২০ এপ্রিল, ২০২০ ১৭:৫৮
দেশের একটা এলাকাকে সমালোচনা করে পার পাওয়া যাবে কি, যেখানে সমগ্র দেশের বৃহৎ সমাজ মননে পশ্চাৎপদ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অজ্ঞতা গেড়ে বসেছে। বর্তমান সংকটকালীন সময়ে বহু শিক্ষিত লোকজনের আচরণ ও কথাবার্তায় দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, অবৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা, কুসংস্কার ও কূপমণ্ডূকতা প্রকাশ হতে আমরা দেখি। চিকিৎসা সংক্রান্ত দুর্যোগে বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তার বদলে তাদের মধ্যে অবিদ্যার ভাবনারাজি বিরাজমান পরিলক্ষিত হচ্ছে। মৃত্যুমুখী আতংকজাত স্নায়ুবৈকল্যে তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন আবুল-তাবুল বকবকানি শোনা যায়। শহুরে সভ্যতার মুখোশের আড়ালে থাকা তাদের ভীতসন্ত্রস্ত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন স্বার্থপর এবং অমানবিক পরিচয় বেরিয়ে পড়ছে। মানুষ তা দেখছেও। তারা গিয়েছে প্রকাশ্যে এবং কেউ কেউ মনে মনে 'ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়' ছিলেন শরিক-সহযাত্রী। সাংস্কৃতিক মানের তফাত কোথায়।
আতংক ও বিকারগ্রস্ত সেইসব মানুষ যেন চলমান পরিস্থিতি নিয়ে স্বাভাবিক চিন্তার সামর্থ্যটুকু হারিয়ে বসেছেন। অশিক্ষা-কুশিক্ষায় জর্জরিত গ্রামীণ মানুষের প্রতি সেইসব মানুষের পক্ষপাত দুষ্ট শহুরে অবজ্ঞা মানুষ দেখছে। একবারও ভেবে দেখেছেন কি, দেশের সাধারণ মানুষকে কুসংস্কার, পশ্চাৎপদতা ও অজ্ঞতার হাত থেকে উদ্ধার করার জন্যে আমরা কি করতে পেরেছি। কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে তারা বর্তমান অবস্থার মধ্যে পতিত হয়েছে এবং কেন এবং কোন অবস্থায় মানুষ অন্ধ-আধ্যাত্মবাদ ও অজ্ঞতার বেড়াজালে আটকে আছে সেটা কি বুঝতে চেয়েছি। আলোকিত জীবনের মানে ও জীবনের প্রতি দায়িত্ববান-যত্নবান থাকার অর্থ কি তারা জানতে শিখেছে এবং যাপিত জগতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার আধুনিক শিক্ষা-জ্ঞান ও সুযোগ কি তারা পেয়েছিল? মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ যাত্রায় কিছু একটা আকরে ধরে সাহস-শক্তি সঞ্চয় করে বাঁচতে চাইবে। এটাই স্বাভাবিক।
বিজ্ঞাপন
গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতি আমাদের আচরণ, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, গ্রামের সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের অবজ্ঞা থেকে আমাদের মনোভাব কি বেরিয়ে পরে না? সেটা কেবল সমাজের একার দুর্বলতা নয়, মানুষ হিসেবে আমাদের দীনতা দৈন্যদশাও বটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের যে হৈচৈ সেটা একইরকম 'অবজ্ঞা' প্রদর্শন এবং আমাদের প্রকৃত অবস্থা না বুঝতে চাওয়ারই ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। অন্য অর্থে নিরাপত্তার চিন্তা থেকে স্বার্থপর মধ্যবিত্তের স্নায়ু বৈকল্যজাত প্রতিক্রিয়া।
যদি সিলেট অথবা চট্টগ্রামের কোন এলাকার কোন 'বড়' হুজুর ইহধাম ত্যাগ করেন তবে কি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দশা হবে না? তো কি করবেন!
বুদ্ধিজীবীর দায় অনেক। তাকে মুখোশের আড়ালে থাকতে হয়, ব্রাহ্মণ্যভোজে আধিকারিক হতে হয়, বিনাযুদ্ধে যুদ্ধজয়ী বীর হতে হয়! বর্তমানকালে ধর্ম-কূল-বর্ণ-গন্ধহীন 'বুদ্ধিজীবী'রা যে কতটা দৈন্যদশাগ্রস্ত ও প্রভাবহীন তা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়ে যায়।
গোলাম সোবহান চৌধুরী দীপন: আইনজীবী।
আপনার মন্তব্য