মাহমুদ হোসেন খান

২৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০১:১০

সিলেটে সড়কে মৃত্যু কেন থামছে না?

সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত কেউ রেহাই পাচ্ছেন না সড়ক দুর্ঘটনা থেকে। গত ৩-৪ মাসে সিলেট বিভাগের মধ্যে সড়কে ঝরে গেছে অনেক তাজা প্রাণ এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকেই।

সিলেট বিভাগের সড়ক দুর্ঘটনার সাম্প্রতিক কিছু তথ্য তুলে ধরতে চাই। জকিগঞ্জ উপজেলায় মাইক্রোবাস উল্টে নিহত হয়েছিলেন ৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৪০ জনের মতো; মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ১ জন; ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং মোটরসাইকেল এবং ট্রলির সাথে ধাক্কা লেগে নিহত হয়েছিলেন ২ জন; বিয়ানীবাজার উপজেলায় চারখাই বাজারে বাসের ধাক্কায় নিহত হয়েছিলেন ১ পথচারী; চারখাই বাজারের কাছাকাছি সিএনজি উল্টে শিশুসহ নিহত হন ২ জন; শেওলা পল্লিবিদ্যুৎ সামনে ট্রাকের ধাক্কায় ১ পথচারী নিহত; গোলাপগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছিলেন।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই নারী ও এক শিশু। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে মোটর সাইকেল ও পিক-আপের মুখোমুখি সংঘর্ষে অজ্ঞাত মহিলাসহ দু'জন নিহত হয়েছেন। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ আরোহী নিহত হয়েছিলেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে সিলেট বিভাগের সড়ক দুর্ঘটনার অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। সুবিদবাজারে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন ১জন পথচারী মহিলা।

সিলেট -হবিগঞ্জ -মাধবপুর এলাকায় দীর্ঘ ২৪ বছর পর দেশে ফিরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন এক আমেরিকা প্রবাসী। সিলেট নগরীর টিলাগড় পয়েন্ট কার উল্টে ২ জন ছাত্র নিহত হন দু' দিন আগে। আরও অনেকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সংবাদমাধ্যমে এসেছে, আবার অনেক দুর্ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে আসেনি। গত ৩ -৪ মাসের সিলেট বিভাগের উদাহরণস্বরূপ সড়ক দুর্ঘটনা পরিসংখ্যান তুলে ধরলাম। এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য কে বা কাকে দায়ী করবো?

অকাল মৃত্যু আমরা কেউ চাই না। তবে ইদানিং কালে লক্ষ্য করেই দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন গাড়ির ওভার স্পিড, ওভারলোড এবং ওভারটেকিং এর কারণে। জানিনা এই সড়ক দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যুর মিছিল কবে থামবে। বর্তমান সরকার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল থামাতে ২০১৮ ইং ট্রাফিক আইন সংসদে পাশ করেছেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পরিবহন চালকের মানসিকতার পরিবর্তন করা প্রয়োজন। অর্থাৎ উপযুক্ত মোটিভেশন এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের মানসিক উন্নতি ঘটানো না গেলে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব নয়।

মোটরসাইকেল আরোহীরা হেলমেট না ব্যবহারের কারণে সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন এবং এই হেলমেট ও প্রতিযোগিতামূলক চালনার জন্য অনেকেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যানবাহনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। আরও দেখা গেছে, কোন কোন মোটরসাইকেল আরোহী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছ বা বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ধাক্কার কারণে মাথায় আঘাতের কারণে মর্মান্তিক মৃত্যুর বরণ করেন। মোটরসাইকেল আরোহীগণ হেলমেট ব্যবহার না করার কারণে মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাতের কারণে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন।

মোটরসাইকেল আরোহীগণ হেলমেট ব্যবহার করে নিজেকে রক্ষা করুন এবং অন্যকেও সচেতন করুন। দুর্ঘটনার কবল থেকে আমার জীবন আমাকেই রক্ষা করতে হবে, সেজন্য নিজে সচেতন হই অন্যকেও সচেতন করি।

আমরা নিজ থেকে যদি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সচেতন না হতে পারি তাহলে কখনোই সড়ক দুর্ঘটনার মিছিল থামবে না।

  • মাহমুদ হোসেন খান: সাধারণ সম্পাদক, নিরাপদ সড়ক চাই, সিলেট জেলা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত