দোদুল খান

০২ আগস্ট, ২০১৬ ০০:১০

১৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য এমসির ছাত্রাবাসে ৩৪৪ আসন

ঐতিহ্যের মুরারি চাঁদ কলেজ- (পর্ব-৩)

সিলেটে সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মুরারি চাঁদ কলেজ। ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন নিজের অবস্থান ধরে রাখে কলেজটি। সিলেটে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন শিক্ষার্থীদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানের তালিকার শীর্ষে রয়েছে মুরারি চাঁদ কলেজ।

নগরীর উপকণ্ঠে টিলাগড় এলাকায় সবুজে ঘেরা মুরারি চাঁদ কলেজ ১২৪ বছর ধরে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখার পরও সাম্প্রতিক সময়ে পারিপার্শ্বিক নানা সমস্যায় জর্জরিত। আর এ সমস্যার মধ্যে অন্যতম, শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা।

এ বিদ্যাপীঠে প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত থাকলেও আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ৩৪৪টি। এর মধ্যে ছাত্রাবাসে ২৪৪ আসন ও ছাত্রী নিবাসে রয়েছে ১০০। ২০১২ সালের ৮ জুলাই পুরুষ ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চার বছর ধরে বন্ধ থাকার পর পুণসংস্কার শেষে কিছুদিনের মধ্যে আবারো খুলছে ছাত্রাবাস। এ লক্ষ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

চার বছর পর ছাত্রাবাস খোলার সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আনন্দিত হলেও একই সাথে অপ্রতুল আবাসন সমস্যার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র ৩৪৪টি আবাসিক আসন থাকায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী এমরাজ চৌধুরী বলেন, “আমি আগে ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলাম। অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর থেকে বাইরে মেসে থাকতে হচ্ছে। আগে হাজার তিনেক টাকায় হোস্টেলে থেকে কলেজে পড়াশোনা চালাতে কোন সমস্যা হতো না, কিন্তু বাইরে থাকতে গিয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ টাকায়ও পড়াশোনা চালানো সম্ভব হচ্ছে না”।

তিনি বলেন, “অর্থনৈতিকভাবে যারা অসচ্ছল, তাদের পক্ষে ছাত্রাবাসের বাইরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বসবাস করে পড়াশোনা চালানো খুব কঠিন। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য বিষয়টি প্রায় দুঃসাধ্য। এক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি আবাসন সমস্যার সমাধানে বড় পরিসরে উদ্যোগ গ্রহণ করে তবে তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী হবে।

মুরারি চাঁদ কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৮ জুলাই কলেজের ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর আবাসন সংকট নিরসনে আরো দৃঢ় উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাত্রাবাস পুনর্নির্মাণ শেষে পুনরায় চালুর সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও ছেলেদের জন্য আরো ১০০টি আসনের ছাত্রাবাস এবং মেয়েদের জন্য ১০০টি আসনের ছাত্রীনিবাস নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। কয়েক মাসের মধ্যেই এ দুটি আবাসন ব্যবস্থা চালু হলেও সব মিলিয়ে ৫৪৪ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।

মুরারি চাঁদ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুব আলম বলেন, “সুপ্রাচীন মুরারি চাঁদ কলেজের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন সংকট। দেশের প্রাচীন দুটি প্রতিষ্ঠান ‘আনন্দমোহন কলেজ’ ও ‘কারমাইকেল কলেজ’ এর প্রতিটিতেই কমপক্ষে ২হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ মুরারি চাঁদ কলেজের নতুন দুটি হোস্টেল চালু হলে সবমিলিয়ে মাত্র ৫৪৪জন শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা হবে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমাদের দাবি, ছোট পরিসরে আবাসন ব্যবস্থা না বাড়িয়ে, একবারে  বৃহৎ পরিসরে বড় হোস্টেল নির্মাণ করে আবাসন সংকটের স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করা হোক”।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, “আবাসন সমস্যার সমাধানে কলেজ কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। তবে একসাথেই বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব না, বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কারণে। আপাতত পুরাতন ছাত্রাবাসটি চালুর সাথে সাথে আরেকটি ১০০ আসনের ছাত্রাবাস ও আরো ১০০টি আসনের ছাত্রীনিবাসের কাজ প্রায় শেষের পথে। ধীরে ধীরে ছাত্রাবাসের আবাসন সংকটের সমাধান করা হবে”।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত