নাজমুল হোসেন

১১ জানুয়ারি, ২০১৯ ১৭:৪০

চাকরিতে বয়সসীমা: প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার তরুণদের জন্য রাখা চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দ্রুতই বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি।

হে ন্যায়ের প্রতীক ও সুবিচারকারী,
আপনি সবসময় ন্যায়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। পাশাপাশি সুবিচার করা আপনার আরও একটি বড় গুণ। ছিটমহল সমস্যার সমাধান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, নারী পুরুষ বৈষম্য সমাধানসহ হাজারো নজির রয়েছে যা জনগণের অংশ হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করেছি। আজ আমরা একটি বড় অংশ ন্যায্য একটি দাবি নিয়ে আপনার কাছে সুবিচার প্রার্থনা করছি। আমাদের দাবি হচ্ছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে দেয়া। দীর্ঘ ৬-৭ বছর আন্দোলন করে আমরা সবাই আজ ৩৫ এর দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। সবাই যেন চাকরিতে প্রবেশের পর্যাপ্ত সুযোগ পায় এবং এর পাশাপাশি বেসরকারি ক্ষেত্রগুলোতেও প্রবেশের সুযোগ উন্মুক্ত করে দিয়ে সুবিচার পূর্বক তেমনি একটি বয়সের গণ্ডি নির্ধারণ করে অতি দ্রুতই বাস্তবায়ন করে দিবেন আপনার নতুন সরকারের প্রথম পদক্ষেপটি তাই হোক।

হে উন্নয়নের প্রতীক,
আওয়ামী লীগ মানেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, উন্নয়নের প্রতীক, শান্তির প্রতীক। আর স্বয়ং আপনি তো তারই প্রতিচ্ছবি। আপনার মেধা, যোগ্যতা ও যুগোপযোগী চিন্তা শক্তির বলে মুখ থুবরে পড়া দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল করে দিয়েছেন খুব দ্রুতই। ফলস্বরূপ সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করেছে। যেসব অভূতপূর্ব পরিবর্তন ও উন্নয়ন হয়েছে আর হচ্ছে এত কম সময়ে তা আমরা কল্পনাও করিনি। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, মহাসড়কগুলো বহু লেনে রূপান্তর, সারাদেশে বিদ্যুতায়ন সহ বহু মেগা প্রকল্প, শিক্ষাক্ষেত্রে বহু কারিগরি ও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি প্রকল্প ইত্যাদি তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাই দয়া করে কাল বিলম্ব না করে আরও একটি উন্নয়ন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে শিক্ষিত বেকারদের কল্যাণকরণ স্বরূপ আপনার উন্নয়নের তালিকাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলুন।

হে মানবতার মাতা,
মা সবসময় সন্তানদের দুঃখ কষ্ট বুঝতে পারে। আর আপনি তো বহু মানুষের কাছেই মমতাময়ী মায়ের পরিচয় দিয়ে আসছেন আপনার বেশকিছু মমতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। একজন মমতাময়ী মা আর উপযুক্ত মেধা, বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সফল রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ একটি ছোট রাষ্ট্রে কয়েক লক্ষের বৃহৎ অংশের রোহিঙ্গাদের ঠাই দেয়ার মত ঝুঁকিপূর্ণ চিন্তা করার ক্ষমতা রাখে না। আর আপনার উপরোক্ত সব গুণাবলীর বলে এই ক্ষেত্রেও মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। এই ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর কাছে আজ আপনি রয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। আর আমরা তো আপনার নিজের সন্তানের মতই। আমাদের ঠাই কোথায় হবে? আমরা জানি আমরা সমাজ, পরিবার, নানা রোগে আক্রান্ত দরিদ্র পিতা-মাতাদের কাছে কেমন হতাশায় রয়েছি একজন শেখ হাসিনা, মমতাময়ী ও মানবতার মাতা হিসেবে খুব ভাল করেই উপলব্ধি করতে পারেন। তাই এই পরিস্থিতির অবসান ও নিরসনকল্পে অতি দ্রুতই সবার সুযোগ নিশ্চিত করে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়াবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।

হে প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী,
আমরা দেখেছি আপনি সবসময় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে থাকেন। এটা আপনার কোন গুণ নয় বরং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুরই গুণ ও নীতি। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে আপনি তরুণদের কল্যাণের জন্য প্যাকেজ আকারে একটি বড় প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। বারবার আপনার সরকারের মন্ত্রীসভার মাননীয় মন্ত্রীরা এবার আমাদের আশ্বস্ত করছেন সব প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। তাই দয়া করে প্যাকেজেরই একটা অংশ চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিটা দ্রুতই বাস্তবায়ন করে দিন। তবে বয়সসীমা যেন হয় সার্বজনীন অর্থাৎ শিক্ষিত সব নবীন ও প্রবীণরা (৬/৭ বছর ধরে আন্দোলনকারী) যেন যথেষ্ট সুযোগ পায়। আপনার সরকারের মাননীয় সড়ক ও সেতুমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের বলেছেন আপনি যা বলেন, যে প্রতিশ্রুতি দেন তাই রক্ষা করেন। তিনি আরও বলেছেন আপনি যৌক্তিক, বাস্তবতার নিরিখে ও অন্যান্য এডভান্সড ডেমোক্রেটিক রাষ্ট্রের বয়সসীমার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়াবেন। আশা করি সব দিক ভেবে, সবার কথা চিন্তা করেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেন।

হে যুগোপযোগী চিন্তাবিদ,
আপনার জ্ঞান-গরিমা ও চিন্তা শক্তির তুলনা স্বাধীন বাংলাদেশের অতীতের কোন সরকারের সাথে চলে না। আপনার মন্ত্রীসভায় এবার একেবারে প্রায় নতুন সিংহভাগ তরুণ মন্ত্রীদেরই স্থান দিয়েছেন। উনারা সবাই তারুণ্য দীপ্ত। এখানে আবারও প্রমাণ করলেন আমি সত্যিকারের একজন তরুণ বান্ধব প্রধানমন্ত্রী। এবার আপনাকে একটু অতীতে নিয়ে যেতে চাই। বিগত প্রায় দেড় দশক সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক লাখ তরুণ-তরুণী সেশন জট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ সমস্যাসহ নানা কারণে তাদের পড়ালেখা শেষ করেছে নির্ধারিত সময় থেকে ৫/৬ বছর বেশী সময় লাগিয়ে। একজন সুচিন্তাবিদ সরকার হিসেবে বিষয়টা নিয়ে আপনাকেই ভাবতে হবে। তাই অতি শীঘ্রই এই আক্রান্তদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ নিশ্চিত করে এমন একটি বয়সসীমা বাড়াবেন বলে জোর দাবি জানাচ্ছি। অথবা একজন যুগোপযোগী সুচিন্তাবিদ ও তরুণ বান্ধব সরকার হিসেবে বিশেষ কোন ক্ষণস্থায়ী বা অস্থায়ী আইনের মাধ্যমে তাদেরকে আবেদনের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩ বছরের সুবিধা দিতে পারেন। আরও একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় আপনার ভাবা উচিৎ, এই সব তরুণদের কাছে একেকটা দিন মানেই চরম হতাশা ও অশান্তির সমান।
পরিশেষে আপনার সার্বিক কল্যাণ ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের পক্ষে
নাজমুল হোসেন
প্রকৌশলী, লেখক।
ই-মেইল: [email protected]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত