শাহআলম সজীব

১৬ মে, ২০২০ ২১:২৮

মানবিক উদ্যোগকে দয়া করে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না

করোনা আক্রান্ত দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে জনকল্যাণকামী অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকারি এইসব উদ্যোগে মানবিক সন্দেহ নেই। এই মানবিক উদ্যোগ সত্ত্বেও কিছু লোক তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছে ঠিক, কিন্তু প্রশাসনের নানামুখী ভূমিকার কারণে তারা বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, এবং হচ্ছেও। সাম্প্রতিক উদাহরণ করোনাকালীন সঙ্কটে তৃণমূলের কর্মহীন গরিব ৫০ লক্ষ পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ২৫০০ টাকা করে ঈদ উপহার। এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে কিছু জায়গার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা নিয়ে কিছু লোক অহেতুক সমালোচনা করছে। তাদের উদ্দেশ্য পরিস্কার- তারা এই মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে বলি রাখি- "শতাধিক নামের বিপরীতে একটা মোবাইল নাম্বার যতবারই দেয়া হোক টাকা কিন্তু একবারই ঢুকবে, বারবার নয়।"আমাদের সকলেই জানেন যে, এই তালিকা করা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও শিক্ষক সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে। তারপর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং অনেকের মোবাইলে ফোনকলের মাধ্যমে কর্মকর্তারা তালিকায় দেয়া মোবাইল নাম্বার এবং আইডি নাম্বার যাচাই বাছাই করেছেন। ওয়ার্ডভিত্তিক বৈঠকের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত লোকদের শারীরিক অস্তিত্ব যাচাইবাছাই করা হয়েছে।

প্রসঙ্গক্রমে একটা উদাহরণ দিই। আমাদের গ্রামের শারীরিকভাবে অসচ্ছল একজন মানুষ নাম চরিত্র বিশ্বাস। দীর্ঘদিন থেকে শয্যাশায়ী। উনার স্ত্রীর নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের আবার মোবাইল নাই। তাই কথা বলে উনার ভাতিজা সচি বিশ্বাসের মোবাইল নাম্বার দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে আমাদের গ্রামে মোট ৭০ জনের তালিকা করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৮/৯ জন মোবাইল ব্যবহার করেন না। যার ফলে তাদের ছেলে বা ভাইয়ের নাম্বার দিতে হয়েছে বাধ্যতামূলক। উপজেলা থেকে আমাদের ইউনিয়নে এসব যাচাইবাছাই করার দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা মৎস্য অফিসার। তিনিও বিষয়টার ব্যাপারে অবগত হয়েছেন।

পাশাপাশি আরেকটা বিষয় আমাদের সামনে এসেছে। হবিগঞ্জ, বাগেরহাটের দুইটি ইউনিয়নসহ কয়েকটি জায়গায় কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। শতাধিক নামের বিপরীতে ১/২টি ফোন নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা গেলে সবার টাকা ওই ১/২ টি নম্বরের ব্যক্তিরা পেয়ে যাবেন?

এখন বিষয়টা খোলসা করি। শতাধিক নামের বিপরীতে ১ টা ৩/৪টা মোবাইল নাম্বার যতই দেয়া হোক না কেন, সেইসব নাম্বারে মাত্র একবারই টাকা যাবে। বারবার যাবে না। কাজেই বিষয়টি নিয়ে এত উদ্বেগের কিছু দেখিনা।

হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক ইউনিয়নে ৪টি মোবাইল নাম্বার ব্যবহার হয়েছে ৩০৬ জনের নামের বিপরীতে। একটি নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে ২০০ জন আর আরেকটি নাম্বার ৬৭ জনের বিপরীতে। এই অনিয়মটি কিন্তু সরকারই প্রথম ধরেছে। সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি এই ২০০ জন অথবা ওই ৬৭ জনের টাকা কিন্তু ওই এক মোবাইল নাম্বারে যায়নি এবং যাবেওনা। কারণ নামের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার ও মোবাইল নাম্বার অটোমেটেড সিস্টেমে ভেরিফাই করার কারণেই এটা ধরা পড়েছে।

আবারও বলছি এক মোবাইল নাম্বার যতবারই দেয়া হোক না কেন টাকা কিন্তু একবারই ঢুকবে। একই নাম্বারে একাধিকবার ২৫০০ করে টাকা ঢুকেছে, বা কেউ পেয়েছেন তার কোন প্রমাণ কিন্তু নাই। এমনকি নিউজ হয়নি, বা কেউ পেয়েছেন এটাও বলেননি?

বিজ্ঞাপন

সবশেষে যেটা উপলব্ধি করি বা বুঝতে পারি তা হলো খুব কম সময় বা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কাজটা করতে হয়েছে। যার ফলে অনেক অসঙ্গতি রয়ে গেছে। কিন্তু সরকারের আন্তরিকতার কোনো ত্রুটি নেই, অভাব নাই।

তালিকা প্রণয়নের ত্রুটি নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। অনেক জায়গায় স্বজনপ্রীতি হয়েছে সত্য সেই আলোচনা হতে পারে। কিন্তু টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহৎ উদ্যোগকে যারা বিতর্কিত করতে চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু সৎ নয়। আপনারা অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে বলুন, আপত্তি নাই; কিন্তু এই অনিয়মের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে যেন মানবিক এই উদ্যোগকে যেন প্রশ্নবিদ্ধ না করেন।

করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের মত বাংলাদেশ সরকারও তাদের সীমিত সামর্থ্য সত্ত্বেও অনেক মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগে কিছু জনপ্রতিনিধির অসতর্কতা কিংবা অনিয়মের চেষ্টার কারণে কিছু ভুলভ্রান্তি রয়েছে ঠিক, কিন্তু এই ভ্রান্তি মানবিক উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মত যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে আমাদের সুনাগরিকের দায়িত্ব পালন করতে হবে বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই। সুনাগরিকের দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের যেকোনো উদ্যোগে সহায়তা করা। একে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে বাধা প্রদান নয়।

শাহআলম সজীব: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা; সদস্য, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত