হাসান মোরশেদ

০৮ অক্টোবর, ২০২০ ১৬:৩৪

মুজিব কোটে আগুন এবং বেজে উঠা নিনাদ

দুটা যুক্তি দেখলাম।
এক. রাজাকার চিত্রায়নে যেহেতু দাঁড়িটুপি দেখানো হয়, ধর্ষক চিত্রায়নে মুজিব কোট পুড়ানো- ঠিক আছে।

দুই. যেহেতু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুজিব কোট গায়ে দেন, সেহেতু মুজিব কোট পুড়ানো- ঠিক আছে।

প্রথম যুক্তি আমরা অনলাইনে মোকাবেলা করেছি ২০০৬ সাল থেকে, আমরা যারা বাংলা ব্লগিংয়ের শুরুতে ছিলাম তাঁদের মনে থাকবে। তখন এই যুক্তি আসতো সুর্নিদিষ্টভাবে জামাত শিবিরের ব্লগার/ কর্মীদের থেকে। আমাদের উত্তর ছিলো স্পষ্ট- শীর্ষ রাজাকারদের বেশভুষা এমন ছিলো এবং তারা ধর্মের নামেই রাজাকারি করেছে সুতরাং রাজাকারদের নাটক সিনেমায় দেখাতে গেলে এমনই দেখাতে হবে। এর সাথে ধর্ম অবমাননার কিছু নাই। শিবিরের যুক্তি ২০২০ এ আসছে প্রগতিশীলদের থেকে।
এবার আসি মুল আলাপে।

শীর্ষ রাজাকাররা দাঁড়ি টুপিওয়ালা ছিলো এবং তারা মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষনকে ও জায়েজ করেছে তাদের মনগড়া ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়ে( গনিমতের মাল ইত্যাদি)।  এখন ধর্ষকদের প্রতীক হিসাবে যদি মুজিব কোট চিহ্নিত করা হয় তার মানে- শীর্ষ ধর্ষকরা মুজিব কোট গায়ে ধর্ষন করছে, ধর্ষন জায়েজ করার জন্য তারা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিচ্ছে। যতো ধর্ষন হচ্ছে তার সবগুলো একটি রাজনৈতিক আদর্শ থেকে প্রনোদিত, একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নির্দেশনা দ্বারা সম্পাদিত যেমন রাজাকারদের সকল কাজ কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা মতো ছিলো।

এমন কিছু যদি কেউ প্রমান করতে পারেন- সমস্যা নাই।

বিজ্ঞাপন



’সবদেশে ধর্ষন হয়’ এমন একটা বাজে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমি কন্টেক্সট বিবেচনায় ও যাবোনা। এটা বাজে কথা। সে জন্য স্বরাষ্টমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবী, কুশপুত্তলিকা দাহ সবই ঠিকাছে। কিন্তু মুজিব কোট কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্পত্তি না তার আবিস্কার? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মুজিব কোট গায়ে যতো দেখা যায় তার চেয়ে বেশী স্যুট কোটে। তাহলে স্যুট কোট জ্বালানো হলোনা কেনো?
 
তাহলে বুঝা যাচ্ছে- মুজিব কোট একটা প্রতীক হিসাবে পুড়ানো হয়েছে। মুজিব কোট কিসের প্রতীক? মুজিব কোট বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, মুজিব কোট এদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতীক। যেমন জয়বাংলা শ্লোগান, যেমন ধর্ম নিরপেক্ষতা আদর্শ তেমনি মুজিব কোট।

মুজিব কোট বঙ্গবন্ধুর কতোটা আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের কতোটা? মুজিব কোট মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কতোটা আর ক্ষমতামুখী দুর্বৃত্তায়নের কতোটা?

জয় বাংলা শ্লোগান এদেশের কোটি মানুষ উচ্চারন করেছে স্বাধীনতার মন্ত্র হিসেবে, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন জয় বাংলা উচ্চারনে- জয় বাংলা বলে কেউ ডাকাতি করলে তার জন্য ডাকাতের কন্ঠরোধ করা দায়িত্ব, জয় বাংলা বাতিল করা নয়। মুজিব কোট গায়ে কেউ অন্যায় করলে তার গা থেকে মুজিব কোট খুলে নেয়া কর্তৃব্য, মুজিব কোট পুড়ানো নয়।

প্রতীক জরুরী জিনিস। প্রতীক জরুরী বলেই আমরা শহীদ মিনারে ফুল দেই। কেউ ভাষা বিকৃত করলে সেই ক্ষোভে শহীদ মিনার ভাঙ্গতে যাইনা। কারা শহীদ মিনার ভাঙ্গে, কী উদ্দেশ্যে ভাঙ্গে সেটা অস্পষ্ট নয়।

কারা জয় বাংলা নিষিদ্ধ করেছিলো, কেনো করেছিলো সেটাও আমরা জানি।

ধর্ষনের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা সামাজিক আন্দোলনের সুযোগে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার আরেক প্রতীক মুজিব কোটে আগুন দেয়া- একই রাজনীতির অংশ। স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট।
কোন বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি দিয়েই একে আড়াল করার সুযোগ নেই।

হাসান মোরশেদ : লেখক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত