নজমুল আলবাব

১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:২২

এ নগর আরও কোন বাসিত মোহাম্মদের পেট এফোঁড়ওফোঁড় করে দেবে

বাসিত ভাই চলে গেলেন! কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ! কী করুণ প্রস্থান... আহা বাসিত ভাই!

"সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর আম্বরখানার হুরায়রা ম্যানশনের সামনে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্মাণাধীন ড্রেনে পড়ে কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের (৬৫) পেটের মধ্যে রড ঢুকে যায়। এ সময় তিনি গুরুতর আহত হন। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুদিন এমএজি ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।"

বাংলাদেশে এই বয়েসে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। একজন মানুষ, মোটামুটি লম্বা সময় পৃথিবীতে কাটিয়ে, একটা কিছু চাকরি শেষে সরকারি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত হয়ে মারা যেতেই পারেন। আমার আব্বা ৬৩ বছর বয়েসে চলে গিয়েছিলেন। সেই হিসেবে বাসিত ভাই দুবছর বেশি বাঁচলেন। কিন্তু যে ভাবে চলে যেতে হলো একজন বয়েসি মানুষকে, একজন সচল মানুষকে যেভাবে থামিয়ে দেওয়া হলো, সেটা কি স্বাভাবিক?

কোটি মানুষের নগরী সিলেট। ভাঙচুর প্রিয় মেয়রের নগর। সেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর থাকার কাল থেকে আরিফুল হক চৌধুরী শহর সিলেটে ভাঙচুর করে আসছেন। এই ভাঙচুরে জনসমর্থনও আছে। কিন্তু বড় বেশি উন্মাতাল এই কর্মকাণ্ড। নিয়মনীতি আছে বলে মনে হয় না। যেন এক পাগলা ঘোড়ায় চেপে চলছে নগর সিলেট। এখানে গর্ত, সেখানে খানা-খন্দক। মানুষের অভ্যাস হয়ে গেছে যেনবা। এই সেদিন ব্যস্ত রাস্তার পাশে ধামাধাম শাবল গাইতি চালিয়ে তিনতলা মিনার ভাঙতে শুরু করলো সিটি করপোরেশন। তারপর সেই মস্ত নির্মাণ প্রবল বিক্রমে গিয়ে পড়লো রাস্তায়, কী এক অলৌকিক শক্তির জোরে লাশ হওয়া থেকে বেঁচে গেলো কেউ কেউ। তবু টনক নড়েনি মাথা মোটা, যেমন ইচ্ছে চলা সিলেট সিটি করপোরেশনের।

আরিফুল হক না হয় স্ট্যান্টবাজ পলিটিশিয়ান। চমক-ঠমক দেখানোর জন্য কিংবা পুরনো গা জোয়ারি ভাব দেখাতে যা ইচ্ছা তা করে ফেলেন। সিলেট সিটি করপোরেশনে আর কেউ নাই না কি? কোন কমিশনার কিংবা কর্মকর্তা কেউ কি নাই যার এতটুকু বোধ বুদ্ধি আছে, যে কিছুটা হলেও জননিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করে। তারা কখনওকি এইসব সাধারণ নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলে না?

নূর আজিজ, চিফ ইঞ্জিনিয়ার যে কোন ভাঙচুর কিংবা নির্মাণে যে জরুরি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হয় এসব কি জানা নাই তার? সম্ভবত না। আসলে বাঙাল মুল্লুকে এসব কে কবে ভাবে। খোদ রাজধানীতে র‍্যাংগস ভবনে লটকে থাকে নির্মাণ শ্রমিকের মৃতদেহ। পুড়ে ছাই হয় পোশাক শ্রমিক।

প্রিয় বাসিত মোহাম্মদ, সদা হাসিমুখ বাসিত ভাই, আপনার মৃত্যুতে নগর সিলেটের কিছুই হবে না। নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকবে মানুষ। মেয়র তার দল নিয়ে নিয়ে আরও গর্ত খুঁড়ে যাবে। কোন একদিন আরও কোন এক বাসিত মোহাম্মদের পেট এফোঁড় ওফোঁড় হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত