিকৃত স্নাতক প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়। সকালের সেশন 'এ' ইউনিট এবং বিকালের সেশনে 'বি' ও 'সি' ইউনিটের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত হয়।

উভয় সেশনে শাবিপ্রবির ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার সরকার এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিনা পারভীন।

এছাড়াও বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের আগস্টে শহীদদের স্মরণ করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর সাংস্কৃতিক সংগঠন শিকড়ের পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া, শিক্ষার্থীরা পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। এরপর নবীনদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাবিপ্রবির ২০২২-২৩ ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল হাকিম।
 
নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনূভুতি ব্যক্ত করেন গণিত বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী প্রতীক পনতীর্থ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী অর্পা জামান, এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক বিষয়ের উপর একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত