অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৮:১৮

শেখ হাসিনা: হতাশায়ও শেষ আশা

একজন নিঃসঙ্গ শেরপা, ওয়ান ম্যান আর্মি, দ্য লাস্ট হোপ ইন ডিসপ্যায়ার; বাংলাদেশের জন্য শেখ হাসিনা হচ্ছেন গ্রিক মিথোলজির ফিনিক্স পাখি। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধু যেমন একই মুদ্রার দুই পিঠ তেমনি জাতীয় মুক্তির সংগ্রামের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শেখ হাসিনা একই মুদ্রার দুই পিঠ।

পশ্চিমা/আইএমএফের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সার/কীটনাশক/বীজ/পানিসেচে কৃষি ভর্তুকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়ার প্রথম সুফল কৃষিজ/খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসে শেখ হাসিনার প্রথম সরকার আমলে! সেই সময়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তি, অশিক্ষিত/অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন নারী সমাজের ঘরে মাত্র ১০ হাজার টাকায় মোবাইল পৌঁছে দেওয়ার মতো ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো তখন কেউ কল্পনাও করেনি! এখানেই শেখ হাসিনা নিজেকে অতিক্রম করে গেছেন!

লোডশেডিং জর্জরিত/বিপর্যস্ত বাংলাদেশে লোডশেডিং যেমন যাদুঘরে তেমনি মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে একটি জনপদের ৪৫ শতাংশ থেকে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার ঘটনা বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও ঘটেনি, আর ঘটবেও না!

কে জানতো, কে বিশ্বাস করতো এই ৩০ লাখ/২ লাখ নিয়ে বাহাস করার দেশে রাজাকারের ফাঁসির দড়ি ব্যবহৃত হবে! কে জানতো বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে, জেলহত্যার বিচার হবে! এমনকি বিচার রুদ্ধ করতে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের কৃত্রিম সংকটও দেখা গেছে বিএনপি-জামায়াতের আইনের শোষণ কালে!

ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগানকে কটাক্ষ করে বলা হতো ডিজিটাল দরকার নাই এ্যানালগ ফেরত দে! সেই দেশের ৮০ শতাংশ জনগণ এখন সরাসরি তথ্য প্রযুক্তি সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট! ১০ লাখ মানুষ এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ে জড়িত! এগুলো ঘটেছে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে!

ভারত-মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা মীমাংসা শেখ হাসিনার বাইরে কে করতে পারতো? দেশের জন্ম থেকে চলে আসা ছিটমহল সমস্যা এখন যাদুঘরে! ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট/সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে বাংলাদেশ বিশ্বে ১০টি প্রধান গন্তব্যের একটি! একযোগে রাশিয়া, চীন, জাপান, ভারত, ইউরোপ সকল দেশেরই বিনিয়োগ মান্না সাল-ওয়ার ন্যায় আসমান থেকে আসেনি!

পদ্মা সেতু শিরদাঁড়া সোজা রাজনৈতিক নেতৃত্বের এ যুগের স্পার্টাকাস! প্রতিবছর বাজেট পাশের পূর্বে প্যারিস কনসোর্টিয়াম নামের যে ভিক্ষাবৃত্তির বৃত্তে বাংলাদেশ ছিল সেটি ভেঙে দিয়েছে শেখ হাসিনা।

গোর্খে বলতেন, What the Bengal think today, India think tomorrow! শেখ হাসিনা আজকে যেটি ভাবেন, করেন, বলেন, সেটি বুঝতে/জানতে/ধরতে/হজম করতে অনেক সময় কঠিন মনে হয়!

শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উন্নয়নের কর্মসূচি সিনডারেলার মতো রূপকথার গল্প মনে হতে পারে, তবে সেটিই সত্য! তবে, আরও রুঢ় সত্য এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল যেন শীতের সকালের শিশিরের মতো দ্রুতই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে! এটি ধরে রাখা সকলের জন্যই এখন চ্যালেঞ্জ!

অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন: যুক্তরাজ্যপ্রবাসী লেখক, আইনজীবী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত