মোহাম্মদ আল আমিন

০৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:২০

ধর্ষণের কারণ কী?

একজন সাধারণ মানুষ থেকে ধর্ষক হয়ে উঠার পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করে। এই কারণগুলো একজন মানুষকে ধর্ষকে রূপান্তর করে। ডারউনের মতে, “সংস্কৃতিভেদে ভৌগলিক অবস্থান ভেদে আবেগের তারতম্য নেই সব জাতিতে সব অঞ্চলে আবেগের মূল ধারা একই উপাদানে তৈরি”। তবে, শিক্ষা সংস্কৃতি ভেদে আবেগের প্রকাশভঙ্গির মধ্যে তারতম্য থাকতে পারে। আবার গবেষকদের মতে আমাদের আবেগ বিকাশের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কাজ করে। চাহিদা পূরণ ও তৃপ্তি অর্জন; চাহিদার অপূর্ণতা, অপূর্ণতা থেকে অতৃপ্তি; এবং নিজের নিরাপত্তার অভাব বোধ।

আমাদের ভেতরে কেন আবেগ এর সৃষ্টি হয়? আমরা মানুষ এই ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ থাকার কথা না। মানুষ হওয়াতে পুরুষ নারীর প্রতি কিংবা নারী পুরুষের প্রতি তীব্রতা অনুভব করে। সহজভাবে বলা যায়, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। এই যে আকর্ষণ বোধ করা তার সাথে একান্ত মিশতে চাওয়া মনস্তাত্ত্বিক গবেষকদের মতে একে যৌন আবেগ বলে। আবেগকে নানা ভাবে বিশ্লেষণ করা যায়; এই যে কান্নায় ভেঙে পড়ি, মন ভালো থাকলে খুশিতেই আত্মহারা হয়ে পড়ি, মানুষকে স্নেহ করি, ভালোবাসি, এগুলো ইতিবাচক আবেগ। অন্যদিকে ক্রোধে, রাগে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া আমাদের নেতিবাচক আবেগ।

আমাদের আচরণ আর পরিবেশের ওপর নির্ভর করে আবেগের পরিবর্তন হয়। সেদিন আমার এক বন্ধু ছবি দেখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে, আরেক বন্ধু ধূমপান করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এখানে যদি লক্ষ করি তবে দেখবো দুইজন মানুষের আবেগের পরিবর্তন একটি চলচ্চিত্র। কিংবা চিন্তার মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আনতে খুব বেশি ভূমিকা রাখে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানে শুধু গান বাজনা না। সংস্কৃতি মানে একটা রাষ্ট্র গোষ্ঠীর কিংবা জাতির পরিচয়। আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে সংকর আমাদের সংস্কৃতি করে ফেলেছি সংকর। কিংবা ধার করা সংস্কৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের দেশের সিনেমাগুলো পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণ করতে গিয়ে সিনেমাশিল্প ধ্বংস করে ফেলছে। সিনেমার সংলাপগুলোও নিম্নমানের। "আয় যায় গা পাঠ ক্ষেতে" সিল মাইরা দিমু" ফুটা কইরা দিমু" ইত্যাদি সংলাপগুলো পরোক্ষভাবে ধর্ষণকে প্রমোট করছে। এছাড়া পাশ্চাত্য সংস্কৃতির তীব্রতা এবং ব্লু-ফিল্ম এর সহজলভ্যতা তার চাহিদাকে তীব্রগতিতে বৃদ্ধি করে। এই তীব্রতার সাথে তাল মেলাতে তার সঙ্গিনীর প্রয়োজন বোধ করে। প্রথমে পরিচিত এবং নিকট আত্মীয়দের মধ্যে খুঁজতে শুরু করে। একটা সময় মিউচুয়ালভাবে বিষয়টা হয়ে যায়। আবার এই ধরণের লালসার শিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিকট আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে হয়। আত্মসম্মাণের ভয়ে অনেকে বিষটিকে এড়িয়ে যান। এই স্টেপে যারা পড়ে যায় তারা সফল অর্থাৎ তাদের চাহিদা পূরণ ও তৃপ্তি অর্জন হয়। শতকরা হিসেবে ৭০% ভাগ এইভাবে ভায়োলেন্স এর শিকার। বাকি ৩০% এর মধ্যে কিংবা সাথে ঘটে যায় নিষ্ঠুরতম ঘটনা। যৌনতার চাহিদা নিত্য এবং মানুষ হিসেবে তার মধ্যে জাগ্রত হবেই সঠিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধ না থাকার কারণে অনেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। পর্ন এডিকশন, ড্রাগ এডিকশন তার কামনাকে তীব্র করে তোলে। সে নারীকে টিজ করে। রাস্তায় অসম্মান করে ফেসবুক কিংবা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা ভাবে হয়রানি করে। সুযোগ পেলেই দলবেঁধে কিংবা একা ধর্ষণ করে। ধর্ষকদের মানসিকতা এতোটাই নীচে যে কে শিশু কে বৃদ্ধ এসবের ধার ধারে না। ধর্ষক কেবল তার চাহিদা পূরণ করতে চায়। বিকৃতভাবে, অস্বাভাবিকভাবে সমাজ বহির্ভুত যেকোনোভাবেই হোক। যখন ধর্ষক একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে ফেলে ঠিক তখন তার মস্তিষ্ক তাকে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিকে জাগ্রত করে। নিরাপত্তাহীনতার যখন সে ভুগতে শুরু করে তখন ধর্ষিতাকে হত্যা করে। পুরো ঘটনা যদি বিশ্লেষণ করেন তবে দেখতে পাবেন ধর্ষকরা একধরনের মানসিক রোগী।

ধর্ষণ তীব্র হচ্ছে কেন?
বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে তাতে সাধারণ মানুষ ধরে নিয়েছে দেশে বিচার পাওয়া যাবে না। কিংবা বাংলাদেশ ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দেশে ধর্ষণ মামলার এখনো তেমন কোনো কার্যকরী রায় ঘোষণা করা হয়না। এখনো কোনো ধর্ষককে ফাঁসি দিতে পারেনি যা ধর্ষকদের ধর্ষণের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে নারীকে নানাভাবে কটূক্তি করা হচ্ছে। কখনো নারীর পোশাক আবার কখনো নারীর চলাফেরাকে দায়ী করছে তরা যা ধর্ষকদের উৎসাহিত করছে। মূলত পরিবর্তন করা দরকার আমাদের অপসংস্কৃতি শিক্ষার প্রসার প্রয়োজন তবেই ধর্ষণের মাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

যৌনশিক্ষা কি আসলেই প্রয়োজনীয়?
রাস্তায় বের হলে হারবাল সেন্টারের বিজ্ঞাপন পত্রিকার ভেতরে বিজ্ঞাপন পুরুষ নিজেকে শক্তিশালী করো। এতকিছুর পরেও কী আমরা বলতে পারি যে আমাদের দেশের মানুষজনেরা ভালো আছে। দেশের কিশোর-কিশোরীরা যৌনতা নিয়ে ভুল তথ্যে বেড়ে উঠছে। পিরিয়ডের মতো সেনসেটিভ বিষয়কে ট্যাবু করা হচ্ছে। কিশোররা স্বপ্নদোষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগে সাধারণ বিষয়গুলোকে তাদের কাছে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করছে। সাপুড়ে কিংবা ওঝার কাছে দৌড়াচ্ছে। একটা সম্প্রদায় তাবিজ কিংবা পানি পড়ার দিকে ঝুঁকছে। যে সম্প্রদায় নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি দেশ গড়ার। তবে সমাধান আসবে কীভাবে?

মনে রাখা দরকার ধর্ষক তৈরি হয় মানসিক অধঃপতনের জন্য!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত