হাসান মোরশেদ

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ১৮:৪১

মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশবছর, সিলেট শহরকে যেমন দেখতে চাই

নগরের টিলাগড়ে মুক্তযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ঢেকে কোরবানির ঈদের মৌসুমে বসে পশুর হাট (ফাইল ছবি)

সে সময়ের ১৯টি জেলা শহরের মধ্যে সিলেট শহরে মুক্তিযুদ্ধ এক অনন্য মাত্রার। মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীর শহর বলেই শুধু নয়, ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য সিলেট শহর ছিলো কৌশলগতভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ, প্রবাসী সিলেটীদের কুটনৈতিক ও অর্থনৈতিক লড়াই সে আরেক জরুরী অধ্যায়।

দুঃখজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব নিয়ে সারা বাংলাদেশ যতোটা উদাস, শহর সিলেট উদাস সবচেয়ে বেশী। মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে এই উদাসীনতা কাটিয়ে উঠার জন্য কিছু প্রস্তাবনা-

১. সরকার প্রতিটি জেলা শহরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করেছেন একই ডিজাইনের। বাংলাদেশের অন্য সব জেলায় দেখেছি এই স্মৃতিসৌধ হয় শহীদ মিনারের পাশে অথবা খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এবং মোটামুটি ভালো ব্যবস্থাপনায়। সিলেটে এটি কোথায়? শহরের প্রান্ত ছড়িয়ে টিলাগড়। পেছনে সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য নিস্কাশন স্থাপনা। সামনের ছোট মাঠের জায়গা দখলে থাকে সেখানকার প্রভাবশালী কাউন্সিলরের। কোরবানী ঈদের আগে গরুর বাজারও বসে, শীতকালে কাউন্সিলরের নামে ব্যাডমিন্টন আর ফুটসাল কম্পিটিশন। লোকজন স্মৃতিসৌধের উঠে পা দুলিয়ে খেলা দেখে।

ন্যুনতম কোন যত্ন নেই, নোংরা আবর্জনার দখলদারিত্ব। হয় এটি সরিয়ে এনে শহীদ মিনারের পাশে শহরের কেন্দ্রস্থলে স্থাপন করা হোক, নয়তো ঐ জায়গা দখলমুক্ত করে একটা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেয়া হোক।

২. ২৫ মার্চে সিলেট শহরে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো আগরতলা মামলার আসামী ক্যাপ্টেন(অবঃ) মুতালিবের পাকিস্তান সেনা হত্যার মধ্য দিয়ে। টিলাগড় পয়েন্টে তার এই অপারেশন। সেখানে একটা স্থাপনা নির্মিত হয়েছে কিন্তু ক্যাপ্টেন মুতালিবের কোন নাম নেই। ক্যাপ্টেন মুতালিবের স্মরনে স্থায়ী স্থাপনা হোক।

৩. সিলেট স্বাধীন করার যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন প্রচুর ভারতীয় সৈনিক। মেন্দিবাগে তাদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ ছিলো। জালালাবাদ গ্যাস অফিস নির্মানের সময় সেটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিলো। এটি পুনঃ নির্মাণ হোক।

৪. রামকৃষ্ণ মিশনের পুকুর পাড়ে শহীদ কাজলের পালের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ ছিলো, এখন নেই। কাজল পাল শহীদ হয়েছিলেন মৌলভীবাজারে মাইন বিস্ফোরনে। এটি পুনঃ নির্মিত হোক।

৫. সিলেট স্বাধীন করার শেষ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন এই শহরের অতি প্রিয় মুখ সোলেমান। শহীদ সুলেমানের একটি ভাস্কর্য নির্মিত হোক শিবগঞ্জ-সোনারপাড়ার মুখে যেখানে যুদ্ধরত অবস্থায় পাকিস্তান আর্মি তাকে বন্দী করেছিলো।
 
৬. দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারের মুল পরিকল্পনায় একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মারক সংগ্রহশালা আছে। শহীদ মিনার এখন সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে। সিটি কর্পোরেশনের সুযোগ আছে এটাকে পূর্নাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ ও জেনোসাইড মিউজিয়াম হিসাবে গড়ে তোলার। ইন্টারনেট থেকে মুক্তিযুদ্ধের বহুল ব্যবহৃত কিছু ছবি নামিয়ে প্রিন্ট করে দেয়ালে লাগিয়ে রাখা আর কিছু বইপত্র রেখে দেয়ার নাম সংগ্রহশালা নয়।

"সিলেট মুক্তিযুদ্ধ ও জেনোসাইড মিউজিয়াম"- ধারণ করবে সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্মারক ও চিহ্ন। এটা একটা বিশেষায়িত ব্যাপার। এর পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য পেশাগত দক্ষতার প্রয়োজন আছে। কিন্তু এটা করা গেলে অসাধারণ একটা অর্জন হবে মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশবছর পূর্তিতে।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)
লেখক : মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত