পার্থসারথি নাগ

৩০ আগস্ট, ২০২০ ২০:২৩

মইনউদ্দিন কলেজের সফলতায় অবদান আছে প্রফেসর হেনা সিদ্দিকীর

সুদীর্ঘ ৩৪ বৎসরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি ঘটিয়ে সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করছেন আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ সহকর্মী, মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ, সিলেটের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. হেনা সিদ্দিকী।

শিক্ষাজীবনে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ,মুরারিচাঁদ কলেজ ও সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এ শিক্ষক শিক্ষকতা জীবনের শুরুতে বিশ্বনাথ কলেজে যোগদান করলেও ১৯৮৭ সালে সিলেট শহরের মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজে চলে আসেন এবং নবপ্রতিষ্ঠিত এ কলেজের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। অধ্যক্ষ কিংবা উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগপ্রাপ্তির সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এ গুণী ব্যক্তি এসকল পদে না গিয়ে অধ্যক্ষ মহোদয়দের নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ও তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে নিজের মেধা, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তার প্রিয় এ কর্মক্ষেত্রের ব্যাপক উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করেন।

আজ মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ সিলেট শহর তথা বৃহত্তর সিলেটের সর্ববৃহৎ বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার সাথে স্নাতক পাস ও অনার্স পর্যায়ে ৮ বিষয়ে এখানে পাঠদান করা হচ্ছে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে ভালো ফলাফলসহ প্রতি বছর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও ঈর্ষণীয় স্থান অধিকার করছে। এসব ক্ষেত্রেও এ অভিজ্ঞ সহকর্মীর অবদান উল্লেখযোগ্য।

অথচ এ প্রতিষ্ঠান ১০/১২ বছর আগেও এ পর্যায়ে ছিলো না। অর্থ সংকট ছিলো প্রচুর। আমি দেখেছি এ মহৎ শিক্ষক কলেজ তহবিলে নগদ অর্থ সহায়তা প্রাপ্তির ব্যবস্থাসহ লাইব্রেরিতে বই দান, আলমারি প্রদান, এমনকি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থার জন্য ঢেউটিন,কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি ভবনের জন্য গ্রিল ইত্যাদি প্রদান করে নিজ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন। নিজ হাতে শহরের বিভিন্ন দেয়ালে কলেজে ছাত্রী ভর্তির প্রচারণার পোস্টার লাগিয়েছেন অন্যান্য সহকর্মীদের নিয়ে এও শুনেছি। এসব উদাহরণ সত্যিই এখন বিরল! এ কলেজের অগণিত ছাত্রী ও শিক্ষক এ কলেজ প্রতিষ্ঠাতাদের সাথে এসব নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষককে ও স্মরণ করবে অনাদিকাল পর্যন্ত।

সিলেটের কানাইঘাটের এক অভিজাত পরিবারের সন্তান এ প্রিয় সহকর্মী বর্তমানে শহরের কুমারপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ব্যক্তিজীবনে তিন মেধাবী কন্যাসন্তানের জনক এ শিক্ষক একজন সুপিতাও বটে। শাবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বড় কন্যা ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ও সুপাত্রস্থ হয়ে ঢাকায় বসবাসরত। মেজো কন্যা অনেক প্রতিযোগিতায় সাফল্য দেখিয়ে চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় Asian University for Women ( AUW) এ পড়ে ও ছোট কন্যা সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী স্ত্রী শহরের কাজী জালালুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এসব নিয়ে অত্যন্ত সুখী পরিবার তাঁদের।

উল্লেখ আবশ্যক, এ মহান শিক্ষক একজন সুলেখক ও কলামিস্ট। যাপিত জীবন ও বাস্তবতা নিয়ে লেখা তার কয়েকখানা সুগ্রন্থ ইতোমধ্যে পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। শিক্ষানুরাগী ও মানবতাবাদী এ গুণীজন স্বনামধন্য হিলসিটি একাডেমি, ফরেস্ট হিল স্কুল, পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ও নর্থ ইষ্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক।

অনেক বড় মাপের একজন মানুষ, শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক, সংগঠক ও দক্ষ প্রশাসক এ সহকর্মীর কাছ থেকে আমরা শিখেছি অনেক কিছু গত ২৮ বৎসর, তার প্রজ্ঞা ও উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় পেয়েছি বিভিন্ন সময়ে কলেজের বিভিন্ন দুঃসময়ে ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে তার কয়েকবার দায়িত্বপালন সময়ে। বিনয়ী, মিশুক ও সহকর্মীদের সাথে আন্তরিক এ বয়োজ্যেষ্ঠ সহকর্মীকে কখনো দাদাগিরি করতে দেখিনি এবং আমরাও কখনও তাকে বড়ভাই ও বন্ধু ছাড়া কিছু ভাবিনি। যুক্তি দিয়ে কথা বলতেন এবং সর্বসম্মতভাবে গৃহীত সিদ্ধান্তে অটল থাকতেন, পরবর্তী কালে অবস্থা যাই হোক না কেন! নিজে শিষ্টাচার মেনে চলতেন, পেশাদারী আচরণ করতেন -পোশাক পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে কথাবার্তা কিংবা শিক্ষক মিলনায়তনে আড্ডায়,সর্বত্র । আর কোনো অবস্থায়ই বেয়াদবি আচরণ পছন্দ করতেন না। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্ব আমাদের মুগ্ধ করতো, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আরও বাড়িয়ে দিত।

আমরা সবসময় এ গুণী সহকর্মীকে নিয়ে গর্ব বোধ করবো ও প্রতিষ্ঠানে তার সান্নিধ্য মিস করবো। পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি আমাদের এ স্বজন সহকর্মীর অবসর জীবন সুন্দর ও সুদীর্ঘ করুন।

পার্থসারথি নাগ : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইংরেজি বিভাগ, মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ, সিলেট।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত