মিহিরকান্তি চৌধুরী

০৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৩:৩৯

সভা-সমিতি ও মঞ্চ সংস্কার

আমাদের সমাজে আনুষ্ঠানিকতা দিনদিন বাড়ছে। বিভিন্ন সভা-সমিতিতে যাই, কখনও নির্ধারিত আলোচক, অতিথি হয়ে, কখনও বা দর্শক-শ্রোতা হয়ে। বিগত বছরগুলোতে অনেক মধুর অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তিক্ত অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হয়েছে। কিছু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সভা-সমিতি দিন দিন ভিন্ন রূপ নিচ্ছে। সৃজনশীল মানসিকতায় তার সংস্কার প্রয়োজন।

অনেক সভা অনুষ্ঠানে আমি নিজেই আয়োজক ছিলাম। আমার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের অনেক বড়ো বড়ো অনুষ্ঠান, গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠান হয়েছে। বরেণ্যে ব্যক্তিত্ব, পণ্ডিতরা অতিথি ছিলেন। আমি কোনওদিন সভাপতিত্ব করিনি। কারণ আমার বোধ হলো, যে বরেণ্যে ব্যক্তিত্ব, পণ্ডিতরা বড় অতিথি হিসেবে এসেছেন তাদের সাথে মঞ্চ শেয়ার করার যোগ্যতা আমার হয়নি। আমি দর্শক সারি থেকে এস সময়মতো স্বাগত বক্তব্য দিয়ে ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন। দুএকবার মঞ্চে বসলেও এসকল জ্ঞানীগুণির চেয়ে দূরে, ওই কোণার এক আসন। সেখানে শুরুতে থাকলেও নেমে পড়তাম। আয়োজন দেখভালের বিষয়ও ছিল। বরেণ্যে শিক্ষাবিদ প্রফেসর বাহাউদ্দিন জাকারিয়া ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আজিজ আহমেদ সেলিম আমার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের অনেক অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন। সভা-সমিতির বর্তমান হালচালে যারপর নাই বিব্রত হতে হয়। কয়েকটি বিষয়ের প্রতি মনোনিবেশ করা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে দর্শক সারি থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের গণপরিচয় দান বন্ধ করতে হবে। এটা উগ্র মানসিকতার এক বীভৎস প্রকাশ। এ ধরনের পরিচয় বলিউড পাড়ায় রাজকাপুরের ছেলে বা নাতির বিয়েতে মানানাসই। বড়ো বড়ো তারকা আসবেন। তাঁদের পরিবেশে তাঁদের প্রোফাইল তা দাবি করতে পারে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যেতেই পারে।

অতিথি সম্বোধন সংক্ষিপ্ত করতে হরে। সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি,  আলোচকবৃন্দের নাতিদীর্ঘ পরিচয়ের কী গুরুত্ব থাকতে পারে? যত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই হোন না কেন নির্ধারিত অতিথির বাইরে কাউকে মঞ্চে তোলা যাবে না।

মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিদের বক্তব্য শুরু হওয়ার পর দর্শক-শ্রোতা সারি থেকে কাউকে বক্তব্যের সুযোগ দেওয়া যাবে না। বিশেষ অতিথি বা প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর তো প্রশ্নই ওঠে না। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও সভাপতির বক্তব্য মিষ্টি ও দইয়ের মতো। শেষ দুই আইটেম। এরপর আর অন্য আইটেম চলে না। বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বা প্রতিষ্ঠানে সমিতি বা প্রতিষ্ঠান বক্তব্য শুরু করলে আর কেউ কথা বলবে না। এই দইয়ের মাঝখানে অনেকে লালশাখ বা মাংস আনতে বলে। এঁরা ‘ঙ’, ‘ণ’ বা ‘ৎ’ এর মতো, মাত্রা নেই।

১৯৮২ সালে আমার এক কাজিনের বিয়েতে বরযাত্রীদের খাবারের সময় কনেপক্ষের লোকজন সৌজন্যবশতঃ বরযাত্রীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনাদের যা ভালো লাগে নেবেন। তখন দই চলছে, একাংশ দই খেতে খেতে কললেন, খাসির মাংস পাঠান। এঁদের পরের প্রজন্ম এখনও সমাজে ক্রিয়াশীল।
   
প্রধান অতিথির বক্তব্য চলাকালে প্রধান অতিথির আসনে কোনো অতিথি বসবেন না, তাঁদেরকে বসার জন্য ফটো সাংবাদিকরা অনুরোধ করে থাকেন, তা তাঁরা করবেন না। এটা রুচির পরিপন্থী।  সাংবাদিকরা অনুষ্ঠান  শুরুর পূর্বে প্রধান অতিথির ডামি বক্তব্য গ্রহণ করবেন না। এটা রুচির পরিপন্থী। রুচির চেয়ে প্রচারমাধ্যমে স্থান পাওয়া বা দেওয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। অতিথিরাও এ ধরণের বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকবেন। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া নির্ধারিত অতিথির বাইরে ‘শুভেচ্ছা বক্তব্য’ প্রদানের জন্য কাউকে ডাকা যাবে না।

সভাপতি ও প্রধান অতিথি নির্ধারিত থাকেন, সংখ্যায় মোট দুইজন। বিশেষ অতিথি,  আলোচকদের সংখ্যা যতদূর সম্ভব সীমিত রাখতে হবে। বেশি সংখ্যক অতিথি থাকলে অনুষ্ঠানে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয় : ক. সকল অতিথির প্রস্তুতি থাকে না। উপস্থিত বক্তৃতা দেন। তাঁরা জ্ঞানী-গুণি হলেও ভালো বক্তব্য দিতে পারেন না।

খ. তাঁরা হালকাভাবে অনেক বিষয়ের অবতারণা করে বিষয়ঠির বারোটা বাজিয়ে দেন। সভাপতি, প্রধান অতিথি, অন্য বিশেষ অতিথি বা আলোচকদের কেউ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভালো জানলেও, বলার ইচ্ছা থাকা সত্বেও নিজেকে ঘোলা আলোচনায় সম্পৃক্ত করতে চান না।  

গ. অতিথি বা আলোচকদের সংখ্যা বেশি হলে সভাপতি ও প্রধান অতিথির মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তব্য যারপর নাই সংক্ষিপ্ত করতে হয়। সভাপতি ও প্রধান অতিথি সাধারণত জ্ঞানী-গুণি ব্যক্তিত্বরাই হয়ে থাকেন। সময়ের অভাবে তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য থেকে বঞ্চিত হয় দর্শক-শ্রোতা।  

যেকোনো পুরস্কার বিতরণী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের পূর্বে পুরস্কার প্রদান করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দর্শক-শ্রোতা চলে যেতে পারে, হল খালি হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি আশঙ্খায় পুরস্কার বিতরণ বিলম্বিত করা হয়। এমনকি সভাপতির বক্তব্যের পর তা প্রদান করা হয়। এটা রীতিবিরূদ্ধ। প্রধান অতিথির বক্তব্যের সময় গায়ের জোরে দর্শক আটকিয়ে রাখা প্রধান অতিথিকে অসম্মান করার নামান্তর। কেউ গেলে যাবে, যাক, তাঁকে যেতে দিন। চিরায়ত রুচিকে বাধাগ্রস্থ করা নানামাত্রার অসৌজন্যের সৃষ্টি করে। অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তুলতে সভাপতির বক্তব্য প্রধান অতিথির  বক্তব্যের পূর্বে দেওয়ার রেওয়াজ চালু করা যেতে পারে। দর্শক-শ্রোতা এমনিতেই একঘেঁয়ে বোধ করবে না যদি অতিথি ও আলোচকদের সংখ্যা কম হয়।   

ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান সভাপতিত্ব করবেন, মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন সহকারী প্রতিষ্ঠান প্রধান। গভর্ণিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি বা ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্যদের মঞ্চে আসন দেওয়ার চেয়ে গ্রহণ করাটা বিব্রতকর হওয়া উচিত। তবে গভর্ণিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি বা ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্যদের মধ্য থেকে সকলের প্রতিনিধি হিসেবে একজনকে মঞ্চে আসন প্রদান করা যেতে পারে। শিক্ষক প্রতিনিধিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো অনুষ্ঠানে মঞ্চে আসন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না কারণ তাঁরা যাঁদের প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁরা তো ঐ অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকেন। সকল শিক্ষক যেখানে যাবেন না সেখানেই তাঁরা তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। শিক্ষা বিভাগ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তদারককারী কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মকর্তাবৃন্দ (প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদমর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ) আমন্ত্রিত হয়ে থাকলে তিনি বা তাঁরা মঞ্চে আসন অলংকৃত করবেন। প্রয়োজন সাপেক্ষে আমন্ত্রিত না হয়েও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে তাঁদের অনুরূপ পরিবেশ দ্বারা সম্মানিত করা বাঞ্ছনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ মঞ্চে আসন অলংকৃত করার অগ্রাধিকার সংরক্ষণ করেন। ডিন, বিভাগীয় প্রধান, রেজিস্ট্রারও সভা, অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাত্রানুপাতিক মঞ্চে আসন অলংকৃত করার অধিকার রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় বা সেন্ট্রাল কোনো প্রোগ্রামের স্বাগত বক্তব্য রেজিস্ট্রারকেই দিতে হয়। বিভাগীয় প্রোগ্রামে ভিন্ন কথা।

প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথির পর সম্মানিত অতিথি বলে কিছু নেই। মোড়ক উন্মোচন, প্রদীপ প্রজ্বলন, উদ্বোধনের মতো মাঙ্গলিক সকল কাজ প্রধান অতিথির অধিকারভুক্ত। অন্য কথায় এগুলো তাঁদের prerogative. প্রধান অতিথিকে উপস্থিত রেখে মোড়ক উন্মোচক, প্রদীপ প্রজ্বলক, উদ্বোধক হিসেবে অন্য অতিথির accommodation (বাংলা যুৎসই শব্দ পেলাম না বলে দূঃখিত) করা প্রধান অতিথির প্রতি, প্রচলিত আদব-কায়দার প্রতি এবং সর্বোপরি রুচির প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সামিল।

আজকাল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও স্মারক বক্তৃতায় সেমিনারের মতো অনির্ধারিত আলোচকদের আলোচনা, প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে। কর্তৃপক্ষ সেমিনার ও স্মারক বক্তৃতার মধ্যে পার্থক্য বুঝেন না। স্মারক বক্তৃতা সম্মানসূচক। সেটি undisputed. স্মারক বক্তৃতার কোনো বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না, প্রশ্ন তোলা যাবে না। ঐ দিনের বা মুহুর্তের জন্য এটি masterpiece. অনেক সময় স্মারক বক্তৃতার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক স্বাগত বক্তব্য দিতে গিয়ে আরেকটি নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে ফেলেন যেটিকে ঐ পর্বের দ্বিতীয় স্মারক বক্তৃতা বলা যেতে পারে। এ মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে এবং উচ্চপদে আসীন হলেও যে একাডেমিক ঘাটতি রয়ে গেছে নিজেদের মধ্যে তা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
 
আলোচনা অনুষ্ঠান যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত হবে এবং সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান সত্বেও যেসকল অতিথি নির্ধারিত সময়ের পূর্বে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করবেন তাঁদের আমন্ত্রণ না জানানোই ভালো। সমাজে অনেক জ্ঞানী-গুণি ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যাঁরা ব্যক্তির বাইরেও উচ্চ পদের ধারক। অনেক আয়োজক সেই সকল পদের মর্যাদা বুঝেন না বলে আপাতদৃষ্টিতে উপস্থিত গুণি অতিথিকে মঞ্চে আহ্বান করে পরে তাঁর সঠিক মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হন।

সবচেয়ে ভালো, নির্ধারিত অতিথির বাইরে কাউকে মঞ্চে আহ্বান না করা। এর মাধ্যমে সব কুল রক্ষা হবে। অতিথিদের কাঠামো পরিবর্তন করতে হলে ইতোমধ্যে স্থিরকৃত অতিথিদের মতামত নিয়ে করতে হবে। স্থিরকৃত অতিথিদের মতামত না নিয়ে অতিথিদের কাঠামো পরিবর্তন করা অতিথিদের প্রতি, প্রচলিত আদব-কায়দার প্রতি এবং সর্বোপরি রুচির প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সামিল। সম্প্রতি এই ধারার মানসিকতা একটি সিণ্ড্রোমে রূপ নিয়েছে।  

সভার সভাপতি ব্যক্তির উর্দ্ধে। তাঁকে নানা পর্যায়ের বক্তাদের ‘বন্ধু সভাপতি’, ‘স্নেহভাজন সভাপতি’, ‘উপস্থিত সভাপতি’ ‘আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতি’ হিসেবে সম্বোধন করাটা কতটুকু সৌজন্যমূলক এবং প্রচলিত আদব-কায়দার প্রতি শ্রদ্ধাশীল তা নিয়ে একটি প্রশ্ন করা যেতে পারে। অবশ্যই তাঁকে ‘মাননীয় সভাপতি’ বা ‘সম্মানিত সভাপতি’ বলতে হবে। সভাপতির বয়স কি একটা বিষয় হতে পারে? জজ কোর্টে, হাইকোর্টে বা সুপ্রিমকোর্টে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বক্তারা বিচারককে ‘বন্ধু বিচারক’, ‘স্নেহভাজন বিচারক’, ‘উপস্থিত বিচারক’, ‘অনুজপ্রতিম বিচারক’ ইত্যাদি কি বলতে পারবেন? একবার বলে দেখুন না!!!

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত গণ্যমান্য অতিথিদের সাথে থাকেন তাঁদের গাড়িচালক, ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। অতিথিসহ দর্শক-শ্রোতাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকলে গাড়িচালক, ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরাও যেন তা থেকে বঞ্চিত না হন সে ব্যাপারে আয়োজকদের সজাগ থাকতে হবে। গাড়িচালক, ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরাও অতিথির পর্যায়ে পড়েন। কিন্তু ফটোগ্রাফার, বিদ্যুৎ কারিগর, সাাউণ্ড সিস্টেমের সাথে জড়িত লোকজন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পেশাদার ব্যক্তিরা অতিথি নন। তাঁদের আপ্যায়ন অতিথিদের আপ্যায়নের সমগোত্রীয় নয়। তাঁরা খাবার পাবেন তবে আপ্যায়িত হবেন না। খাবারটা অনুষ্ঠানের শেষে। অনেক অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফার প্রথম ব্যাচেই খেতে বসে। ফটো কে তুলবে? তাঁর মগজের ছিদ্র অনেক বড়ো বলেই তা করে। সংশ্লিষ্টদের সম্বিৎ যত তাড়াতাড়ি ফিরে, ততই সমাজের মঙ্গল।  

মিহিরকান্তি চৌধুরী: লেখক, অনুবাদক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত