ফারজানা মৃদুলা

০৬ জুলাই, ২০২০ ১৯:০৯

আঁধারে প্রদীপ হাতে ‘ইমজা’

আজ অদৃশ্য জালে আটকে আছে গোটা জাতি। করোনায় শারিরকীক অসুস্থতার পাশাপাশি মাসনিকভাবেও ব্যাধিগ্রস্থ করে ফেলেছে সবাইকে। জীবিকার সঙ্কট, আর্থিক টানাপোড়েন দিনদিন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। এই মহামারীকালে অধিক বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল ও ভবঘুরে মানুষরা। তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ এখন বলতে গেলে একেবারেই বন্ধ। তাদের মাঝে আবার কেউ কেউ অন্ধকার জগতে নিজেদের বন্দী করে ফেলেছে, কেউ নিজ ইচ্ছায় বেশীরভাগ আবার পরিস্থিতির শিকার যাকে বলে বাধ্য হয়ে এই পথে হাঁটছে আবার কেউ দালাল নামক চক্রের কবলে ও বাঁধা পড়েছে।

এমন সময়ে তাদের পাশে সহযোগী হয়ে এগিয়ে এসেছে সিলেটের ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট সংগঠন (ইমজা)। করোনার সংকটময় সময়ে গেলো ৯ মে থেকে ভালোবাসার সহমর্মিতার হাত বাড়িয়েছে এই সকল ছিন্নমূল / ভবঘুরে মানুষদের প্রতি। বিভিন্ন দানশীল মানুষের সহযোগিতায় প্রতি রাতে ৭০/৮০ জন অসহায় মানুষদের রাতের আহারের ব্যবস্থা করে আসছে সংগঠনটি। শুধু তাই নয় তারা এর পাশাপাশি ঐ সকল মানুষদের কাউন্সিলিং করছে, মানসিকভাবে সহযোগিতা করে সাহস দিয়ে যাচ্ছে আর চেষ্টা করে চলছে অন্ধকারের এই যাত্রীদেরকে আলোর পথে আনতে। বলা যায় আঁধারের মাঝে প্রদীপের আলো নিয়ে এসেছে ইমজা।

সিলেট কিনব্রিজ এর নিচে সুরমা তীরের চাঁদনীঘাটে ইমজার সদস্যরা প্রতিরাতে তাদের কাছে খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন, ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। মানবতার এই ফেরীওয়ালাদের লক্ষ একটাই পথহারা এই মানুষগুলো যেন পথের দিশা খুঁজে পায়।

তাদের এই মহৎ কাজে সহযোগিতা করতে প্রবাসীসহ স্থানীয় কয়েকটি সংগঠন। বিভিন্ন ব্যক্তিও এগিয়ে এসেছেন রাতের খাদ্য সহায়তার কাজে।

এই সুবিধাবঞ্চিত মানুষ লোর মাঝে বেশ কিছু নারী আছেন যারা অন্ধকারে জগতে জড়িয়ে জীবন জীবিকার সন্ধান করে চলছেন। সমাজ তাদের ঘৃণার চোখেই দেখে। কিন্তু তাদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে এগিয়ে আসেনি কেউ।
 
এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ইমজি। ইমজার সদস্যরা চাইছেন সমাজের সকলের সহযোগিতা নিয়ে তাদের কর্মসংস্থান করতে। ইতোমধ্যে তারা ১৫ দিনের খাদ্য সহায়তা দিয়ে বেশ কিছু নারীদের বাড়িতে পাঠিয়েছেন এবং তাদের বলেছেন এই অন্ধকারের ঠিকানাটা যেন তারা চিরতরে ইতি টানেন এমনকি তাদের আশ্বস্থ করেছেন যে তাদের সৎ ভাবে সুন্দর কাজের মাধ্যমে সমাজে বাঁচার সুযোগ করে দিতে তারা সহযোগিতা করবেন।

এতো সাহসী ও মহৎ উদ্যোগ নেওয়ায় শ্রদ্ধা জানাই ইমজার সদস্যদের। সমাজের দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এই কার্যক্রম।

ইমজার সদস্যরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন ছিন্নমূল শিশুদের উপরও। স্কুল/মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে শিক্ষার আলোয় তাদের জীবনটাকে আলোকময় করতে চাচ্ছেন তারা।  কেননা প্রতিটি শিশুর আছে নিরাপদ ভাবে বেড়ে উঠার অধিকার শিক্ষাগ্রহণের অধিকার। তারাই তো আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্নের কারিগর।

আঁধারে আলো দেখানো ইমজার সেই সকল মানবিক যোদ্ধাদের সাথে যুক্ত হয়ে আমরাও পারি সমাজের অসহায় মানুষগুলোর সুন্দর আগামী গড়তে সহযোগিতা করতে।

আমরা বিশ্বাস করি এমন একটি রাত আসবে যে রাতে সুরমা পাড়ে থাকবে না ছিন্নমূল মানুষের অস্তিত্ব। যার বিরল স্বাক্ষী হয়ে থাকবে কিনব্রিজ সংলগ্ন ঐতিহাসিক আলী আমজদে ঘড়ি।

ফারজানা মৃদুলা : কলাম লেখক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত