শাহআলম সজীব

০৫ জানুয়ারি, ২০২১ ২২:৪৫

শেখ হাসিনা ও আমাদের প্রাপ্তি

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দুই বছর পূর্ণ হলো। ক্ষমতার এই ১২ বছরে দেশের প্রাপ্তি কী? আশাকরি সচেতন জনগণ তার হিসাব মেলাবেন। অন্যদিকে কিছু সংখ্যক লোকদের চিৎকার করতে দেখা যায় প্রতিনিয়ত দেশে গণতন্ত্র নাই, ভোটের অধিকার নাই এটা নাই, ওটা নাই ইত্যাদি! তাদের কাছে গণতন্ত্র মানে আরেকটা ১৫ আগস্ট, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আরেকটা ২১ আগস্ট, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ১০ ট্রাক অস্ত্র আমদানি। বরেণ্য কূটনীতিক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ কিবরিয়াকে হত্যা, শ্রমিক নেতা ও সাংসদ আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা, সাবেক সাংসদ মমতাজ উদ্দিনকে হত্যা। এরকম অজস্র খুনোখুনি মানেই তাদের কাছে ভোটের অধিকার!

বিএনপির শাসনামলে একযুগে একই সময়ে সারাদেশে বোমা হামলা, সরকারের মন্ত্রীদের মদত আর পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি বাংলা ভাইয়ের মানুষ হত্যা করাই যেন তাদের কাছে ভোটাধিকার আর তাদের গণতন্ত্র। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এরকম ঘটনা পৃথিবীর আর কোথাও নাই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ ছাড়া।

আমরা বর্তমান বাংলাদেশের দিকে তাকালে কী দেখি? উন্নয়নের বাংলাদেশ। সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হত্যা নেই। রাজনৈতিক খুনোখুনি নেই, জঙ্গিদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নেই, বিরোধীদলের সাংসদ খুন নেই, বিরোধী রাজনৈতিক সমাবেশে বোমা হামলা বা গ্রেনেড হামলা নেই।

আমাদের জিডিপি জোট সরকারের সময় ছিল মাত্র ৩.২ শতাংশ, যা এখন ৮.৩ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ২২শ মার্কিন ডলার, রিজার্ভও বেড়েছে। বিদ্যুৎ জোট সরকারের সময় ছিল মাত্র ৩২শ মেগাওয়াট, যা এখন ৩২ হাজার মেগাওয়াটের উপরে। লোডশেডিং নাই, পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়ছে। বিদ্যুৎ খাতের বিস্ময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ১ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, উৎপাদনে আসা দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট মিলে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ১০ম দেশ হিসেবে কয়লা ভিত্তিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বানিয়েছে। যা এশিয়াতে চীনের পর বাংলাদেশই দ্বিতীয় দেশ যেখানে ঢাকনাযুক্ত কোলডোম (কয়লা রাখার স্থান) ব্যবহার করছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতিমধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে ৪০টি জেলা ও ৪১০টি উপজেলা।

আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মত বিশাল অবকাঠামো উন্নয়নকাজ করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। এই বাংলাদেশ আমরা মাত্র ৯/১০ বছর আগেও কি কল্পনা করতে পেরেছিলাম? আপনি বা আমি কখনই কি এমনটা ভাবতে পারতাম বিদেশী সহায়তা ছাড়া উন্নয়ন? কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বিদেশী সহায়তা ছাড়াও পদ্মাসেতুর মতন বিশাল অবকাঠামো উন্নয়নকাজ করে দেখিয়েছেন এটাই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। আমরা পারি। চাইলে আর কেউই এই বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে চলার অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে পারেনা, পারবেও না।

উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলা এই বাংলাদেশই হোক গণতন্ত্রের রোল মডেল।

ক্ষমতার এই ১২ বছরে সব খাতেই আমাদের চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি হয়েছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি আমরা। আমাদের সাবমেরিন রয়েছে। বিমানবহরে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক সব বিমান। যোগাযোগ খাতে পদ্মাসেতুর পর মেট্রোরেল যা ২০২১ সালে চালু হবে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল, অসংখ্য ফ্লাইওভার এবং মহাসড়কগুলোকে চারলেন, ছয়লেন ও আটলেনে উন্নীতকরণ করা হচ্ছে। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের কাজ হয়েছে ২০ ভাগ। দৃশ্যমান হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং চলমান রয়েছে ইসিবি কালশী রুটে উড়াল সড়কের কাজ।

পাশাপাশি যোগাযোগ খাতের আরেক মাধ্যম রেলেরও উন্নয়ন করা হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলায় রেল সংযোগের পরিকল্পনা নিয়ে দূর্বার গতিতে কাজ শুরু হয়েছে। ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে "ঢাকা যশোর রেল প্রকল্প" হাতে নেয়া হয়েছে। পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে এই রেল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করছে ১৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা আর বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে চীন সরকার। এইরকম মেগা প্রকল্প রয়েছে আরও অনেক।

ঢাকা - সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ করা হচ্ছে। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে আরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে, নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন টার্মিনাল। মাতারবাড়ি প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন। এরকম কমপক্ষে ১৫/২০টি প্রকল্প নিয়ে কাজ করে চলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভের মালিক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত সমুদ্রের কোল ঘেঁষে কমবেশি ১৭০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যা যুক্ত হবে কক্সবাজার বর্তমানে বিদ্যমান ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভের সঙ্গে। এই সড়ক নির্মাণ হলে এটি হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ, যার দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার।

একদা এই বাংলাদেশকে যারা তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল, এখন তারা নিজেরাই বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানাজনের নানা মতের বিপরীতে বলতে চাই, "রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষক, ১৫ আগস্টের খুনিচক্রদের পৃষ্ঠপোষক ও ২১ আগস্টের ঘাতকসহ প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক দানবদের রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে যা কিছু হয়েছে তার সবই শুদ্ধ।"

উন্নয়নের গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত থাকুক। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

শাহআলম সজীব: সদস্য, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত