শাবি প্রতিনিধি

১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৯:২৬

শাবির হলে মধ্যরাতের অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তিনটি আবাসিক হলে রোববার রাতের অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অনেকে এই অভিযানকে সাম্প্রতিক 'প্রশ্ন জালিয়াতির ঘটনা আড়াল দেওয়ার প্রচেষ্টা' বলে উল্লেখ করেছে।

অভিযানের বিষয়টি আগে থেকেই কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা জানতেন ফলেও অভিযোগ ওঠেছে। ফলে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি বলে দাবি অভিযোগকারীদের।

রোববার রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে সিলেট মহানগর পুলিশের একটি ইউনিট এই অভিযান চালায়। সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার ফয়সাল মাহমুদের নেতৃত্বে  দু'ঘন্টাব্যাপী এ অভিযানে জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

ফয়সাল মাহমুদ জানান, অভিযানে শাহপরান হলের ৪২৬ নম্বর কক্ষ থেকে ৪২ টি জিআই পাইপ, ৫ টি দেশীয় রামদা, ৩টি রড উদ্ধার করা হয়েছে।  বঙ্গবন্ধু হল থেকে ২৭ টি জিআই পাইপ, ১০ টি রড ও সৈয়দ মুজতবা আলী হল থেকে কয়েকটি রড উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে অধিকাংশই শাহপরান হলের ৪২৬ নম্বর কক্ষ থেকে পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। তবে এ সময় কাউকে আটক করা যায় নি বলে জানান ফয়সাল মাহমুদ।

অভিযান নিয়ে প্রশ্ন : এদিকে অভিযানের পরপরই অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গভীর রাতের অভিযানে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক ঘুম থেকে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকেই ওই সময় বাড়িতে চলে যাওয়ায় কক্ষের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে পুলিশ এবং প্রক্টরিয়াল কমিটি। তালা ভেঙে প্রবেশের পর কোন কোন কক্ষে আর তালা মারা হয়নি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা ।

এছাড়া অতর্কিত অভিযানের বিষয়টি আগে থেকেই ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা জানতেন বলে বলে অভিযোগ ওঠেছে। ফলে আগেই আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র সরিয়ে ফেলা হয়। এতে করে অভিযানে উদ্ধার হয়নি কোন আগ্নেয়াস্ত্র।

অপরদিকে, অভিযানের পরপরই কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীকে রড, পাইপ, লাঠি নিয়ে বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায় বলে জানান হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ : অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রলিগ নেতারাও এই অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ এ ঘটনাকে সার্কাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সহ-সভাপতি নূরা আলম লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না! ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সাথে জড়িত আলামিনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাময়িক বহিষ্কার করেছে বল তিনি অভিযোগ করেন।

সাংগঠনিক সম্পাদক তৌকির আহমেদ লিখেছেন, শাবিপ্রবি প্রশাসন পুরাই গ্রেট আমরা সবাই স্টুপিড! প্রসঙ্গ: জালিয়াতি এবং প্রশাসনের মৌনতা! তিনি বলেন, প্রশাসন অবশেষে হল রেইড(অভিযান) দিয়েই তাদের ক্ষমতার নির্যাস দেখাল!

হাফিজ আল আসাদ নামে এক শিক্ষার্থী লিখেন, অনেক দিন ধরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতি বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের মুখে প্রশাসনের প্রথম পদক্ষেপ গভীর রাতে হল তল্লাশির নামে সারা রাত সার্কাস। প্রাপ্তি : আজকে অনেক পরীক্ষার্থীর ড্রপ। একের পর এক যে সার্কাস চলতেছে এ যেন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ভূলণ্ঠিত করার মহড়ায় নেমেছি। এ সমস্যা শাবি প্রহসনের প্রশাসন।

সুব্রত দেব নাথ লিখেছেন, জালিয়াতির আন্দোলন করায় প্রশাসন ক্ষেপেছে। তাই হলে অভিযান চালিয়ে প্রতিশোধ। সাঈদ ইশতিয়াক বলেন, আল আমিন জালিয়াতি চক্রের একটা অংশ। তার উপর দায় দিয়েই প্রশাসন পার পেতে চাচ্ছে। জালিয়াতির ঘটনায় আগের দিন(১১ ডিসেম্বর) আল আমিনকে সাময়িক বহিষ্কার করে প্রশাসন। এরপরই মধ্যরাতে অভিযান চালানোয় জালিয়াতির ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত ও মূল হোতাদের বাচানোর চেষ্টা বলে অভিহিত করেন ছাত্রলীগ নেতারা।

সুমন সরকার লিখেন,  রাত দু'টা-প্রক্টরিয়াল বডির পুলিশী অভিযান। এটা কি তাদের প্রতিশোধ-যে আমরা ভর্তি জালিয়াতি এবং আমাদের স্টুপিড বলার প্রতিবাদ করায়। তিনি বলেন,  যতক্ষণ পর্যন্ত মূল হোতা বের না হবে কণ্ঠস্বর নিচু করবনা।

শ্বাশ্বত দাশ মান্না লিখেন, রাত ২ টার পর,হলে পুলিশ নিয়ে ঢুকে- ছাত্রদের রুমের দড়জায় লাথি মেরে ঘুম থেকে (তাও,পরীক্ষার সিজনে) তুলে পুলিশি রেইড দেওয়া। ছাত্রদের নিজ রুমের ভিতর থেকে বের হতে না দিয়ে, সবাইকে হলবন্দী রাখা। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে যাওয়া ছাত্রদের রুমের তালা ভেঙে রুমে তল্লাশী আবার সেই রুমের দড়জা খোলা রেখেই চলে যাওয়া। এসব নাকি হচ্ছে ছাত্রদের নিরাপত্তার জন্য। প্রশাসন এর সে কি দায়িত্ববোধ! ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের বাইকের ধাক্কায় আমাদের ছাত্রী আহত হয়। ক্যাম্পাসের কোন সীমানা প্রাচীর নেই যার যখন ইচ্ছা ঢুকছে বাহির হচ্ছে। ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষকের বাইক চুরি হয় আর শিক্ষার্থী কোন ছাড়। হায়রে আমার নিরাপত্তা রে। কাল দেখা যাবে কয়েকটা পানির পাইপ, ক্রিকেট খেলার স্টাম্প আর মশারির স্ট্যান্ড দেখিয়ে বলা হবে ভয়ঙ্কর অস্ত্র উদ্ধার। এরচেয়ে ভয়ঙ্কর একটা অস্ত্র যে জাগিয়ে দিয়ে গেলো টেরই পেলো না। এগুলা কি প্রশাসনের সার্কাস, নাকি এটা তাদের প্রতিশোধ-যে আমরা ভর্তি জালিয়াতির বিচার চেয়ে আন্দোলন করেছি, বাস অবরোধ করেছি?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত