
১৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:১১
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ২৬ পদের মধ্যে ২৪টিতে জিতেছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। মাত্র ১টি পদে জয় পেয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল; আর অপরটিতে জয় পেয়েছে ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থী।
বুধবার ভোট শেষের ১২ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের জনাকীর্ণ মিলনায়তনে ফল ঘোষণা করা হয়।
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি হিসেবে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি; যিনি চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য। তিনি পেয়েছেন ৭,৯৮৩ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় ভোট পেয়েছেন ৪,৩৭৪টি।
জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন ইতিহাস বিভাগেরই ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাঈদ বিন হাবিব। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের এই সাহিত্য ও মানবাধিকার সম্পাদক পেয়েছেন ৮,০৩১ ভোট। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ছাত্রদলের মো. শাফায়াত হোসেন; পেয়েছেন ২,৭২৪ ভোট।
শীর্ষ এ দুই পদে বিপুল ব্যবধানে জয় পেলেও শিবিরের হাতছাড়া হয়েছে এজিএস পদ; যেখানে জয় পেয়েছেন ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক। তিনি পেয়েছেন ৭,০১৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের সাজ্জাত হোছন মুন্না পান ৫,০৪৫ ভোট।
এর বাইরে সহ-খেলাধূলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন তামান্না মাহফুজ স্মৃতি; যিনি ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থী।
গত বছরের ৫ আগস্টের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ হিসেবে ছাত্রলীগ নির্বাচনে ছিল না, এমনকি ছাত্রলীগ নেতারা লেখাপড়াও করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে মূল লড়াই ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে ছাত্রদল ছাত্রশিবিরের ধারেকাছেও যেতে পারেনি।
১৯৯০ সালের সবশেষ নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্যানেল থেকে এজিএস পদে জয়লাভ করা ছাত্রদল এবার এককভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে জেতার লড়াইয়ে নামলেও সফল হতে পারেনি। সেবারের মত এবারও শুধু এজিএস পদই পেয়েছে।
এবারের চাকসু নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে ১৩টি প্যানেলে ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ভিপি, জিএসসহ কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ৪১৫ জন। এর মধ্যে পুরষ ৩৪৮ এবং নারী ৪৭ জন। তবে শিবিরের সঙ্গে ছাত্রদল ছাড়া অন্য কোনো প্যানেলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীতাই গড়ে তুলতে পারেনি।
অপরদিকে ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলের সংসদ নির্বাচনে ২০৬ পদে প্রার্থী ছিলেন ৪৯৩ জন। নয়টি ছাত্র হলে মোট প্রার্থী ৩৫০ জন, পাঁচ ছাত্রী হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১২৩ জন।
১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে; আর সবশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে।
১৯৭০ সালের প্রথম চাকসু নির্বাচনে ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও আবদুর রব। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ হন চাকসু জিএস আবদুর রব।
১৯৭২ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা ভিপি এবং জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না জিএস নির্বাচিত হন।
১৯৭৪ সালে তৃতীয় নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের এস এম ফজলুল হক ভিপি এবং গোলাম জিলানী চৌধুরী জিএস নির্বাচিত হন।
১৯৭৯ সালে চতুর্থ নির্বাচনে ভিপি হন জাসদ ছাত্রলীগের মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং জিএস হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের জমির চৌধুরী।
১৯৮১ সালে পঞ্চম নির্বাচনে ভিপি ও জিএস হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার।
১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রার্থী জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ভিপি নির্বাচিত হন। জিএস হয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আজিম উদ্দিন আহমদ।
আপনার মন্তব্য