সৌরভ দাস

২২ আগস্ট, ২০১৬ ২২:০৫

অল্প একটু ‘ভুয়া’ গণতন্ত্রের ছোঁয়া!

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নিয়ে অনেক ধরনের বিতর্ক আছে। সব বিতর্ক ছাপিয়ে যে বিষয়টা আমাদের চোখে ধরা পড়ে সেটা হলো- গণতন্ত্র মানে প্রকৃতপক্ষে জনগণের শাসন। অর্থাৎ জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। অর্থাৎ সত্যিই যদি গণতন্ত্র একটা দেশে থাকে তাহলে সেখানে সমাজতন্ত্রের প্রশ্ন অর্থহীন। কারণ সমাজতন্ত্রও এরকম চায়- জনগণের শাসন।

আরেকটু পরিষ্কার করে বললে-- দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণী শ্রমিক শ্রেণীর শাসন। সুতরাং গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রেরই একটি পরিপক্ব রূপ ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও স্রেফ ভোট দেয়ার অধিকারকে অনেকে গণতন্ত্র বলে চালিয়ে নিচ্ছেন আর সেটার সাথে সমাজতন্ত্রের তুলনা করে সমাজতন্ত্রকে ধুয়ে একেবারে শেষ করে দিচ্ছেন। সুতরাং বর্তমানে আমরা যে গণতন্ত্রের বুলি শুনি তা একরাশ গোঁজামিল ছাড়া আর কিছুই নয়। জনগণের সাথে স্রেফ প্রতারণা। হোক সেটা আমেরিকায় কিংবা বাংলাদেশে।

সে বিষয়ে বলতে গেলে অনেক বলতে হয়। আমি যদি ধরেই নিই গণতন্ত্রের যে সংজ্ঞা বর্তমানে অনেকে শুধু মন খুলে দু-একটা কথা বলা কিংবা বছর পাঁচেক পর পর একটা ভোট দেয়াকে নিয়ে দাঁড় করিয়েছেন সেটাকে ধরেই দু-একটা অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই।

যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই- বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিবেশ বড্ড বেশি আতঙ্কিত করে তোলে। এখানে রাজনীতি আর সন্ত্রাস একে অপরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। যখন ছোট্ট একটা সংগঠন করা শুরু করলাম দেখলাম এই ছোট্ট সংগঠনটির জনগণের স্বার্থে দাবিগুলোকে কেমনটি করে টুটি চেপে ধরে ক্ষমতাসীন সংগঠন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছোট্ট সংগঠনটি সম্পর্কে যত প্রকার বাজে এবং ভীতিকর কথা বলে হুমকি ধমকির মাধ্যমে দূরে রাখা যায় সেই চেষ্টা চলে প্রতিনিয়ত। এরকম সংকট সমস্যা মোকাবেলা করেও সংগঠনটি আজো টিকে আছে। হয়তো তারা ছাত্রদের দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন কিন্তু নিজেরা যে সরে গিয়েছেন আরো দূরে সে হিসেব রাখেন কি?

গত কিছুদিন আগে ভাবলাম যেহেতু গণতন্ত্র এতটাই বিপন্ন তাহলে বসে থেকে লাভ কি? একটু ভিন্ন ভাবে কাজ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের একটা কলেজে বসে থাকতাম ছুটির পর। বেশি না, মাত্র সাত দিন বসে ছিলাম। তাতেই অনেকগুলো ছেলে সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে গেলো। এই পরিমাণ ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত করতে হলে আমাকে আদু ভাইয়ের মত বসে থাকতে হত অনেকটি বছর।

যে কারণে উদাহরণটি টানলাম সে জায়গায় আসি। গণতন্ত্রের বর্তমান ভুয়া সংজ্ঞায়ই ফিরে যাচ্ছি। অর্থাৎ মনের সুখ দুঃখ, প্রতিবাদের কথা বলার স্বাধীনতা এবং বছর পাঁচেক পর একটা ভোট দেয়া। অন্তত এটুকুই যদি থাকতো এই বাংলাদেশ অনেক পরিবর্তন হয়ে যেতো। এখন আমরা এমন এক জায়গায় চলে গেছি যেখানে এই গণতন্ত্র নামক জিনিসটির ভুয়া সংজ্ঞার প্রতিফলনও দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে ছোট্ট একটা সংগঠনকেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠোর ভাবে।

মাঝখানে একটা সাহিত্য পত্রিকা বের করেছিলাম ক্যাম্পাসের কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে। সেটার উপরও ১৪৪ ধারা জারি করা হলো। এটা নাকি পড়া যাবে না। সাহিত্য পড়লে ছেলেরা যদি আবার একটু ভালো হয়ে যায়! কি সমস্যা তাহলে!

মাঝে মাঝে আমার ছোট সংগঠনের পক্ষ থেকে বড় সংগঠনকে একটু চ্যালেঞ্জ জানাতে ইচ্ছে করে, আসুন আমরা খানিকটা গণতন্ত্রের চর্চা করি। আপনারা আপনাদের মত, আমরা আমাদের মত অ্যাপ্রোচ করবো শিক্ষার্থীদের। তারপর দেখি কি হয়? জানি সেটা সম্ভব নয়। ভুয়া গণতন্ত্রও বুঝি আজ সোনার হরিণ!

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত