রাবি প্রতিনিধি

১৫ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:৫৮

রাবিতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

মাথায় গামছা, গায়ে হরেক রঙের পাঞ্জাবি আর মেয়েদের পরনে লাল, সবুজসহ নানা রঙের শাড়ী। সবাই গাইছে, নাচছে ঢোলের তালে তালে আর বাঁশির সুরে সুরে, সকল কিছু ভুলে প্রাণের আনন্দে। কেউ আবার পালকিতে করে নতুন বউকে বাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে বউ বাইরে উঁকি মারছে। কেউবা গরুর গাড়ি কিংবা মহিষের গাড়িতে করে চলছে রাস্তাকে ছাপিয়ে আনন্দ সুরে। নানা রকম মুখোশ আর বেলুন যেনো না থাকলেই নয়।

পুরাতনকে ভুলে, নতুন বর্ষকে বরণ করতে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে গ্রামীণ-বাঙলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে উঠিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। আর এভাবেই নতুন বাংলা সন-১৪২৪ কে বরণ করে নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতি বারের মতো এবারও আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চারুকলা অনুষদ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চারুকলার সামনে থেকে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাজশাহীর সবচেয়ে বড় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় মূল আকর্ষণ ছিল ১৫০ ফিট দৈর্ঘ্যরে বর্ণচোরা গিরগিটি। প্রথমবারের মতো ছিল অশুভ শক্তি দূর করার প্রত্যায় নিয়ে আনা হয় ৮টি পাখা। এছাড়াও ছিল ১০০টি মুকুট ও ৩০টি ব্যতিক্রমধর্মী মুখোশ। বিকেলে অনুষদটি সমবেত সঙ্গীত, লোকসঙ্গীত, বউলসঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, হরবোলা ও অভিনয়ের আয়োজন করেছে।

এদিকে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে বসেছে বৈশাখী মেলা। বিক্রেতারা নানা ধরনের দ্রব্যের ডালি সাড়িয়ে রেখেছেন। ক্রেতারা আসছেন দেখছেন এবং পছন্দসই জিনিস কিনছেন। এখানে পাওয়া যাচ্ছে, মাটির তৈরি পুতুল, গামছা, মেয়েদের প্রসাধনী, হাত-পাখা ইত্যাদি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর সায়েন উদ্দিন আহমেদ সকালে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢাকে বাড়ি দিয়ে বর্ষবরণ উদ্বোধন করেন। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছাড়াও স্থানীয় লোকজনও মেলা দেখতে এসেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মেলা দেখতে আসা আবুল কালাম বলেন, আগে অনেক শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের নববর্ষ পালনের কথা। তাই এবার আসলাম। খুবই ভালো লাগছে।

পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক হাসান বলেন, আমরা নিজেদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারছি না। বাঙালিয়ান সেই ঢোল-তবলার গান আর এখন নেই। সেই জায়গা দখলে নিয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গান।

এবারই ক্যাম্পাসের শেষ বাংলা নববর্ষ পালন করা দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ আহমেদ বলেন, আজকের দিনটা আমার বেশ ভালো কেটেছে। তবে ভালো কাটলেও এটাই আমার ক্যাম্পাসের শেষ নববর্ষ উদযাপন। এই দিনটিকে বেশ মিস করবো।

প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসে পয়লা বৈশাখ পালন করা গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ বলেন, ভালোই লাগল। অনুষ্ঠানগুলোও বেশ ভালো লেগেছে।
পহেলা বৈশাখের অনুভূতি জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সুমান্ত বলেন, অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ হওয়ায় তেমন ভালো লাগেনি। অনুষ্ঠান কী আর সন্ধ্যে ছাড়া জমে!

এদিকে প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাম্পাসের সকল অনুষ্ঠান ৫টার মধ্যে শেষ করার কথা থাকায় সন্ধ্যার আগেই শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর মোজিবুল হক আজাদ খান বলেন, প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তার ফলে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

ইতিহাস বিভাগরে শিক্ষক প্রফেসর চিত্তরঞ্জন মিশ্র তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, এটি আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ মহল এই উৎসবকে বাধা দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মীয় লেবাস দিয়ে তারা বলছে এটা করা যাবে না সেটা করা যাবে না তাদের বলতে চায়, পহেলা বৈশাখ হলো বাঙালির জীবনের একটি অংশ, সার্বজনীন উৎসব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত