দোদুল খান

৩০ জুলাই, ২০১৬ ২৩:২৯

এমসি কলেজ : আলোর মুখ দেখছে পুনর্নির্মিত ছাত্রাবাস

ঐতিহ্যের মুরারি চাঁদ কলেজ (পর্ব-১)

আধপাকা আসাম কাঠামোয় পুনর্নির্মাণ শেষে চালুর অপেক্ষায় মুরারি চাঁদ কলেজ ছাত্রাবাস

৮ জুলাই, ২০১২ সালের রাত। ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যকার সংঘর্ষে শতবর্ষী মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের ৯৫ বছর পুরনো ছাত্রাবাসে করা হয় অগ্নিসংযোগ। আগুনে ভস্মীভূত হয় ছাত্রাবাসের তিনটি ব্লকের ৪২টি কক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো ৭০টি কক্ষ। সে রাতেই বন্ধ ঘোষণা করা হয় ছাত্রাবাস। তারপর কেটে গেছে ৪ বছর, অবশেষে আলোর মুখ দেখছে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস।

কিছুদিনের মধ্যেই ছাত্রাবাসের নবযাত্রা শুরু হবে এবং আবাসিক শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে উঠবে বলে জানিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ জানান, ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে শেষ হয় ছাত্রাবাসের পুড়ে যাওয়া ব্লকগুলোর সংস্কার কাজ। তারপর গ্যাস সংযোগ সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যায় ছাত্রাবাসের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। অবশেষে সব ঝামেলার অবসান হয়েছে। শীঘ্রই প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে ছাত্রাবাসটি।

কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর ছাত্রাবাস সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ছাত্রাবাসের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের আদলে ৪ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ কাজ সম্পন্নের দায়িত্ব গ্রহণ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর নবনির্মিত ছাত্রাবাসের উদ্বোধন করেন মন্ত্রীদ্বয়।

এরপর কেটে গেছে প্রায় ২১ মাস। নবনির্মিত ব্লকগুলোসহ পুরাতন ব্লকগুলোতে বাসা বাধে পোকামাকড়, গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয় গোটা ছাত্রাবাস এলাকা। আর চালু না হওয়ার পেছনে প্রশাসনিক জটিলতা ছাড়াও মূল কারণ হয়ে দাড়ায় গ্যাস সংযোগ, যা গ্যাস বিল অনাদায়ের কারণে বিচ্ছিন্ন করে দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

মাত্র ৯ লক্ষ টাকার গ্যাস বিল প্রদানে এত বিলম্বের কারণ সম্পর্কে কিছু জানায়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ, তবে কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, গত জুন মাসে বকেয়া গ্যাস বিল পরিশোধের মাধ্যমে পুনরায় গ্যাস সংযোগ নেয়ায় সকল জটিলতার অবসান হয়েছে।

এদিকে ছাত্রাবাসে ছাত্র ভর্তির ব্যাপারে জুন মাসে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। গত ২০ জুলাই আবেদনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ছাত্রাবাসের ৬টি ব্লকে মোট ২৪৪টি আসনের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৪শ’ আবেদন জমা পড়েছে। এখন শেষ মুহূর্তের বাছাই চলছে বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

ছাত্রাবাস চালুর জন্য কলেজের সহকারি অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিনকে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নতুন দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ।

সিলেটের সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সবুজে ঘেরা মুরারি চাঁদ কলেজ নগরীর টিলাগড়ে অবস্থিত। ১৮৯২ সালে শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশ চন্দ্র রায় তার পিতামহ মুরারি চাঁদের নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করেন এ কলেজ। ১৯২১ সালে কলেজের পাশে নির্মাণ করা হয় কলেজের প্রথম ও একমাত্র ছাত্রাবাসটি। ছাত্রাবাস কমপ্লেক্সে ‘আধপাকা আসাম’ কাঠামোর ৬টি ব্লক ছিল, যার মধ্যে তিনটি ব্লক আগুনে পুড়ে যাওয়ায় পুনর্নির্মাণ করা হয়। আর ছাত্রদের দাবির মুখে এ পুনর্নির্মাণকাজে বজায় রাখা হয় কলেজ ছাত্রাবাসের প্রাচীন নির্মাণ শৈলী।

ছাত্রাবাসে আসন বরাদ্দ পেতে আবেদন করা কলেজের গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু বিশ্বাস বলেন, “দীর্ঘ চার বছর পর কলেজের ছাত্রাবাস চালু হচ্ছে, এ খবরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। যে সব শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল, বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকা সম্ভব হয় না, তাদের জন্য ছাত্রাবাস সুবিধা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা আশাবাদী, কোন রকম রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াই ছাত্রদের আসন বরাদ্দ দেয়া হবে”।

কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাসের ৬টি ব্লকে সর্বমোট ২৪৪ জন শিক্ষার্থীর আসন রয়েছে বলে জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, “এবার আবাসিক শিক্ষার্থী নির্বাচনে কোন পক্ষপাতিত্ব হবে না। সবরকম দলীয় প্রভাবও থেকে মুক্ত থেকেই আসন বরাদ্দ দেয়া হবে”।

তিনি বলেন, “আসন বরাদ্দসহ সকল প্রক্রিয়া শীঘ্রই শেষ হবে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই চালু হবে মুরারি চাঁদ কলেজের পুনর্নির্মিত একমাত্র ছাত্রাবাসটি”।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত