সঞ্জয় দেবনাথ

০৭ জানুয়ারি, ২০২০ ১০:৪৪

হয়নি বিচার, হয়নি কোনো আশ্বাস পূরণ

আজ ৭ জানুয়ারি ‘ফেলানী হত্যা দিবস’। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশ সীমান্তে গুলি করে কিশোরী ফেলানীকে হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হলো। বিস্মৃত হবার তো কথা নয় সেই দিনটি! যে কিশোরীর গুলিবিদ্ধ লাশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায় প্রায় ৬ ঘণ্টা ঝুলেছিলো। মর্মান্তিক যে ছবিকে বলা হয়েছিলো 'কাঁটাতারে ঝুলছে বাংলাদেশ’। কিন্তু সেই হত্যার প্রকৃত বিচার আজও হয়নি। অসহায় বাবা-মা মেয়ে হারানোর শোকে জগদ্দল পাথর বুকে নিয়ে আজও বিচার চেয়ে বেড়াচ্ছেন।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামে ফেলানীদের জীর্ণশীর্ণ ঘর। তিন ভাই আর দুই বোনের মধ্যে ফেলানী ছিলো সবার বড়। পরিবারের বড় বোনকে হারিয়ে ছোট ভাই-বোনদের যেমন কষ্টের শেষ নেই তেমনি বাবা নুরুল ইসলাম নুরু ও মা জাহানারা বেগমও মর্মান্তিক সেই স্মৃতি হাতড়ে ঢুকরে কেঁদে ওঠেন।

ফেলানীর ভাইয়েরা (জাহান, আরফান, আক্কাস) পড়ালেখা করছে। একমাত্র বোন মালেকা খাতুন সেও ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছে একবছর হয়। টাকার জন্য ভর্তি হতে পারছেনা কোন কলেজে। একদিকে আদরের মেয়ের মর্মান্তিক হত্যার বিচার না পাওয়ার তীব্র আকুতি, অন্যদিকে সন্তানদের পড়ালেখা ও ভরণপোষণের ব্যয়ভার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নুরুল ইসলাম। ফেলানী হত্যার পর দুনিয়াজুড়ে গণমাধ্যমের কতশত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। আশা জেগেছিলো মনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে তাঁর মেয়ের হত্যাকারীরা। হত্যার দিনটি ‘ফেলানী দিবস’ হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাবে। শহরে ‘ফেলানী রোড’ হবে। কিন্তু কিছুই হলো না। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আর ন্যায়বিচার না পাওয়ার ক্ষোভ ফেটে পড়ে ফেলানীর বাবা-মায়ের চোখেমুখে। তাঁরা দুই দেশের রাষ্ট্রনায়কের কাছে বিচার চাচ্ছেন অবিরত।

কিশোরী ফেলানী খাতুনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ঝুলে থাকা লাশের ছবি ও খবর প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসা ভারতীয় প্রশাসন গুলি করা বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে দোষী সাব্যস্ত করে। পরে সে আবার খালাস পেয়ে যায় ভারতীয় আদালতে। পুনর্বিচারে রায় বহাল থাকে। মামলায় কোচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু। ন্যায় বিচারের জন্য ভারত সরকারের কাছে বার বার আবেদন করেন তিনি। কিন্তু আজ পর্যন্ত নির্মমতার শিকার তাঁর আদরের প্রথম সন্তান ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার পাননি।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে সীমান্তের অন্যতম এই নির্মম ঘটনার ৯ বছর পূর্তি হলো কিন্তু আজও ফেলানী হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হয়নি। উপরন্তু গুলিবর্ষণকারী অমিয় ঘোষরা ছাড়া পেয়ে যায় ভারতীয় আদালতে একতরফা বিচারে। এইরকম একতরফা রায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্নও তুলেছিলেন ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, কুড়িগ্রাম জেলা জর্জ কোর্ট পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ফুলবাড়ি উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭নং আন্তর্জাতিক পিলার ৩নং সাব-পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাঁটাতার ডিঙিয়ে বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে।কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত