লক্ষ্মীকান্ত সিংহ

০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২৩:৫১

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা

ছবি: প্রতীকী

আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনেকেই এ নির্বাচনে নিজ নিজ ভোটাধিকার যথাযথভাবে প্রয়োগ করার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আর এই সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডে সারাদেশব্যপী একটা উষ্ণ রাজনৈতিক আমেজ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় তারা তাদের প্রার্থিতা মনোনয়ন চূড়ান্ত করে তাদের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতেও শুরু করেছেন। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলো এখন তারা তাদের নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের জয় সুনিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন কর্মকৌশল নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সকল রাজনৈতিক দলই এখন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের মতামতকে কিভাবে নিজের দলের পক্ষে নিয়ে আসা যায় তা নিশ্চিত করার জন্য নিজ নিজ নির্বাচনী মেনিফেস্টো তৈরি করছেন। তবে আমরা সেই অতীতকাল থেকেই দেখে আসছি প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই তাদের মেনিফেস্টোতে তারা সরকার গঠন করলে এদেশে বসবাসরত বিভিন্ন আদিবাসী জাতিসত্তার বিষয়ে কি ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করবেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্টভাবে তেমন কিছু উল্লেখ থাকেনা। তাই এবারের নির্বাচনে দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ চায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল যেনো তাদের মেনিফেস্টোতে আগামী সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হলে তারা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কী উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করবেন তার সুনির্দিষ্ট বিবরণ।

ইতোমধ্যে সিলেট অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে; অধিকাংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠীই চায়, সরকার তার স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে তাদের জন্য উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করুক। সিলেট অঞ্চলের খাসিয়া জনগোষ্ঠী চায়, সুদূর অতীতকাল থেকে তারা যেসব পুঞ্জিতে বসবাস করে আসছে সরকারের যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বা অন্যকোন কারণ দেখিয়ে তাদের যেনো সেসব পুঞ্জি থেকে উচ্ছেদ করা না হয়। কেননা, বিগত দিনগুলোতে এবং নিকট অতীতে খাসিয়া জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল খুবই তৎপর হয়ে উঠে।

এসবের কারণে তাদেরকে অনেক আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠী চাই, সরকার যেনো তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ন্যূনতম পরিবেশে তাদের সবার জন্য একটি বাসস্থান নিশ্চিত করা হয়। এসব কারণে তারা তাদের বর্তমান দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা (কিছুদিন পূর্বেও যা ৮৫ টাকা ছিল) থেকে পাঁচশত টাকায় উন্নীত করার জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

তাছাড়া প্রতিটি চা-বাগান এলাকায় একটি করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবিও তাদের দীর্ঘদিনের। আর সিলেট অঞ্চলের মনিপুরী জনগোষ্ঠী দাবি, সরকার যেনো শিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত মনিুপরী বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সরকারি প্রকল্প গ্রহণ করার পাশাপাশি দরিদ্র মেধাবী মনিপুরী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যাতে উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি চালু করে। তাছাড়া সিলেট শহরে সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য একটি ‘আদিবাসী বিষয়ক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স’ স্থাপন।

স্বাধীনতা পরবর্তী প্রায় প্রতিটি নির্বাচনকালীন দেশের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এদেশের ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো, প্রায় ক্ষেত্রেই এসব হামলা এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিগণ পরবর্তীতে রাষ্ট্র থেকে কোনরূপ বিচারও পাননা। আর এসব হামলাকারীদের বিচার হয়না বলেই দেশের প্রতিটি নির্বাচন আসলেই এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। একারণেই আজ দেশে ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইতোমধ্যে দেশের সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে এবারের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এদেশের ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর এধরনের হামলা বা নির্যাতন হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে। এ দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, বর্তমান নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবারের নির্বাচনকালীন অতীতের ন্যায় ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর এসব হামলা ও নির্যাতনের শিকার না হয় এ ব্যাপারে আরও কঠোর থাকবেন এবং কোন কারণে কোথাও এধরনের কোন অঘটন ঘটে থাকলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের পক্ষ থেকে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সর্বোপরী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা উপরে সংক্ষেপে বর্ণিত তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়াগুলো রাজনৈতিকদলসমূহ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে ভবিষ্যতে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

  • লক্ষ্মীকান্ত সিংহ: উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী

আপনার মন্তব্য

আলোচিত