রাবি প্রতিনিধি

১৩ এপ্রিল, ২০১৭ ১৭:২২

বর্ষবরণের জন্য প্রস্তুত রাবি

আগামীকাল বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। পুরাতন সবকিছুকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে নব উল্লাসে মেতে উঠবে ১৬ কোটি বাঙালির প্রাণ। সকল জরা-জীর্ণ, ব্যর্থতা-হতাশা দূর করবে বাঙালি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পহেলা বৈশাখ উদযাপন ১৪২৪ উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান  নানারকম কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের পৃথক বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের জন্য স্থান নির্ধারণ সম্পন্ন হয়েছে। মঞ্চসজ্জা, ব্যানার, ফেস্টুন তৈরির কাজও প্রায় শেষ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙালির ঐতিহ্য, কৃষ্টিকে তুলে ধরতে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন জিনিসপত্র। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য চলছে রিহার্সেল। সব মিলিয়ে বর্ষবরণে মুখিয়ে আছে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়।

বরাবরের মতো এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের মূল আয়োজন থাকছে চারুকলাকে ঘিরে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গোটা রাজশাহীবাসী পহেলা বৈশাখে ছুটে আসেন চারুকলা চত্বরের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলায়। উপভোগ করেন চারুকলার বিভিন্ন আয়োজন।

বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে চারুকলায় গিয়ে দেখা যায়, হাসি-গান আর আড্ডায় বৈশাখ উদযাপনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করছে। তাদের কেউ কেউ বানাচ্ছে বাঘ, হাতি, ঘোড়া, পেঁচার মুখোশ। পাশে অন্য আরেকটি দল তৈরি করছে বিশাল আকৃতির ‘গিরগিটি’। জিজ্ঞেস করে জানা যায়, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার অগ্রভাগে থাকবে এই ‘গিরগিটি’। যার মধ্য দিয়ে বিশেষ বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানালেন আয়োজকরা।

গিরগিটি তৈরিতে ব্যস্ত এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমাদের তরুণ প্রজন্ম এখন পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছে। সারা বছর তারা বিদেশি বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে  যাচ্ছে। তবে বাঙালি কৃষ্টি-সংস্কৃতি তারা ভুলতে পারে না। বৈশাখ এলে তারা গিরগিটির মত রং পাল্টে মিলিত হয় একই আবাহনে। এটা বাঙালি সংস্কৃতির নিজস্বতা ও শক্তিমত্তা প্রকাশ করে। ‘গিরগিটি’ প্রতীকের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতিতে ফিরে আসার বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হবে।

পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল মোমেনীন চৌধুরী জানান, চারুকলা অনুষদের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এখন চলছে শেষ ভাগের কিছু কাজ। তবে তিনি বলেন পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে উৎসব আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব হত।

তিনি বলেন, এবার পহেলা বৈশাখ উদযাপনে মাত্র তিন লক্ষ টাকা বাজেট করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান স্পন্সর হয়ে এক লক্ষ টাকা দিচ্ছে। বাকিটা চারুকলা অনুষদকে বহন করতে হচ্ছে। অথচ মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ বিশাল আকৃতির গিরগিটি তৈরি করতে লক্ষ টাকার মত ব্যয় হচ্ছে। এত অল্প পরিমাণ অর্থ দিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পহেলা বৈশাখের আয়োজন বেশ কষ্টসাধ্য বলে জানান তিনি।

চারুকলা অনুষদ এবারও তিন দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করেছে। প্রথম দিন সকাল ৮টায় সঙ্গীত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হবে। পরে সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা। দুপুর আড়াইটায় থাকবে অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সমবেত সঙ্গীত, লোক সঙ্গীত ও বাউল সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃতি, হরবোলা, অভিনয় ও বাঙালী ফ্যাশন শো।

আর দ্বিতীয় দিনে বেলা ৩টায় সুন্দরম আবৃত্তি গোষ্ঠীর ও চারুকলার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় নৃত্য, আবৃত্তি ও অভিনয়। বিকেল ৫টায় সমান্তরাল ও অন্যান্য গোষ্ঠীর পরিবেশনায় ব্যান্ড সঙ্গীত অনুষ্ঠান। তৃতীয় দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় চারুকলার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা এবং ‘আঁধারের মুসাফির’ যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা যায়।

এদিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, নাট্যকলা বিভাগ, সঙ্গীত বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নানা আয়োজন হাতে নিয়েছে।

এদিকে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেজন্য গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওইদিন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে বলে প্রশাসন সূত্র জানা গেছে। পহেলা বৈশাখের দিনে বেশ কিছু নির্দেশনাও  দিয়ে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পহেলা বৈশাখে ক্যাম্পাসে যানবাহন প্রবেশে থাকবে কড়াকড়ি। এছাড়া বিকেল ৫টার মধ্যে সকলকে অনুষ্ঠান শেষ করে ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে।

অন্যদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৪ দিনেও নতুন ভিসি, প্রো-ভিসি নিয়োগ না হওয়ায় এবার পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক ছাড়া উৎসব করতে হবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক বলেন, প্রতিবছর মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভিসি, প্রো-ভিসি। তাদের উপস্থিতিতে উৎসব সমৃদ্ধ হয়, ভাব-গাম্ভীর্য থাকে। তাঁরা না থাকায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন কিছুটা হলেও ভাটা পড়বে।

বর্ষবরণের দিন সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের নেতৃত্বে সকল বিভাগ মিলে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। “মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা” মর্মবাণী ধারণ করে ঐক্য ও অসাম্প্রদায়িকতার ডাক দিয়ে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত