আবদুল হাই আল-হাদী

২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৫:০৭

জৈন্তিয়া বিপ্লবের এক সংগ্রামী নেতা শহীদ উ কিয়াং নংবাহ

প্রাচীনত্ব ও সমৃদ্ধির দিক থেকে জৈন্তিয়া যে এক সমৃদ্ধ জনপদ ছিল-এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই। বস্তুগত সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ ও পৌরাণিক কেতাব সমূহ অধ্যয়নের মাধ্যমে তারা এ সিদ্ধান্তেও উপনীত হয়েছেন যে, পৃথিবীর প্রথম নারীরাজ্য হচ্ছে জৈন্তিয়ারাজ্য। এরকম এক সমৃদ্ধ, সুখী ও ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি সাম্রাজ্যবাদীদের লোভাতুর দৃষ্টি পড়া খুবই স্বাভাবিক ও যুক্তিসঙ্গত। পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরও এ রাজ্যটি নিজের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রায় একশত বছর টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। প্রতারণা, শঠতা ও ধূর্ততার মাধ্যমে উপমহাদেশের শেষ এ স্বাধীন রাজ্যটি ১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ ব্রিটিশরা করায়ত্ব করতে সক্ষম হলেও স্থানীয় জনগণ-জৈন্তিয়ারা তা মেনে নিতে পারেনি। তারা প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তোলে ব্রিটিশদের তাড়ানোর চেষ্টা করে। উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে যদিও এ আন্দোলন কমই আলোচিত হয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী এ বিদ্রোহ ও সংগ্রামে যে মহান ব্যক্তিত্ব নেতৃত্ব দিয়েছেন- তিনি হচ্ছেন উ কিয়াং নংবাহ। এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে যার নাম চিরদিন সোনার হরফে লেখা থাকবে।

আজ সে মহান বিপ্লবীর ১৬০-তম শাহাদাত বার্ষিকী। ১৮৬২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিকেল ৫ টায় সারি নদীর তীরে বর্তমান মেঘালয়ের ওয়েস্ট খাসি হিলস জেলায় জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এ মহান বিপ্লবীকে শহীদ করা হয়।  সে মহান বিপ্লবীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে উ কিয়াং নংবাহ’র বিপ্লবী জীবনের সংক্ষিপ্ত দিক আলোকপাত করা হল।

U Kiang Nangbah, কা রিমাই নংবাহ (Ka Rimai Nangbah) এর ঘরে মেঘালয়ের জৈন্তা পার্বত্য জেলার জোয়াই এর টিপিপেইলে (Tpeppale) জন্মগ্রহণ করেন। তার সুনির্দিষ্ট জন্ম তারিখ জানা যায়নি। তবে বলা হয় যে, ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশরা যখন স্বাধীন জৈন্তা দখল করে তখন তিনি শিশু ছিলেন। অন্য দেশপ্রেমিকদের মতো তারও রক্তে কোন রাজকীয় ধারা ছিল না। তিনি পল্লীর এক সাধারণ মানুষ ছিলেন এবং চাষাবাদ করতেন। তিনি সুকপহ গোত্রের (Sookpah Clan) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ব্রিটিশদের আগমনের সময় বয়স কম হলেও তিনি ব্রিটিশদের আগ্রাসী দমনমূলক নীতিদ্বারা মারাত্মকভাবে বিরক্ত হয়েছিলেন। এসব যন্ত্রণাদায়ক কাজকর্ম তার দেশপ্রেমকে মারাত্মকভাবে অনুপ্রাণিত করে। বিশেষকরে, তার মামা ইউ সান সাজার নাংবাহ (U Ksan Sagar Nangbah) তাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেন যিনি চানমারসিয়াং (Chanmyrsiang) নামক স্থানে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। ব্রিটিশরা একটি নীতিগ্রহণ করলো যে, জৈন্তা অঞ্চলে তারা যত কম পারা যায় তত কম নাক গলাবে এবং দু’দশকের মতো সময় স্থানীয়দের নিজেদের মতো করে চলতে দেয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে ইউ কিয়াং নামবেহ (U Kiang Nangbah) ব্রিটিশদের চালাকি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সতর্ক হয়ে উঠেন।

এরপর ও ব্রিটিশ বিরোধী অনুভূতি শুরু হয় যখন ব্রিটিশ সরকার করারোপ করার চেষ্টা চালায় এবং স্থানীয় প্রথা ও ধর্মীয় ব্যাপারে নাকগলাতে শুরু করে। স্থানীয়দের কাছে এসবকাজ কর্ম কর্তৃত্ব আরোপ এবং ব্রিটিশদের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা হিসাবে দৃশ্যমান হয়। ১৮৬০ সালে জৈন্তিয়া অঞ্চলে বাড়ীর উপর করারোপ করা হয়। মিংকই পিরদি (Minkoi Pirdi)  ইয়াও ইয়ংপিয়া (Yaw Yongpiah) নামক স্থানে অনুষ্ঠিত এক দরবারে জোয়াইয়ের সাবেক দলই মানিক পাকেইনটেইন (ডাকনাম দলই থাইংকাইন) করারোপের আদেশটি ঘোষণা করেন। ইউ কিয়াং নংবেহ এবং ১৮৬০ সালের জৈন্তা বিদ্রোহের ঘটনা এখান থেকেই ধরা যেতে পারে। এ দরবারে দলই থাইংকাইন উপস্থিত জনতাকে অবহিত করেন যে, ব্রিটিশ সরকার ২৮ মার্চ ১৮৫৯ সালে এক আদেশে বাড়ী কর আরোপ করেছেন। ইউ কিয়াং নংবেহ এক কড়া জবাব দিয়ে দরবারে বলেন, ‘স্থানীয়রা বিদেশীদের কর দেবেনা’।

স্থানীয়রা কোনরূপ ট্যাক্স প্রদান না করার ব্যাপারটি পরিষ্কার জানা স্বত্বেও একই বছর ব্যবসা-বাণিজ্য ও পণ্যের উপর আরও নানাবিধ ট্যাক্স ও শুল্ক আরোপ করা হয়। মৌখিক ভাষ্য মতে, দলই থাংকেইন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তারা চিলিয়াংরাজের (Chilliangraij) জনৈক লাক্ষী পিরডিয়াং (Lakhi Pirdiang) য়ের কাছ থেকে বাড়ী কর আদায় করতে উদ্ধত হলে তিনি তা পরিশোধ করতে অস্বীকার করেন। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা হিংস্রতার সাথে এ বাড়ীতে ঢুকে পুরো বাড়ী তছনছ করে। বলা হয় যে, উ কিয়াং নংবেহ শোনামাত্র ঘটনাস্থলে হাজির হন এবং সশস্ত্র ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ট্যাক্স আরোপের পাশাপাশি ব্রিটিশদের অন্যান্য কর্মকাণ্ড জৈন্তিয়ার লোকদের নীরব দর্শক না থেকে ব্রিটিশদের প্রতিহত করার ব্যাপারে জেদি করে তোলে। পুরো পার্বত্য অঞ্চলে নিজেদের যে আধিপত্য আছে তার নিদর্শন স্বরূপ ১৮৫৫ সালে জোয়াই-এ ব্রিটিশরা একটি পুলিশ স্টেশন স্থাপন করে।

‘Dkhar Clan’র শ্মশান স্থলের পাশে ব্রিটিশদের স্থাপিত এ পুলিশ স্টেশন জনগণের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ব্রিটিশ প্রশাসন তাদের ক্ষমতা জাহির করছিলো এবং জৈন্তিয়াদের নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করছিল। এরকম একটি পদক্ষেপ হচ্ছে: ডেপুটি কমিশনার মি. রোউলাট (Rowlatt) কর্তৃক জনগণকে সামরিক ছাউনির পাশে মৃতদেহ দাহ না করার নির্দেশ প্রদান। Sumer Clan’র ঐতিহ্যবাহী শ্মশানঘাটে মৃতদেহ দাহ করার একটি অনুষ্ঠান বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যান্য গোত্রের মধ্যে Paswat Clan, Pa Kyntein Clan এবং Langdoh Clan’র উপরও মৃতদেহ সৎকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ব্রিটিশদের এসব কাজকর্ম ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবদমিত করার প্রচেষ্টা হিসাবে স্থানীয়দের কাছে প্রতিভাত হয়। অধিকন্তু, মিশনারিদের দ্বারা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে তাদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দেয়। প্রতিরোধ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ইয়লং (Yalong) এ সংঘটিত একটি ঘটনা যা তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ‘Pastieh Kaiksoo’ উপলক্ষে সংঘটিত হয়েছিল। খাসিয়া পুলিশ অফিসার ‘Surki’ এর নেতৃত্বে পুলিশ নৃত্যের জন্য সংগৃহীত সব অস্ত্র-শস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে। তারা হাজার হাজার সমবেত জনতার সামনে তা পুড়িয়ে ফেলে। ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কারণেই জৈন্তিয়ার লোকজন নিজেদের ধর্ম, ঐতিহ্য, প্রথা ও ভূমি রক্ষার জন্যই অস্ত্র হাতে তুলে নেয়।

আরেকটি ঘটনা যা জৈন্তিয়ার লোকদের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করেছিল। ১৮৬০ সালে Solom Dohling নামের এক পুলিশ কনস্টেবল Nangjngi’র ‘Khloo Langdoh’ নামক পবিত্র বন্যে একটি বানর গুলি করে হত্যা করে। সরকারী কর্মকর্তা ও মিশনারিরা মানুষদের বিশ্বাস করতে প্রভাবিত করল যে, ‘Khloo Langdoh’ কেন্দ্রিক পবিত্রতার বিশ্বাস ও চর্চা সমূহ একটি কুসংস্কার। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যাপারে ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপ গণ আন্দোলনের আঙুল প্রজ্বলিত করল। গণ আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১২ দলই’র দরবার আহবান করা হল যাতে মানুষদের মধ্যে বিদেশী শাসকদের বিরুদ্ধে জাগরণ তৈরি করা যায়।

Syntu Ksiar নদীর তীরে ‘Madiah Kmai Blai’ নামক স্থানে এ দরবার অনুষ্ঠিত হয়। অসীম সাহসের সাথে এ দরবারে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে কয়েকজন হচ্ছেন- Mynso’র Mynlon দলই, Changpung’র Kiri দলই, Sutnga’র Sawor দলই, Rymbai’র Mon দলই, Nangkhlieh’র Bakhiar দলই, Baratoi’র Liang Pator, Raliang’র Bukhia Pator, নর্থিয়াংয়ের Ridon Pator, জোয়াইয়ের Chai Rangat, Changpung’র Kat Chen, Manik Syngkon (জোয়াইয়ের সাবেক দলই) Yalong’র Kma Langdoh, Raliang’র Bang দলই, Raliang’র Kat Pator, জোয়াইয়ের Loi Paswet, জোয়াইয়ের Jwai Sdiah’র Lata Kynjin এবং King Nangbah ঐতিহ্যগতভাবে বলা হয় যে এ দরবারে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় যে নদীর তলদেশ হতে Phlang Latang নামক বৃক্ষটি যে আনতে পারবে, সে ব্রিটিশ বিরোধী গণ আন্দোলনের নেতা হিসেবে স্বীকৃত হবে। Nangbah সফল হন এবং নার্থিয়াংয়ের দলই দ্বারা মাল্যভূষিত হন। তিনি সর্ব সম্মতভাবে আন্দোলনের নেতা নির্বাচিত হন। U Kiang Nangbah এবং তার দলের লোকজন অবরোধ ও প্রতিরক্ষা প্রাচীর তৈরি করতে লাগলেন। খাদ্যশস্যও মজুদ করা হল। আগ্নেয়াস্ত্র ও হাতিয়ার উৎপাদনে মনোনিবেশ করলো। U Kiang Nangbah এবং তার লোকজন জোয়াই, ইয়লাং, লাটবার এবং চাংপাং এলাকা থেকে জোয়াইয়ের পুলিশ স্টেশনে হামলা করে এটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। এ আক্রমণ দ্রুতই জৈন্তিয়া পার্বত্য এলাকার অন্যান্য স্থান যেমন পাদু, সাতপাথর, নাংবাহ, ইয়ালং, মাইনসু, চাংপং, নারতিয়াং, রালিয়াং, সুতংগা, নাংক্লিয়েহ, বারাত, মুকায়ো প্রভৃতিতে ছড়িয়ে পড়লো। ব্রিটিশ সরকার পুরো সামরিক অভিযান চালানোর জন্য ২১ নেটিভ ইনফ্রেন্টি ইউরেশিয়ান বেটারি অব আর্টিলারি ৪৪ ও ২৮ রেজিমেন্ট অব নেটিভ আর্টিলারি সমন্বয়ে এক শক্তিশালী সামরিক দল গঠন করে। U Kiang Nangbah  এবং বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলতে থাকলো।
 
২৮শে মার্চ ১৮৬০ সালে কিছু সংখ্যক খাসিয়া গেরিলা সিলেটের জাফলং নামক স্থানে অবস্থান করেন এবং পরবর্তী দিবসে প্রায় ২০০ জন খাসিয়া যোদ্ধা কালাগুল-এ (সিলেট হতে দশ মাইল অদূরে) অবস্থান নিতে থাকেন। তারা গোয়াইনঘাট থানা ধ্বংস করে দেন। এ সময়ে ৪০০ জন লোক পূর্ব জাফলং এবং ১০০০ জন লোক পূর্ব দিকে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং ৫০০ জন লো জয়ন্তিয়ার রাজবাড়ী পাহারা দিতে থাকেন। মার্চের ৩০ তারিখে জয়ন্তিয়াপুর থানা ধ্বংস করা হয়। তিনটি পুলিশ ক্যাম্প দুটি জয়ন্তিয়াপুর এবং একটি মুলাগুলে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়। এ আন্দোলন প্রশমিত করার জন্য সিলেটের কালেক্টর মি. ব্রালফুর জয়ন্তিয়াপুরে সিলেট ইনফানট্রি প্রেরণ করেন। ব্রিটিশরা ঢাকা হতে ইউরোপীয় রেজিমেন্ট জয়ন্তিয়াপুরে প্রেরণ করতে বাধ্য হয়। সিলেট শহর এবং ট্রেজারি রক্ষার জন্য ইউরোপীয় সেনা বাহিনী সহ স্থানীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়। জয়ন্তিয়া রাজা এবং যোদ্ধাদের সহিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। (সূত্র ড. এইচ বারে- ঢাকা কমিশনের ফাইল)। ১৮৬০ সালের এপ্রিল মাসের শেষ তিনটি থানা পুনঃস্থাপন করা হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ফলে সিলেট অঞ্চল খাসিয়াদের এ সশস্ত্র আন্দোলন প্রশমিত হতে বাধ্য হয় কিন্তু জয়ন্তিয়া পাহাড়ে সেটি আস্তে আস্তে সংগঠিত হতে থাকে।

এরমধ্যেই U Kiang Nangbah মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং টস Kara তে পশ্চাদপসরণ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে দেশপ্রেমই ছিল তার নিজের শত্রু এবং প্রতারণা। নর্থিয়াংয়ের দলই U Mon  এবং তার ডানহাত Long Sutnga, উ কিয়াং নংবেহের শারীরিক অসুস্থতা ও অবস্থানের খবর ব্রিটিশ সৈন্যদের অবহিত করে দেন। ২৭ ডিসেম্বর ১৮৬২ Long Sutnga’র পথ নির্দেশে ল্যাফটেনেন্ট সেডলিয়ার (Lt. Sadlier)  খুব ভোরে আটক করেন। অসুস্থ স্বত্বেও উ কিয়াং নংবাহ কঠোরভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। U Kiang Nangbah কে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো হয় এবং ১৮৬২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিকেল ৫ টায় ইউমিউসিং (Yawmusing) এ গ্রামবাসী ও সৈন্যদের সামনে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। U Kiang Nangbah সাহসের সাথে ফাঁসির রশি নিজের গলায় পরিধান করেন। ফাঁসি কাস্টে দাড়িয়ে নিজ জাতির উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলেন যা অবিস্মরণীয়।

সে সময় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “উপস্থিত ভাই ও বোনেরা! দয়া করে সতর্কতার সাথে আমার মুখের দিকে তাকাবেন। যখন আমার ফাঁসিতে মৃত্যু ঘটবে। যদি আমার মুখ পূর্বদিকে ঘুরে যায় তবে আমার মাতৃভূমি ১০০ বছরের মধ্যে স্বাধীন হবে; আর মুখ যদি পশ্চিম দিকে ফিরে যায় তবে তা চিরদিন পরাধীন থাকবে।” কেউই তার এ মহাবাণীকে ভুলতে পারেনি এবং ১০০ বছরের মধ্যেই ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়। নিজ মাতৃভূমির জন্য অকৃত্রিম ভালবাসাও সর্বোচ্চ ত্যাগ চিরদিন সোনার হরফে লেখা থাকবে।

আবদুল হাই আল-হাদী, লেখক ও পরিবেশকর্মী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত