মিহিরকান্তি চৌধুরী

১৬ মার্চ, ২০২৪ ২২:০৯

বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদের অকাল প্রয়াণ ও প্রসঙ্গকথা

সাদি মহম্মদ

বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। প্রয়াণের কারণ হিসেবে জানা গেছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে জানা গেছে, সংগীতে অসামান্য অবদানের বিপরীতে তাঁর যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায়, রাষ্ট্রীয় সম্মান না পাওয়ায় অভিমান করে তিনি এই পথ বেছে নিয়েছেন। এটা যোগাযোগ মাধ্যমে, প্রচার মাধ্যমে ছড়িয়েছে। শিল্পীর ছোটোভাইরও অনুরূপ বয়ান এসেছে। একজন বর্ষীয়ান প্রথিতযশা শিল্পীর জন্য তা কতটুকু মানানসই। ঘটনাপ্রবাহ তো ভাবনা জাগানিয়া।

শিল্পীরা অভিমানী হয়ে থাকেন এটা সত্য তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি রবীন্দ্রসমুদ্রে অবগাহনকৃত একজন ব্যক্তি, রবীন্দ্রনাথের আদর্শে উজ্জীবিত একজন শিল্পী, রবীন্দ্রসংগীতের একজন একনিষ্ঠ ছাত্র ও একজন মনস্বী সংগীত গুরু মূল্যায়ন না হওয়ায়, রাষ্ট্রীয় সম্মান বা পুরস্কার না পাওয়ায় অভিমান করে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিতে পারেন না। কোনও বিবেকসম্পন্ন বোধ ও যুক্তির কাছে এটা টেকে না। কোথাও না কোথাও একটা ফাঁক আছে। শিল্পী যথাযথ সম্মান পাননি বিধায় সেই অভিমান থেকেই তিনি মৃত্যুকে বেছে নেন বলে মনে করছেন তাঁর কাছের আরও মানুষেরা। সাদি মহম্মদের মৃত্যুর পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী অনিমা রায় জানিয়েছেন, কখনও মরণোত্তর পদক দিলে তা ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন সাদি মহম্মদ কারণ জীবদ্দশায় এ জাতি তাঁকে নাকি সম্মান করেনি।

অনিমা রায় বা শিল্পীর ভাই বা অন্য যেকোনো নিকটজনের ভাষ্য হতে পারে, “সাদি মহম্মদের মতো একজন মানুষ এখনও জাতীয় কোনও পুরস্কার পাননি, এটা কি মানা যায়? রবীন্দ্রসংগীতে যে মানুষটার এত অবদান, এত এত শিল্পী যিনি তৈরি করেছেন—তাঁর কোনো স্বীকৃতি নেই?” এটা নিকটজনের আদর-আহ্লাদের কথা। তবে সেটাকে শিল্পীর বয়ান হিসেবে চালিয়ে দেওয়া তো শিল্পীকে অপমান করার শামিল। এত বড়ো একজন শিল্পী পুরস্কার বা আনুষ্ঠানিক সম্মানের মুখাপেক্ষী হবেন তা অনুমান করাও কঠিন। আমরা এটা মানতে পারি যে তিনি মারা গিয়েছেন, আরও মানি তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এটাও মানতে পারি তিনি অভিমান থেকে আত্মহত্যা করেছেন কিন্তু এটা মানতে রাজী নই যে, তাঁর অভিমানের জায়গাটা পুরস্কার বা রাষ্ট্রীয় সম্মানকেন্দ্রিক। অভিমানের ব্যক্তিগত অনেক পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে। ব্যক্তি যেখানে থাকেন, ব্যক্তিত্ব সেখানেই অবস্থান করে। অভিমানের জায়গাটা যদি পুরস্কার বা জাতীয় সম্মানকেন্দ্রিক হয়ে থাকে তাহলে শিল্পীকে তো অসম্মান ও অস্বীকার করা হবে, তাঁর শিল্পীসত্তাকে জানানো হবে অস্বীকৃতি এবং খাটো করা হবে তাঁর অবদানকে। একই সাথে অসম্মান ও অস্বীকার করা হবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে, তাঁর দ্বারা স্থাপিত প্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতীকে, তার বিদ্যায়তনিক কাঠামো ও মূল্যবোধকে। তখন মনে করতে হবে সাদি মহম্মদ যে বিশ্বভারতীতে সংগীতে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন সেটা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ দ্বারা স্থাপিত প্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতী নয়, একই নামে সেটার প্রতিষ্ঠাতা হবেন কোনও বারীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, চট্টোপাধ্যায়, বসু, দত্ত, দাস বা দেব। সোজা কথা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ থেকে ভিন্ন এক ব্যক্তি। আরও কথা আছে। এমন হলে তাঁর পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ‘রবিরাগ’ মাত্রা হারিয়ে ফেলবে। সেটা হয়ে উঠবে, ‘সাদিরাগ’ । দুই রাগের মধ্যে অর্থের দিক থেকে সীমাহীন পার্থক্য। শত শত সংগীত শিক্ষার্থী তাঁর কাছে তালিম নিয়েছেন, তিনি সংগীতের ওস্তাদ। তাঁর ভক্তের সংখ্যা হাজার হাজার। আমি নিজেও।

রবীন্দ্রসংগীতের কত শিল্পী! তারপরও একেক শিল্পীর একেকটা বা কোনও সময় একাধিক সিগনেচার সঙ আছে যা ওই শিল্পীর বিশেষ এক পরিচয়। যেমন সাদি মহম্মদের কণ্ঠে, “এত সুর আর এত গান…”। একইভাবে নীলিমা সেনের কণ্ঠে, “আমার না বলা বাণী…”, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে, “মায়াবন বিহারিণী…” বা “প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন “, সুচিত্রা মিত্রের কণ্ঠে, “কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি…”, সাগর সেনের কণ্ঠে, “তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা…”, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে, “আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি…”, দেবব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠে, “ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু…” ইত্যাদি। সব কথার মূল কথা, শিল্পী সাদি মহম্মদ পুরস্কার বা জাতীয় সম্মানকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যা করতে পারেন না। আগেই বলেছি, অভিমানের জায়গা অন্য কোনও ক্ষেত্র হতে পারে। এমনও হতে পারে তিনি কোনও একক ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তি বা কোনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা সংস্কৃতিঘনিষ্ঠ কোনও গ্রুপের বিরাগভাজন ছিলেন বলে সুপরিকল্পিতভাবে তাঁকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করা হয়েছে যাকে কিনা বলে প্রভোক করা। নিজের জান নিজেই শেষ করেছেন কিন্তু যদি প্ররোচনা বা প্রভোকেশন থাকে সেটা হত্যার পর্যায়ে পড়ে। সুশীল মনের সংস্কৃতিজনরা এ বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে নিয়ে তার তদন্তের ব্যবস্থা যদি করেন তাহলে কিছু না কিছু বের হয়ে আসতেও পারে।

বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের সবকিছু কি শুদ্ধতা উত্তীর্ণ? পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননার বিষয়টি বিগত কয়েক বছর ধরে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও গুণী কবি নির্মলেন্দু গুণ বাগাওয়াত করে বা বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়েছেন। পুরস্কার কমিটিও তাঁর সামনে আত্মসমর্পণ করে সাথে সাথেই দিয়েছেন। শুনেছি বাংলা একাডেমি পুরস্কারেও অতীতে এমন নজির নাকি আছে। এগুলো বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংগীতের গুণগত মানের স্থায়িত্বের পথে বিশেষ বাধা।

অনেক যোগ্য ব্যক্তি পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাচ্ছেন না। এর অর্থ এই নয় যে, যাঁরা পাচ্ছেন তাঁরা বা তাঁদের কেউ কেউ এগুলোর অযোগ্য। মোটেই না। কোনও বিশেষ মানদণ্ডের আলোকে প্রত্যেককে দেওয়া হয়। আজকাল টেকনিক্যালি সাউন্ড লবিংও একটা মানদণ্ড। কেউ কেউ পুরস্কার ফেরতও দিয়েছেন। যেমন জাকির তালুকদার মহোদয়। যাঁরা পুরস্কার পাননি তাঁদের মধ্যে দুএকটি নাম বলি। প্রথমেই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, বোদ্ধা সনজিদা খাতুন। আরেকজনের নাম বলি, কবি ময়ূখ চৌধুরী। এগুলোর পেছনে মানে তাঁদের সম্মাননা না পাওয়ার নানা কারণের এক কারণ পদ্ধতিগত ত্রুটি। শুনেছি স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও শিল্পকলা পুরস্কার পূর্বে পেয়েছেন এমন কেউ নতুন কাউকে রেফার করেন যথারীতি ফরম পূরণ করে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এমনও নাকি আছে যে, প্রস্তাবিত ব্যক্তিকে সম্মতিপত্র দিতে হয় নিজে লিখে দস্তখতসহ বা নির্ধারিত ফরমে শুধু নাম, দস্তখত, পদ উল্লেখ করে। আল্লাহ, ভগবান, গড, ঈশ্বরসহ সৃষ্টিকর্তার সকল নামের দোহাই, এই ফরম পদ্ধতি বন্ধ হোক। সার্চ কমিটি বের করুক কে উপযুক্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি উপযুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদে ডা. সামন্তলাল সেনকে খুঁজে বের করতে পারেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যদি সাইফুর রহমান, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মতো মেধাবী লোককে সনাক্ত করতে পারেন, খুঁজে বের করতে পারেন, তাহলে সার্চ কমিটি কেন পারবেন না? ফরম, সম্মতি প্রদান ও রেফারেল পদ্ধতি এবং বিশেষ বিশেষ পদাধিকারীর ডি.ও. লেটার পদ্ধতি বাতিল হলে বিষয়টি সুস্থধারায় ফিরে আসবে বলে মনে হয়। পূর্বে পদক, পুরস্কার পেয়েছেন এধরনের লোকের কাছে কেউ আর লবিং করবেন না। দুই পক্ষের অনেকেরই (সবার নয়) মানইজ্জত লাটে উঠছে, তবে তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

শুনেছি, শিল্পকলা পুরস্কারের জন্য সাদি মহম্মদের সম্মতি গ্রহণ করা হয়েছে। এটা নাকি তাঁর আত্মহত্যার আগের দিন বা আরও একদিন আছে। এটা একটা অপমান। দিলে দেবেন, না দিলে নাই। এরকম কেন হবে? বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কনফারেন্সে সিনিয়র ব্যক্তিত্বদের চা-নাশতা, লাঞ্চ, ডিনারের কুপন দেওয়া হয় না। তাঁদের কুপন আছে, আয়োজক কমিটি নীরবে ক্যাটারারকে দিয়ে দেন। এই সকল সম্মানিত ব্যক্তিদের আদর আপ্যায়ন করে খেতে বসানো হয়। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় বলেই সম্ভবপর হয়। সেখানে এগুলোর আয়োজনে একাডেমিসিয়ানরা থাকেন। আর শিল্পকলা, বাংলা একাডেমি ও মন্ত্রণালয়ে থাকেন প্রশাসকরা, আমলারা। বিদ্যায়তনিক ও প্রশাসনিক আলাদা দুই ধারা !!! এর চেয়ে বেশি আর কী বলতে পারি?

আবারও বলতে হয় রবীন্দ্রনাথকে ধারণের কথা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্র আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগেভাগেই রবীন্দ্রনাথের গান দিয়ে দেশের জাতীয়সংগীত নির্ধারণ করেছিলেন। আর ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর দেশের জাতীয়সংগীত নির্ধারণ করতে পাকিস্তানের লেগেছিল চার বছর। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, বোদ্ধা সনজিদা খাতুন রবীন্দ্রনাথের এক আদর্শ অনুসারী। তাঁকে এই দেশে কী কী পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল? বিদেশে পেয়েছেন। ভারতে পদ্মশ্রী পেয়েছেন, ডি. লিট. দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের দেশে পুরস্কার ও সম্মাননার তালিকা থেকে তাঁর নাম ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। ছায়ানটের মতো প্রতিষ্ঠানও কী কী পুরস্কার পেয়েছে জানি না। কিন্তু সনজিদা খাতুন কোনওদিন কোনও প্রকারের দুঃখ বা ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। আমার বিশ্বাস, সাদি মহম্মদও পুরস্কার বা রাষ্ট্রীয় সম্মান নিয়ে কোনও ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। এটা পরিকল্পিত কোনও এক নীলনকশার অংশ। কারণ পরিবারে তাঁর বাবার একটা মূল্যায়ন আছে। স্বাধীনতার আগে তাঁদের বাড়ি মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের আনাগোনার এক জায়গা ছিল। স্বাভাবিকভাবে তাঁদের বাড়িটি স্বাধীনতাবিরোধীদের টার্গেটে পরিণত হয়, টার্গেটে পরিণত হন তাঁর বাবা সলিমউল্লাহ। স্বাধীনতাবিরোধীরা সলিমউল্লাহকে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি (তাঁদের বাড়ির পাশের) সড়কের নামকরণ করা হয় সাদি মহম্মদের বাবা সলিমউল্লাহর নামে। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি সাদি মহম্মদকে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করে। তিনি চ্যানেল আই আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন। সবচেয়ে বড়ো সম্মান শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং ভক্তকুলের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

সাদি মহম্মদ শুধু গায়কই ছিলেন না; তিনি ছিলেন সংস্কৃতির রক্ষক, ঐতিহ্যের মশালবাহক। তাঁর প্রতিটি গান রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলার প্রাণের সারমর্মকে প্রতিধ্বনিত করেছিল, শ্রোতাদের বিমোহিত করেছিল এবং পরম এক আবেগকে জাগিয়েছিল যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

সাদি মহম্মদের মায়ের মৃত্যু তাঁকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে। ট্রমার দিকে চলে যান। হতেই পারে। সাদি বিয়েসাদি করেননি। কাজেই সন্তানাদি ছিল না। মা ছিলেন একাধারে মা ও অন্যভাবে তাঁর ছেলে, তাঁর মেয়ে, তাঁর সবকিছু। মা কেবল একজন মা ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তির স্তম্ভ, জীবনের উত্তাল সমুদ্রে আশার আলো। তাঁর চলে যাওয়ার সাথে সাথে, সাদির বিশ্বের ভিত্তি ভেঙে যায়।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের গোলকধাঁধায়, যেখানে রাজনীতি আবেগের সাথে জড়িত, সাদি ষড়যন্ত্র এবং কারসাজির জালে হয়ত আটকা পড়েছিলেন। শৈল্পিক সৌহার্দ্যের আড়ালে ঈর্ষা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছায়া লুকিয়ে আছে, সৃজনশীলতার সারমর্মকে বিষাক্ত করে। ফিসফিস ষড়যন্ত্রে পরিণত হয়েছিল এবং এক পর্যায়ে তা পাহাড় হয়ে হয়ত দাঁড়িয়েছে।

আমাদের কথা হল, সাদি মহম্মদ আত্মহত্যা করতে পারেন। তিনি হত্যার শিকারও হতে পারেন। সেটা সরাসরি, টেকনিক্যালি ওয়েল প্লানড বা প্রভোকেটিভ মার্ডার। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে তাঁর মরদেহ না নেওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। পারিবারিক ধর্মীয় অনুশাসন থেকে তো হতেই পারে। সেটা হলে ভালো, না হলে কোনও কিছুকে আড়াল করার জন্য মহল বিশেষের প্রচেষ্টাও তো হতে পারে। তিনি বিষণ্ণতায় ভুগেছেন, ট্রমাটিক হয়েছেন। এগুলোসহ তাঁর আত্মহত্যা পর্যন্ত মানতে পারি। কিন্তু পুরস্কার বা রাষ্ট্রীয় সম্মান না পাওয়ার অভিমানের বিষয়টি কোনও না কোনও মহলের ষড়যন্ত্র। তদন্ত হোক।

সাদি মহম্মদের আত্মা শান্তি লাভ করুক। আমরা তাঁর জন্য প্রার্থনা করি।

সব শেষে বাংলাদেশের পুরস্কার নিয়ে দুএকটি কথা। ছোটোবেলা গ্রামে ছিলাম। পাকিস্তান আমল। দূষণ বলে তেমন কিছু ছিল না। চাঁদের দিকে তাকাতাম। বইপুস্তকে রূপকথার গল্প পড়েছি, মা ও বলতেন, দেখিয়ে দিতেন, চাঁদের বুড়িকে। সে ওখানে সুতা কাটে। আসলে চাঁদের পাহাড়ের ছবি, দেখতে মনে হয় বুড়ির সুতা কাটার মতো। । এখন দূষণ বেড়েছে। চাঁদের বুড়িকে আর দেখা যায় না। বুড়ি সেখানে এখন নেইও।

কোথায় গেছে বুড়ি?

বুড়ি বাংলাদেশে এসেছে।

এখানে কী করে সে?

বুড়ি এখানে সুতা কাটে।

সুতা কাটে মানে? কিসের সুতা ?

বুড়ি বাংলাদেশের পুরস্কারের সুতা কাটে।

এর থেকে মুক্তির উপায় কী?

বুড়িকে তাড়াতাড়ি চাঁদে ফেরৎ পাঠাতে হবে। এখানে সে উৎপাত করে।

বুড়ির পেছনে লোক আছে। এদেরও চিকিৎসা দরকার।

বাংলাদেশে সম্মান, বাংলাদেশের সম্মান নতুন মাত্রায় উন্নীত। কর্পোরেট মাত্রা !!! এক ধরনের লবিং প্লাবন, বন্যা। সেই বন্যায় সাগর পর্যন্ত আক্রান্ত, কবলিত।

পুরস্কার বা সম্মান আপেক্ষিক একটি বিষয়। বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে একই অভিযোগে বটুকেশ্বর দত্তের বিচার হয়। ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি হলেও বটু দত্তের ফাঁসি না হওয়াতে বটু দত্ত অপমানিত বোধ করেছিলেন। ফাঁসিও একটা সম্মান!!!
বর্তমান বাংলাদেশে সম্মান না পাওয়াটাই বড়ো সম্মান।

সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!

  • মিহিরকান্তি চৌধুরী: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট এবং লেখক, অনুবাদক ও নির্বাহী প্রধান, টেগোর সেন্টার, সিলেট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত