আশরাফ আরমান

১৫ জুন, ২০২০ ২০:৩১

ক্রীড়াঙ্গনেও সরব ছিলেন কামরান ভাই

মনে পড়ে গেলো ২০০৯ সালের সেই প্রথম মেয়র কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কথা। সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনে নিজের অবদান তুলে ধরতে মেয়র কামরান চালু করেন "মেয়র কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট"। ২৭ টি ওয়ার্ডের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সফল সুন্দর সমাপ্তি ঘটে প্রথম আসরের। স্থানীয় ও দেশ বিদেশের তারকা ক্রিকেটাররা অংশগ্রহণ করেন এ টুর্নামেন্টে। ২০০৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিলেটের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ফ্লাডলাইটে আলোতে অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল ম্যাচটি। প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক দর্শক উপভোগ করেন ১ম মেয়র কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের এই ম্যাচ। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই ম্যাচের আম্পায়ারিং করার।

তারপর নিয়মিত হতে চললো মেয়র কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। পাশাপাশি যোগ হলো মেয়র কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট।

সিলেটের অন্যান্য অনেক ক্ষেতের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও সরব ছিলেন সদ্য প্রয়াত সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। নিজে ক্রীড়ামোদী ছিলেন। একাধিকবার ব্যাট-প্যাড পরে ক্রিকেট মাঠে কিংবা প্রিয় দল আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে ফুটবল খেলায় অংশ নিতে দেখা গেছে তাকে।

সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনে কামরান ভাইয়ের সরব উপস্থিতি ফুটবলার-ক্রিকেটারদের বেশ উৎসাহ জোগাতো। ক্রীড়াঙ্গনের সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন কামরান ভাই। তিন মৌসুম নিয়মিত এই টুর্নামেন্ট চালু থাকলেও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক আর সেটার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেননি। খেলাধুলা কে বড় বেশী ভালবাসতেন কামরান ভাই। আমার মনে আছে অলক কাপালি ও তাপস বৈশ্য যখন বাংলাদেশ টিমে খেলতো, তখন একদিন আমাকে বলেছিলেন- "ওরা সিলেটে আসলে আমার বাসায় নিয়ে এসো"। আমি কথা রেখেছিলাম। আম্পায়ারিং করার সুবাদে প্রায়ই অনেক টুর্নামেন্টের ফাইনালে তাঁকে পেয়ে যেতাম। আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। কাছে ডেকে নিতেন, কুশলাদি জানতে চাইতেন।

বিজ্ঞাপন



বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি প্রায়ই তাঁর বক্তব্যে বলতেন, "আমি ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে চাই। এখানে ক্রীড়া পাগল মানুষরা আসুক- বিনোদন খুঁজুক- একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলুক। খুব মনে পড়ে তাঁর কথাগুলো। নেতা তো অনেকেই হবেন! কিন্তু জনগণের নেতা কজনইবা হবেন? কামরান ভাই ছিলেন জনগণের নেতা। ক্রীড়াঙ্গনের ঝুটঝামেলা বা যেকোনো বিষয়ে এগিয়ে আসতেন সব সময়। মিটিয়ে দিতেন মনমালিন্য। এক অসাধারণ সালিশি ব্যাক্তিত্ব ছিলেন। স্টেডিয়ামের বর্তমান ভিআইপি বক্সের "শেড" তিনি নির্মাণ করে দিয়েছেন। আজ মেয়রের চেয়ারটা বদল হওয়ায় সেই ক্রিকেট -ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধ।

খুব মজার একটি ঘটনা মনে পড়ে গেলো, আগে স্টেডিয়াম মাঠে প্রায়ই সিনিয়র অফিসিয়াল ও খেলোয়াড়দের প্রীতি ম্যাচ হতো। জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও সিটি কর্পোরেশনের এমনি একটি ম্যাচে আমি আম্পায়ারের দায়িত্বে। কামরান ভাইয়ের সাথে আমারও একটা জরুরী কাজ। একটা প্রয়োজনীয় কাগজে তাঁর স্বাক্ষর-সুপারিশ লাগবেই। তাই মাঠে যাবার আগেই কাগজটা পকেটে নিলাম। খেলা শুরুর আগে আমার কাজের কথা বলতেই তিনি হাসি মুখে বললেন অবশ্যই, দাও। এবং মজা করে বললেন, তবে শর্ত আছে, তুমি আজকের ম্যাচে আমাকে এলবিডাব্লিউ দিতে পারবে না। সেদিন  মাঠে আমার পিঠের উপর কাগজ রেখে শুধু সাইন করে দেননি, আমার যে ফি ধার্য ছিলো সেটাও মওকুফ করে দিয়েছিলেন। আজ সবই স্মৃতির পাতায় চলে গেলো। ভাল মানুষেরা সর্বমহলে প্রশংসিত গ্রহণযোগ্য থাকে। কামরান ভাইকে আমি-আমরা- সিলেটের ক্রীড়াঙ্গন আজীবন মনে রাখবে। অমর হয়ে থাকবেন তাঁর জীবদ্দশার মহৎ কর্ম ও গুণে। আল্লাহপাক তাঁর এই বান্দাকে জান্নাতের একজন খাস মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আ-মীন

আশরাফ আরমান: ক্রিকেট আম্পায়ার ও সংগঠক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত