নাদিয়া নন্দিতা ইসলাম

২৭ জুন, ২০২০ ১৮:৫৯

আমাদের জাহানারা দাদু

জাহানারা ইমামের সাথে আমাদের দুই বোনোর এটিই শেষ ছবি। ছবিটি আমাদের বাবার তোলা

ছোটবেলায় বাসার ল্যান্ড ফোনে যখন কোন কল আসতো, আমরা দুবোন ছুটে যেতাম কে কলটা আগে ধরবে। বেশির ভাগ সময়ই থাকতো বাবার কাছে কেউ করেছেন, কখনো কখনো মায়ের কাছে।

সেই সময় একদিন হঠাৎ রাতে ফোনের শব্দে যথারীতি আমরা দুবোন ফোনের কাছে গিয়ে দেখি বাবা ফোন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু কোন কথা বলছেন না তাঁর চোখ ভেজা। ফোন রেখে বাবা সোজা ছাদে গিয়ে সারা রাত বসে রইলেন। মা কান্নাজরা কন্ঠে বললেন, 'তোমাদের জাহানারা দাদু মারা গেছেন'।

দাদুর খুব সুন্দর স্মৃতি আছে আমাদের পুরো পরিবারের। দাদুর বাড়ি গেলেই আমরা দুবোন তাঁকে আলিঙ্গন করেই চলে যেতাম তাঁর পোষা ময়না পাখিটার কথা শুনতে, “তুই রাজাকার”, “রাজাকারের ফাঁসি চাই”। দাদুর কাছে গেলেই তিনি আমাদের দুবোনকে মনসুরা খেতে দিতেন। দাদু নাকি খুবই ভালবাসতেন মনসুরা খেতে।

তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কিছু খেতে পারতেন না, মা তাঁর জন্য নরম পায়েস বানিয়ে নিতেন। মায়ের কাছে শোনা, বাবা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে দাদুর সাথে কাজ করতেন তখন অনেক রাত পর্যন্ত বাবাদের মিটিং হোতো। মিটিং শেষে বাবা বাসায় নিরাপদে ফিরেছেন কিনা, খোঁজ নিতে তিনি কল করতেন, মা কে বলতেন, ”কী করছ মিতু? বাচ্চারা ঘুমিয়েছে?” মা বলতেন, ”খালাম্মা আপনার ছেলের জন্য জানালার পাশে বসে আছি, ফিরলে দরজা খুলে দিব”। দাদু বলতেন, “এই যুগেও বাঙালি মেয়েরা স্বামীর জন্য জানালার পাশে অপেক্ষা করে?”

বাবার কাছে যে তাঁর কতো কথা শুনেছি! তাঁর সাহসের কথা, তাঁর মানসিক শক্তির কথা, মানুষকে অসীম ভালোবাসতে পারার ক্ষমতার কথা।

আমাদের পুরো পরিবার দাদুর আদর স্নেহ ভালবাসায় সিক্ত হয়েছি। দাদু তোমাকে আমরা ভুলিয় নাই, তোমাকে অনেক ভালবাসি।

নাদিয়া নন্দিতা ইসলাম: শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত