আজহার উদ্দিন শিমুল

১৭ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১৫:৪৪

ভাষাসৈনিক সম্মাননা: ব্যতিক্রমী আয়োজন

সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর যৌথ উদ্যোগে ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটে ৭ ভাষাসৈনিককে সম্মাননা দেওয়া হয়

অনলাইন গণমাধ্যম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক আব্দুল আলিম শাহ’র নিমন্ত্রণে এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিনিধিত্ব করতে। আমাদের সংগঠনের সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে সিসিক-সিলেটটুডের যৌথ আয়োজনে ৭ ভাষা সৈনিককে সম্মাননা অনুষ্ঠানে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম। বিকাল সাড়ে পাঁচটার আগেই পৌঁছে যাই। কারণ এরকম অনুষ্ঠানে আধা মিনিট দেরী করা মানে জীবন থেকে আধাঘন্টা চলে যাওয়ার সমানুপাতিক। নগরীর দরগা গেইট এলাকার একটি হোটেলের বলরুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সাত ভাষা সংগ্রামীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

হোটেলের নিচে পেয়ে যাই সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক কবির য়াহমদকে। কুশল বিনিময়ের পর আমরা অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে প্রবেশ করি। ঢুকতেই চমকে যাই মঞ্চ দেখে। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। এরকম শৈল্পিক ও সৃজনশীল মঞ্চ এর আগে আমি সিলেটের কোথাও দেখে নি। মঞ্চ দেখেই সহকর্মীদের বললাম এখানে নিশ্চিত সিলেটের গ্রাফিকস জাদুকর অরুপ বাউলের হাত রয়েছে!

পর্যায়ক্রমে দেবাশিষ দেবু , আব্দুল আলিম শাহ, শাকিলা ববি ও দেবব্রত চৌধুরী লিটনের সাথে কুশল বিনিময় করে আমরা মাঝখানের সারিতে বসে পড়লাম। সময় তখন সাড়ে পাঁচটার উপরে বাজে। অতিথিরা আসতে শুরু করলেন। কিছুটা বিলম্ব করে সাতটার দিকে অনুষ্ঠান আরম্ভ হলো। তখন পুরো বলরুম কানায় কানায় পূর্ণ প্রায়। রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী; কারা নেই অনুষ্ঠানে! ‘কথিত’ সামাজিক প্রথা ভেঙে সেতারের সুরে শুরু হল সম্মাননা অনুষ্ঠান, যা আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধতা দিলো।

বিশিষ্ট সেতার বাদক ওস্তাদ মধু খানের তত্ত্বাবধানে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সেতারে সুর তুলেন সেতার বাদক মনোয়ার হোসেন খান। তবলায় ছিলেন বাপ্পী ও গৌতম গোস্বামী।

প্রথমেই অনুষ্ঠানের শুরুতেই আয়োজকদের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সিলেটটুডের প্রধান সম্পাদক কবির য়াহমদ ও সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী। তাদের দুজনের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ ‘শব্দগান রক্তমিতা’র মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।

মোড়ক উন্মোচনের সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত, কবি মোফাজ্জল করিম, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক কবির য়াহমদ, সম্পাদক আব্দুল আলিম শাহ।

প্রথমেই ভাষা আন্দোলরনের প্রেক্ষাপট ও নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত, কবি মোফাজ্জল করিম। তার কথায় দেশের মানুষের মধ্যে যে টুকটাক বিভাজন আছে তা নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ ছিলো! মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কথাগুলো শুনছিলাম। বইয়ের পাতায় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পড়তে পড়তে মনো হলো জীবন্ত কিংবদন্তীদের সামনে বসে কথা শোনার চেয়ে আর কোনো ভালো কাজ হতে পারে না।

কবি মোফাজ্জল করিমের পরে মঞ্চে আসেন জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি দারুণ কিছু তথ্য তুলে ধরলেন। তার অবদানের কথাও জানালেন। কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে সেই সময়ে তার ভূমিকার কথাও উপস্থিত দর্শক শ্রোতা জানতে পারেন।

সাত ভাষাসংগ্রামীদের মধ্যে একমাত্র জীবিত ব্যক্তি আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চমৎকারভাবে কিছু স্মৃতি তুলে ধরলেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ সাহেবের কথাও বললেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সাথে তার ঘনিষ্ঠতার সম্পর্কও বললেন। দলমত নির্বিশেষে সিলেটের মানুষ যে সম্প্রীতি বজায় রেখে চলছে সে কথা বলতেও ভুলেননি। তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের (মরণোত্তর) সাথে এই সম্মাননা পেয়ে খুবই সম্মানিতবোধ করেন ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ (মরণোত্তর), সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মরণোত্তর), শিক্ষাবিদ ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী (মরণোত্তর), অ্যাডভোকেট মনির উদ্দিন আহমদ (মরণোত্তর), কমরেড আসাদ্দর আলী (মরণোত্তর) ও ডা. মো. হারিছ উদ্দিন (মরণোত্তর)-কে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাদের পক্ষে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের পক্ষে তার ছেলে আজিজুস সামাদ ডন, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পরিবারের পক্ষে অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, শিক্ষাবিদ ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর পক্ষে তার মেয়ে অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মনির উদ্দিন আহমদের পক্ষে আবু সালেহ মো. নাইম, কমরেড আসাদ্দর আলীর পক্ষে পরিবারের সদস্য নাফিজা খানম আশা এবং ডা. মো. হারিছ উদ্দিনের পক্ষে তার ছেলে ডা. সালেহ আহমদ আলমগীর সম্মাননা গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, সিলেটে যার যার রাজনীতিক আদর্শ ভিন্ন হলেও সিলেটের প্রশ্নে আমরা সবাই এক এবং অভিন্ন। সত্যিই মেয়র মহোদয়ের কথামতো আমরা সিলেটের প্রশ্নে এক থাকতে চাই।

সিলেটটুডে এর আগেও এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করে সম্প্রতি বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদকে। সিলেটটুডের এবারের আয়োজন সত্যিই ব্যতিক্রম ছিলো। প্রচলিত ‘অনেক’ মূলধারার গণমাধ্যম যেখানে নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খায় সেখানে সিলেট থেকে গড়ে ওঠা অনলাইন গণমাধ্যম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম বছরের পর বছর সৃজনশীল কাজ করে নিজেদেরেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।

আমরা পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী হিসেবে সিলেটটুডের এই যাত্রা যাতে আরও বেশি করে অব্যাহত থাকে সেই কামনা করি। সিলেটটুডে হয়ে উঠুক গণমানুষের মুক্তির হাতিয়ার, সৃজনশীল কাজের প্রথম অংশীদার।

মুজিববর্ষের শুরুতেই সিলেটবাসীকে এরকম একটা অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ায় সিসিক ও সিলেটটুডেকে কৃতজ্ঞতা। জয়তু সিলেটটুডে!

  • আজহার উদ্দিন শিমুল, সাধারণ সম্পাদক, এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত