লিটন দেব জয়

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১২:২৪

লিটন নামের সেই ছেলেটি

২০১৪-১৫ মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একটি ছেলে ৫টি সেঞ্চুরিসহ করে ফেললো ১১৩৬ রান। মিডিয়া, সিনিয়র প্লেয়ার, বিসিবি সবার নজর কাড়লো। সবাই অবাক হয়ে দেখলো বাহারি সব শটে কবজির মোচড়ে এই ছেলেটি বাইশ গজের সবুজ ক্যানভাসে অপূর্ব সব চিত্রকর্ম এঁকে চলেছে। কখনো ডাউন দ্যা উইকেটে এসে বিধ্বংসী, কখনো রেশমি কোমল কাভার ড্রাইভ।

ফলস্বরূপ ১০জুন ২০১৫ সালে ফতুল্লায় ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ডাক পেলেন। নিজের জাত চেনাতে না পারলেও অভিষেকে ৪৪ রান তোলেন ৪৫ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কার সাহায্যে।

বার বার সুযোগ পেয়েও ওয়ানডে তেমন ভালো কিছু করতে পারেন নি। ফলে দল থেকে বাদ পড়েন। ঘরোয়া লিগে এতো অসাধারণ খেলা ছেলেটির জাতীয় দলে খেললে কি হয়ে যায়! সবাইকে ভাবালো ব্যাপারটা। এতো প্রতিভার প্রতি অবিচার!

জাতীয় দলে নিজেকে ফেরাতে মরিয়া ছেলেটি ২০১৭ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে করে ফেললো ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। সেবার আউট হয় ২১৯ রান করে। ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আবার ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেলো সে। এবার রেকর্ড করে। বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটি নিজের করে নিলো ছেলেটি। ২৫০করার পর নিজের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির আশা জেগেছিলো। শেষমেশ থামতে হয়েছে ২৭৪ রানে।

২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বিধ্বংসী সব শটে ৬১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেললেন। এই তো এরকমই হবার কথা। এতদিন কেন হচ্ছিলো না সেটাই আফসোস। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২টি ডাবল সেঞ্চুরি, ১২টি সেঞ্চুরি, ২০টি হাফ সেঞ্চুরির মালিকের ওয়ানডেতে কোনো হাফ সেঞ্চুরিও নেই। কী অবিশ্বাস্য!

নিজেকে চেনানোর জন্য বড় মঞ্চই হয়তো ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছিলো। ২০১৮ এশিয়াকাপ ফাইনাল। ভারতের বিপক্ষে তামিম ইকবালহীন ওপেনিংয়ে মিরাজকে নিয়ে নেমে গেলেন ব্যাটিংয়ে। শুরু থেকেই চড়াও হলেন ভারতীয় বোলারদের উপর। একাই ভেঙেচুড়ে দিচ্ছেন ভারতের বোলিং লাইনআপ। ক্রিকেট বিশ্ব অবাক হয়ে দেখলো দর্শনীয় সব স্ট্রোক, রেশমি কাভার ড্রাইভ, ডাউন দ্যা উইকেটে এসে বিধ্বংসী এক ব্যাটসম্যানকে। কখনো ঝড়ের মতো বিধ্বংসী, কখনো স্রোতের মতো নির্মল।

লিটন দাস

এতদিন ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করতে না পারা ছেলেটি নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিকে ১২১ রানের অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে রূপ দিলো। ক্রিকেট বিশ্ব চিনলো লিটন দাস নামের এক বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানকে। কবজির এরকম সুন্দর মোচড়, স্ট্রোকের ফুলঝুরি খুব কমই দেখা যায় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের।

ভাগ্য খারাপই বলতে হবে। নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়ার দিনে সতীর্থরা জ্বলে ওঠতে পারলেন না। এশিয়াকাপ ফাইনালের ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েও বাংলাদেশকে এশিয়াকাপ জেতাতে পারলেন না। আফসোসটা নিশ্চিত অনেকদিন পুড়াবে লিটন দাসকে।

তবেই এটাই তো শেষ নয়। কেবল শুরু। সামনে অনেক লম্বা পথ পাড়ি দেবার বাকি। দীর্ঘদিন পর ওপেনিংয়ে তামিমের যোগ্য সঙ্গী পেলো বাংলাদেশ।

কে জানে ২০১৯ বিশ্বকাপে হয়তো আরও চমক নিয়ে আসবে লিটন দাস। আমরা না হয় সেই অপেক্ষায়ই থাকি। নিজের দিনে ব্রিটিশ মুলুকে বোলারদের চুরমার করা বাহারি সব শট দেখার অপেক্ষায় থাকি। অপেক্ষা পীড়াদায়ক হলেও কিছু কিছু অপেক্ষায় আনন্দ থাকে।

সেই আনন্দময় দিনের অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত