অপূর্ব শর্মা

২৮ মার্চ, ২০২০ ০১:৫২

মন্ত্রী-এমপিরা কেন পাশে নেই জনতার?

সিলেটের মন্ত্রী এমপিরা কেন পাশে নেই জনতার? অনেকের মতো এই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মনে? কয়দিন আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম, তাতে লিখেছিলাম- হ্যালো মন্ত্রী, হ্যালো এমপি, হ্যালো মেয়র, হ্যালো চেয়ারম্যান, হ্যালো জনপ্রতিনিধি, আপনাদেরকে বলছি- যারা দিন আনে দিন খায়, যারা গরীব, অসহায়, যাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, এই সংকটে তাদের জন্য কি করেছেন আপনি, আপনারা, জানতে ইচ্ছে করছে খুব!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পোস্টটি দেওয়ার পর, বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী প্রায় অভিন্ন পোস্ট দিয়ে আমার এই জানতে চাওয়াকে সমর্থন করেছেন। জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই মূলত আমি এই পোস্টটি দিয়েছিলাম। আমি অনেকটা নিশ্চিত ছিলাম, জনপ্রতিনিধিরা অবশ্যই এই সংকটে পাশে দাঁড়াবেন জনতার। কিন্তু ঠিক সেভাবে কাউকে পাশে দাঁড়াতে দেখলাম না। ভুল হলো আমার ধারণা! মহাসংকটের কালে সিলেটের মন্ত্রী-এমপিদের নীরবতা অনেকের মতো তাই আমাকেও বিস্মিত করেছে। তারা কেন নীরব থাকবেন? তারা কেন পাশে দাঁড়াবেন না জনতার? জনতার পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েইতো তারা রাজনীতিতে এসেছেন। অথচ আজ তারা ধারে কাছেও নেই জনতার? কেন? কেন?

বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিক দ্বোহা চৌধুরীকে বলেছিলাম, সিলেটের ছয়টি আসনের এমপিদের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে। তারা এখন কোথায়? এলাকায় নাকি ঢাকায়। সন্ধ্যায় যখন ফোনে কথা হলো দ্বোহার সাথে তিনি হতাশ কণ্ঠে জানালেন, মন্ত্রী-এমপিদের কেউ-ই এলাকায় নেই। আরেকবার হতাশ হতে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেউ কি জনগণের জন্য কিছু করেছেন? তার সূত্রেই জানতে পারলাম, শুধুমাত্র সিলেট সদর আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপির উদ্যোগে সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে ৩শত অসহায় পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, পেয়াজ, তেল, সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত নিউজে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সকলের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে কঠিন সময় যাচ্ছে সর্ব শ্রেণির মানুষের। বিশেষ করে দেশের দিনমজুর ও খেটে খাওয়া পরিবার সমূহের। এমতাবস্থায়, তাদের যেন বাইরে বের হতে না হয় এবং খাদ্যাভাব দেখা না দেয় তাই আমার এই উদ্যোগ। আমরা যারা সচ্ছল রয়েছি, সবাই পাশে দাঁড়াই এই অসহায় মানুষের। দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে কষ্ট ভাগাভাগি করে নেই। সবাই সচেতন ও সতর্কতা অবলম্বন করি এই মহামারিতে। আমাদের সচেতনতা, ইনশাআল্লাহ রুখে দিবে এই দুর্যোগ।’

তাঁর এই বক্তব্য এবং উদ্যোগ অবশ্যই আশাব্যঞ্জক এবং সময়োপযোগী। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল, নগণ্যও বটে। সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে এই আসনের গরীব, দরিদ্র এবং দিনমজুর যারা দিন আনে দিন খায় তাদের প্রত্যেকের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব অনেকাংশেই তাঁর উপর বর্তায়। তিনি যেমন একজন জনপ্রতিনিধি তেমনই এই আসনের অভিভাবক। তাই তাঁর কাছে প্রত্যাশা অন্যদের চাইতে একটু বেশি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন উদ্যোগ নিলেও অন্যরা কিন্তু জনগণের ধারেকাছেও নেই। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ শুধুমাত্র সচেতনতামূলক একটি ভিডিও বার্তা দিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনতা তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অন্য চার সংসদের কারোরই কার্যত কোনও উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়েনি। করোনা নিয়ে মহাদুশ্চিন্তার এই সময়ে তাদেরকে পাশে পাওয়ার কথা থাকলেও তারা জনগণ থেকে অনেকটা দূরে রয়েছেন। ঘর থেকে বাইরে বের না হলে যাদের চুলো জ্বলবে না তাদের ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের এই উদাসিনতা স্বাভাবিকভাবেই আমাদেরকে ব্যথিত করেছে। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এমন ‘নীরবতা’ অসংখ্য প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে মনে। কিন্তু কেন তারা নীরব থাকবেন? পাশে দাঁড়াবেন না জনতার?

রাজনীতিবিদদের বহুল ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে, জনসেবা। তারা প্রত্যেকেই দাবি করেন তারা জনসেবক। জনগণের জন্যই তারা রাজনীতি করেন। জনসেবাকে তারা মনে করেন ইবাদত। প্রতিটি ভোটের পূর্বে এখতিয়ারের বাইরে গিয়েও তারা প্রতিশ্রুতি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। মানুষের উন্নয়ন-ই তাদের রাজনীতির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য, বলে থাকেন তারা। কিন্তু সেই জনতাই যদি বেঁচে না থাকে তাহলে কারা ভোগ করবে উন্নয়নের সুফল, আর কাদের নিয়ে রাজনীতি করবেন তারা, এই প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়? তাই জাতির এই মহাসংকটে মন্ত্রী-এমপিদেরকেই দেখাতে হবে সঠিক পথের দিশা। দাঁড়াতে হবে জনতার পাশে। একজন মানুষও যেন অনাহারে মৃত্যুকুলে ঢলে না পড়েন সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে জনপ্রতিনিধিদেরকেই।

সিলেট বরাবরই অগ্রগামী। প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে সিলেটবাসী দেশবাসীর কাছে পৃথকভাবে মর্যাদার আসনে আসীন। প্রতিটি দুর্যোগ, দুর্বিপাকে প্রবাসী এবং সিলেটবাসীর ভূমিকা বরাবরই অনন্য। কিন্তু করোনার এই দুর্যোগে এই প্রবাসীরাই পড়েছেন সংকটে। প্রবাসীদেরকে দেখা হচ্ছে, সন্দেহের চোখে। তাই প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের মন্ত্রী-এমপি হিসেবে আমাদের জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বও একটু বেশি। প্রথমত, বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের দ্বারা যেনও কেউ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত না হন সেটি দেখতে হবে। দ্বিতীয়ত, যারা আক্রান্ত হয়েছেন বা হবেন, তারা যেনও যথাযথ সুচিকিৎসা পান এবং একজন সাধারণ মানুষও অনাহারী না থাকেন, এব্যাপারেও নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। কারণ আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে সাধারণ মানুষ। এই মুহূর্ত থেকেই নিতে হবে উদ্যোগ। দেরি করলে চলবে না। করোনা মোকাবেলায় এ ছাড়া অন্যকোনও পন্থা খোলা নেই আমাদের সামনে। প্লিজ, জনগণের পাশে দাঁড়ান। সংকট মোকাবেলায় হোন জনতার সহযাত্রী।

  • অপূর্ব শর্মা: লেখক, সাংবাদিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত